‘ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের একদিনে কর্মস্থলে ফেরানোর সামর্থ্য পরিবহন সেক্টরের নেই’

২১ জুলাই ঈদুল আজহা উদযাপনের পর লকডাউন শুরু হওয়ার আগেই ২৩ জুলাই সকাল ছয়টার মধ্যে মানুষকে নিজেদের কর্মস্থলে ফিরতে হবে।
শিমুলিয়াঘাটে ঘরমুখো মানুষের উপচে পড়া ভিড়। ৮ মে ২০২১। ছবি: স্টার

পবিত্র ঈদুল আজহা ২১ জুলাই উদযাপনের পর লকডাউন শুরু হওয়ার আগেই ২৩ জুলাই সকাল ছয়টার মধ্যে মানুষকে নিজেদের কর্মস্থলে ফিরতে হবে। 

গত মে মাসে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার জানিয়েছিলেন, গত ঈদুল ফিতরের সময় যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধের মধ্যেও ৪-১৫ মে পর্যন্ত বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরের এক কোটির বেশি ব্যবহারকারী ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্য গিয়েছিলেন।

ঈদুল আজহা উদযাপন, জনসাধারণের যাতায়াত, ঈদ-পূর্ববর্তী ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা, দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত লকডাউন শিথিল করেছে সরকার। এর পরই আবার ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত লকডাউনের ঘোষণা রয়েছে।

এবার ঈদে মানুষ বাড়ি যাওয়ার জন্য ছয় থেতে সাত দিন সময় পেলেও ঈদের পর মাত্র একদিনে সবাই কর্মস্থলে ফিরতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়বে। এটা হলে ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্যের পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনা ও করোনার সংক্রমণও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

(ঘড়ির কাঁটার দিক অনুযায়ী) অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম, খন্দকার এনায়েত উল্লাহ, মোজাম্মেল হক চৌধুরী ও খালিদ মাহ্‌মুদ চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের করোনা-বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির অন্যতম সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম টেলিফোনে ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘করোনা বিষয়ক কারিগরি কমিটি লকডাউন শিথিলের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। ঈদের পর ঢাকায় ফেরার জন্য মানুষ মাত্র একদিন সময় পাবে। এতে করে যে উদ্দেশ্যে লকডাউন শিথিল করা হয়েছে তা ব্যাহত হবে এবং করোনা সংক্রমণ ও ঝুঁকি বেড়ে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘শিথিল যেহেতু করা হয়েছে তাই মানুষ যাতে গাদাগাদি করে না ফিরে তার জন্য শিথিল অবস্থা আরও কয়েকদিন বাড়ালে ভালো হতো।’

বাংলাদেশে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ টেলিফোনে ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ঈদে সড়ক পথে ঢাকা থেকে কমপক্ষে ৪০ লাখ মানুষ বাড়ি যায়। ২১ জুলাই ঈদ হলে ২৩ জুলাই ভোর ছয়টার মধ্যে এত মানুষকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনার সক্ষমতা আমাদের পরিবহন সেক্টরের নেই। এতে করে মানুষের ভোগান্তি বাড়বে।’

এদিকে বিধি-নিষেধ শিথিলের সিদ্ধান্ত আরও চার দিন বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আজ এক বিবৃতিতে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেছে, ‘ঈদের পরের দিন ২২ জুলাই কর্মস্থলে ফেরার জন্য একদিনে সবাই রাস্তায় নামলে যানজট, জনজট, গণপরিবহন, ফেরিঘাট, টার্মিনালে মানুষের ভিড়ে ভয়াবহ ভোগান্তির পাশাপাশি করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাবে। এতে করে ১৪ দিনের কঠোর লকডাউনের অর্জন বিফল হয়ে যাবে।’

এর আগে তিনি টেলিফোনে ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার মধ্যে মাঠের বাস্তবতার কোনো মিল নেই। ছয় থেকে সাত দিনে যারা বাড়ি ফিরবে একদিনে তাদেরকে কর্মস্থলে ফিরিয়ে আনার মতো সামর্থ্য আমাদের সড়ক, রেল ও নৌপথের পরিবহনের নেই।’

তিনি বলেন, ‘এতে যাতায়াতের ঝুঁকি বেড়ে যাবে। মানুষের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। দুর্ঘটনা বেড়ে যেতে পারে। যাত্রীরা অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্যের শিকার হবে। যাত্রী হয়রানি বাড়বে। সর্বোপরি, একটি নারকীয় পরিবেশের সৃষ্টি হবে।’

নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহ্‌মুদ চৌধুরী টেলিফোনে ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘লকডাউন ২২ জুলাই পর্যন্ত শিথিল করার অর্থ হলো লোকজন যাতে বাড়ি যেতে উৎসাহ না পায়। এটি যদি বাড়িয়ে আরও কয়েকদিন করা হতো তাহলে আরও বেশি সংখ্যক মানুষ বাড়ি যেত। মানুষের ঢল নেমে যেত। আমরা চাই কেউ স্থানান্তরিত না হোক। কারণ স্থানান্তরিত হলেই করোনার প্রাদুর্ভাব বাড়বে।’

স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে নৌপথে ছয় থেকে সাত দিনে যারা বাড়ি ফিরবে তাদের ২২ জুলাই একদিনে ফিরিয়ে আনার সামর্থ্য আমাদের নৌযানগুলোর আছে কি না এবং এতে যাত্রীদের দুর্ভোগ বাড়বে কি না জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ঈদের পর যাতে মানুষকে তাড়াহুড়া করে না আসতে হয় সেজন্য ২৩ তারিখ থেকে কলকারখানা, দোকানপাট, শপিংমল সব বন্ধ থাকবে। তাই সবাই একদিনে ফিরে আসবে না। কারণ মানুষের কাজ না থাকলে কখনই ঈদের পর দিন ফেরার কথা না। তাই লোকজনের ফিরতে ভোগান্তিও হওয়ার কথা না।’

Comments

The Daily Star  | English

Five crisis-hit banks secure BB guarantee for liquidity

Five crisis-hit banks have obtained a Bangladesh Bank (BB) guarantee to avail liquidity support from the inter-bank money market, according to central bank officials.

9h ago