বেড়েছে ছাগল, কমেছে গরু

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার তিস্তা নদীর চর গোবর্ধানে ছাগল নিয়ে বাড়ি ফিরছে এক শিশু। ছবি: এস দিলীপ রায়

কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা এবং দুধকুমারসহ ২৬টি নদ-নদীর প্রায় ৪৫০টি চরাঞ্চলে ছাগল পালনের পরিমাণ বেড়েছে। কিন্তু, গরু পালনের পরিমাণ আগের তুলনায় কমেছে।

এ প্রসঙ্গে জেলা প্রাণীসম্পদ বিভাগ জানিয়েছে, গরু পালনে পর্যাপ্ত গোখাদ্যের প্রয়োজন হয়। কিন্তু, গোখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় গরু পালনে চরবাসীদের মধ্যে অনীহা দেখো যাচ্ছে। তবে ছাগল পালনে কোন খাদ্য কিনতে হয় না।

কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট প্রাণীসম্পদ বিভাগ সূত্র জানায়, বর্তমানে দুই জেলায় গরুর সংখ্যা আছে ১৪,৫৫,৮৩০টি আর ছাগল ৬,৫৭,০২৫টি। দুইবছর আগে গরু ছিলো ১৬,১২,০০০টি এবং ছাগল ছিলো ৫,৮০,০০০টি।

কুড়িগ্রাম প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা আবদুল হাই সরকার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘গরু ও ছাগলের সংখ্যায় যে পরিবর্তন এসেছে তার অধিকাংশই চরাঞ্চলে। ছাগল পালন লাভজনক হওয়ায় চরবাসী সেদিকে ঝুঁকছেন। তাছাড়া, ছাগল পালন করতে খাদ্য কিনতে হয় না। চরাঞ্চলে প্রাকৃতিক ঘাস, লতা-পাতা খাইয়ে ছাগল পালন করা যায়।’

‘গত দেড় বছর ধরে গোখাদ্যের দাম অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে ধানের খড়ের দাম এতোই বেড়েছে তাতে চরের সাধারণ কৃষক গোখাদ্য কিনে গরু পালন করতে হিমশিম খাচ্ছেন,’ যোগ করেন তিনি।

লালমনিরহাট প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ছাগলের তেমন রোগ-ব্যাধি হয় না। শুধু, বছরে একবার পিপিআর টিকা দিলে পারলে নিরাপদে ছাগল পালন করা যায়। চরাঞ্চলের প্রত্যেক বাড়িতে ৫-২০টি ছাগল রয়েছে। এসব ছাগল পালন করে বছরে তারা আশানুরূপ লাভবান হচ্ছেন। পাশাপাশি তারা গরুও পালন করছেন। কিন্তু, গোখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেকে গরু পালনের চেয়ে ছাগল পালনকে প্রাধান্য দিচ্ছেন।’

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে চর পার্বতীর কৃষক তাহের আলী (৫৬) জানান, তার তিনটি গরু ছিলো, কিন্তু দুটি বিক্রি করে দিয়েছেন। দু’বছর আগে ছাগল ছিলো ৬টি কিন্তু বৃদ্ধি করে ১৫টি ছাগল পালন করছেন এখন। বেশি দামে গোখাদ্য কিনে গরু পালন করে লাভবান হওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু ছাগল পালনে কোন খাদ্য কিনতে হয় না। চরের বুকে এসব ছাগল খোলামেলা পালন করা যায়।

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার তিস্তা নদীর বুকে চর গোবর্ধানের কৃষক শামসুল ইসলাম (৫০) জানান, তিনি চারটি গরু বিক্রি করে ছাগল পালন শুরু করেছেন। তার ১৮টি ছাগল রয়েছে। তার ছেলে প্রতিদিন এসব ছাগল চরে নিয়ে যায়। ছাগল পালন করতে তাকে কোনো অতিরিক্ত ব্যয় করতে হচ্ছে না। কিন্তু, গরু পালন করতে গিয়ে তাকে অনেক টাকা ব্যয় করতে হয়েছিল।

তবে, গোখাদ্যের দাম বিশেষ করে ধানের খড়ের দাম না বাড়লে তিনি গরু পালন অব্যাহত রাখতেন বলে জানান।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার চর যাত্রাপুর হাটের খড় ব্যবসায়ী মতিন মিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বর্তমানে প্রতি আঁটি ধানের খড় ৭-৮ টাকা বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু, বর্ষাকালে এর দাম বেড়ে ১৩-১৫ টাকা হয়। একটি গরুকে প্রতিদিন ৭-১০টি আঁটির খড় খেতে দিতে হয়।’

Comments

The Daily Star  | English

‘Shockingly insufficient’

"The proposed decision to allocate USD 250 billion per year for all developing countries is shockingly insufficient," said the adviser

3h ago