এক নজরে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচন

করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত ভারতে আজ অষ্টম ধাপের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন। এবারের বিধানসভা নির্বাচনে আট ধাপে ভোট গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী ২ মে নির্বাচনের ফল প্রকাশ করা হবে।
প্রতীকী ছবি

করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত ভারতে আজ অষ্টম ধাপের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন। এবারের বিধানসভা নির্বাচনে আট ধাপে ভোট গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী ২ মে নির্বাচনের ফল প্রকাশ করা হবে।

আজ বৃহস্পতিবার মালদা ও মুর্শিদাবাদের বাকি অংশ, বীরভূম ও উত্তর কলকাতায় মোট ৩৫টি আসনে ভোট গ্রহণ হয়েছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস জানায়, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন ভারতের প্রধান নির্বাচন কমিশনার সুনীল আরোরা।

ঘোষিত তারিখ অনুযায়ী, প্রথম দফায় ২৭ মার্চ পুরুলিয়া, বাঁকুড়ার একাংশ, ঝাড়গ্রাম ও পূর্ব মেদিনীপুরের একাংশ ও পশ্চিম মেদিনীপুরের একাংশের মোট ৩০টি আসনে ভোট গ্রহণ হয়।

দ্বিতীয় দফায় ১ এপ্রিল বাঁকুড়া, পূর্ব মেদিনীপুর ও পশ্চিম মেদিনীপুরের বাকি অংশ, দক্ষিণ ২৪ পরগনার একাংশের মোট ৩০টি আসনে ভোট গ্রহণ হয়। দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে সবার নজর ছিল নন্দীগ্রামে। কারণ এখানে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে প্রার্থী ছিলেন। এ আসনে মমতার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তারই একসময়ের অনুগত শুভেন্দু অধিকারী। নির্বাচনের আগে তৃণমূল ত্যাগ করে বিজেপিতে যোগ দেন তিনি। অন্যদিকে, বাম-কংগ্রেস-ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের (আইএসএফ) হয়ে এই কেন্দ্রে প্রার্থী ছিলেন সিপিএমের জনপ্রিয় নেতা মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। সবমিলিয়ে আসনটি হাই-প্রোফাইল আসন ছিল। ভোট গ্রহণ শেষে তিন দলের প্রার্থীই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ জানান।

তৃতীয় দফায় ৬ এপ্রিল হাওড়া, হুগলি ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার একাংশের মোট ৩১টি আসনে ভোট গ্রহণ হয়।

চতুর্থ দফায় ১০ এপ্রিল হাওড়া, উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার, হুগলি ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাকি অংশের মোট ৪৪টি আসনে ভোট গ্রহণ হয়।

পঞ্চম দফায় ১৭ এপ্রিল উত্তর ২৪ পরগনার একাংশ, নদীয়ার একাংশ, পূর্ব বর্ধমানের একাংশ, দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি জেলায় মোট ৪৫টি আসনে ভোট গ্রহণ হয়।

ষষ্ঠ দফায় ২২ এপ্রিল উত্তর ২৪ পরগনা ও নদীয়ার বাকি অংশ, পূর্ব বর্ধমানের বাকি অংশ ও উত্তর দিনাজপুরের মোট ৪৩টি আসনে ভোট গ্রহণ হয়।

সপ্তম দফায় ভোট গ্রহণ হয় ২৬ এপ্রিল। এদিন মালদার একাংশ, মুর্শিদাবাদের একাংশ, পশ্চিম বর্ধমান ও দক্ষিণ দিনাজপুর ও দক্ষিণ কলকাতায় ভোট গ্রহণ হয়। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মুর্শিদাবাদের শমসের নগর ও জঙ্গিপুরের দুই প্রার্থী মারা যাওয়ায় সপ্তম ধাপে ৩৬ আসনে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও ভোট হয় ৩৪টিতে। এই ধাপের নির্বাচনে সবার চোখ ছিল পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজ এলাকা ভবানীপুরে। মমতা নিজে নন্দীগ্রামের প্রার্থী হওয়ায় ভবানীপুরে প্রার্থী ছিলেন তৃণমূলের প্রবীণ নেতা সংসদ সদস্য শোভন দেব চট্টোপাধ্যায়। অন্যদিকে, কিছুদিন আগে তৃণমূল ছেড়ে আসা অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষকে এই আসনে প্রার্থী করে।

মুসলিম ও সংখ্যালঘু ভোট

এবার বিধানসভা নির্বাচনে ভাগ্য নির্ধারণে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে মুসলিম ভোট বলে বিশ্লেষকরা নির্বাচনের আগে থেকেই দাবি জানিয়েছেন। ইন্ডিয়া টুডেসহ কয়েকটি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছিল, এ বছর বিধানসভা নির্বাচনে প্রায় ৩০ ভাগ ভোটার মুসলমান।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে পর্যবেক্ষকরা বলছেন, নির্বাচনে যেই জিতুক, ব্যবধান হবে অল্প। ফলে, ২৭ থেকে ৩০ ভাগ মুসলিম ভোটকে এখানে ফলাফল নির্ধারক হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

ভারতীয় জাতীয়তাবাদ, হিন্দুত্ববাদ ও বাংলাদেশিদের অনুপ্রবেশের মতো বিষয় নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপি। বিজেপি সাম্প্রদায়িক শক্তি নিয়ে প্রচারণায় নামায় অন্য দুই দল- তৃণমূল ও কংগ্রেস-বামফ্রন্টের কাছে মুসলিমদের ভোটের গুরুত্ব বেড়েছে। ভোটের এই মেরুকরণেরই সুবিধা পেতে চাইছে বিজেপি।

এবারের নির্বাচনে আলোচিত ছিল, কংগ্রেস-বামফ্রন্ট জোটে যোগ দেওয়া পশ্চিমবঙ্গের ফুরফুরা শরীফের আব্বাস সিদ্দিকীর নবগঠিত রাজনৈতিক দল ‘ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট’। আব্বাস সিদ্দিকী তাদের ঝুলিতে মুসলিমদের অনেক ভোট টানতে পারবেন বলে ‍শুরু থেকে ধারণা করা হচ্ছিল। অনেকে আব্বাস সিদ্দিকিকে নির্বাচনে ‘গেম চেঞ্জার’ বলেও বিবেচনা করেন।

অন্যদিকে মমতার দল তৃণমূলের অভিযোগ, বিজেপিকে নির্বাচনে জেতাতেই বিজেপি বিরোধীদের ভোট কাটার জন্য মাঠে নেমেছে ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ)।

মুসলিমদের পাশাপাশি সাঁওতাল এবং কিছু হিন্দুরাও নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা। ভারতে পশ্চিমবঙ্গে প্রায় তিন কোটি মতুয়া জনগোষ্ঠীর মানুষ আছেন। এই মতুয়া গোষ্ঠী নির্বাচনে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে বলে বিশ্লেষকরা বলেছেন।

মমতার দল তৃণমূলের অভিযোগ, মতুয়া গোষ্ঠীর ভোট টানতেই নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন।

হিন্দুস্তান টাইমস এক প্রতিবেদনে জানায়, নির্বাচনের সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে ভারতীয় নির্বাচন কমিশনের ‘আচরণবিধি লঙ্ঘন’ বলে মন্তব্য করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মমতার ওপর হামলার অভিযোগ

গত ১০ মার্চ নন্দীগ্রামে নির্বাচনী প্রচারণায় গিয়ে বাঁ পায়ে ও কাঁধে আঘাত পান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ ঘটনাকে তিনি ‘গভীর ষড়যন্ত্র’ বলে দাবি করে হামলার জন্য বিজেপিকে দায়ী করেন। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন এবং হুইল চেয়ারে করে হাসপাতাল ছাড়েন। পরবর্তীতে তিনি হুইল চেয়ারে বসেই নির্বাচনী অংশ নেন।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তখন বলেছিলেন, বিজেপি আমাকে ঘরবন্দী করে রাখতে চেয়েছিল যাতে আমি নির্বাচনের সময় বাইরে বের হতে না পারি। তারা (বিজেপি) আমার পায়ে আঘাত করেছে। কিন্তু, তারা আমার কণ্ঠস্বর রুখতে পারবে না, আমরা বিজেপিকে পরাজিত করব।

তবে, ভারতের নির্বাচন কমিশন মমতার ওপর হামলার কোনো প্রমাণ পায়নি এবং এটিকে দুর্ঘটনা বলে উল্লেখ করে।

জরিপ যা বলছে

পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা আসন ২৯৪টি। রাজ্য সরকার গড়তে এখানে ১৪৮ আসন প্রয়োজন।

গত ২৪ মার্চ টাইমস নাও-এ প্রকাশিত এক জনমত জরিপে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের ২৯৪ বিধানসভা আসনের ১৬০টিতে জয় পেতে পারে তৃণমূল।

সিভোটারের ওই জরিপে ১৫ দিন আগে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল যে, তৃণমূল ১৫৪টি ও বিজেপি ১০৭টি আসনে জয় পেতে পারে। তবে, ২৪ মার্চ প্রকাশিত সর্বশেষ জরিপে দেখা গেছে, তৃণমূল ১৬০টি ও বিজেপি ১১২টি আসন পেতে পারে।

মূল প্রতিদ্বন্দ্বী দুই দলেরই সমর্থন বাড়লেও জনমত জরিপে বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ জোটের সমর্থন কমতে দেখা গেছে। এর আগের জরিপে এই জোট ৩৩টি আসনে জেতার পূর্বাভাস থাকলেও সর্বশেষ জরিপে তা নেমেছে ২২টিতে।

এনডিটিভির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার নির্বাচন নিয়ে এবিপি আনন্দ এবং সি-ভোটার পরিচালিত তিনটি জনমত জরিপেও তৃণমূল কংগ্রেসের জয়ের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৩ মার্চ পর্যন্ত পরিচালিত এ জরিপে রাজ্যের ১৯ হাজার ৩১৪ জন ভোটার নিজেদের মতামত দেন। ফলাফলে দেখা গেছে, নির্বাচনে তৃণমূল পেতে পারে ১৫০ থেকে ১৬৬ আসন। বিজেপি পেতে পারে ৯৮ থেকে ১১৪ আসন। বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ জোট পেতে পারে ২৩ থেকে ৩১ আসন।  অন্যরা পেতে পারে পাঁচটি আসন।

আরও পড়ুন:

দুর্নীতির অভিযোগ, মমতা কি পারবেন সুন্দরবন দুর্গ ধরে রাখতে?

নন্দীগ্রামে ভোটকেন্দ্রে সংঘর্ষ: কারচুপির অভিযোগ মমতার

সবার নজর নন্দীগ্রামে

শীর্ষ নেতাদের লড়াই এবং বিতর্কিত প্রার্থী

মোদির বাংলাদেশ সফর নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন: মমতা

কার বাক্সে যাবে পশ্চিমবঙ্গের আদিবাসী ভোট

পশ্চিমবঙ্গে প্রথম দফায় ভোটগ্রহণ চলছে

বিজেপির ‘হাইভোল্টেজ প্রচারণা’র পরেও জনমত জরিপে এগিয়ে তৃণমূল

কলকাতায় ভোটার হলেন মিঠুন, জোরালো বিজেপির প্রার্থী হওয়ার গুঞ্জন

মিঠুনের নকশাল থেকে তৃণমূল হয়ে বিজেপি যাত্রা

‘বাংলার মেয়ে মমতা’র জবাবে মোদির কণ্ঠে ‘বাংলার ছেলে মিঠুন’

Comments

The Daily Star  | English

Five crisis-hit banks secure BB guarantee for liquidity

Five crisis-hit banks have obtained a Bangladesh Bank (BB) guarantee to avail liquidity support from the inter-bank money market, according to central bank officials.

9h ago