রুশদির ভেন্টিলেটর সাপোর্ট খুলে নেওয়া হয়েছে, কথা বলতে পারছেন
গত শুক্রবার হামলার শিকার হয়ে হাসপাতালে ভেন্টিলেটর সাপোর্টে ছিলেন 'দ্য স্যাটানিক ভার্সেস' খ্যাত ব্রিটিশ ভারতীয় ঔপন্যাসিক ও প্রাবন্ধিক সালমান রুশদি। আজ জানা গেছে, গতকাল তার ভেন্টিলেটর সাপোর্ট বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে এবং তিনি কথা বলতে পারছেন।
আজ বার্তা সংস্থা এপির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
'দ্য স্যাটানিক ভার্সেস' উপন্যাসটি লেখার পর বহু বছর ধরে প্রাণনাশের হুমকি পেলেও শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে একটি মঞ্চে হামলার শিকার হন রুশদি। গত শুক্রবার নিউইয়র্কের একটি মঞ্চে বক্তৃতার সময় তার ওপর আক্রমণ করা হয়।
চৌতাকুয়া ইনস্টিটিউশনের মঞ্চে বক্তৃতা করার সময় একজন দৌড়ে এসে সালমান রুশদিকে ঘুষি ও ছুরিকাঘাত করতে থাকে। রুশদি মেঝেতে পড়ে গেলে লোকটি ক্ষান্ত হন।
সালমান রুশদির কর্মকর্তা অ্যান্ড্রু ওয়াইলি গতকাল জানান, 'সালমান রুশদির অবস্থা তেমন একটা ভালো না। তিনি এক চোখ হারাতে পারেন। তার বাহুতে থাকা স্নায়ুগুলো কেটে ফেলা হয়েছে। ছুরিকাঘাতে তার লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।'
গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও শনিবার সন্ধ্যায় লেখক আতিশ তাসির টুইট বার্তায় জানান 'রুশদির ভেন্টিলেটর সাপোর্ট বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে এবং তিনি আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন (হাসি-ঠাট্টা করেছেন)।'
অ্যান্ড্রু ওয়াইলি আতিশের দেওয়া তথ্য নিশ্চিত করলেও বিস্তারিত কিছু জানাননি।
এর আগে সন্দেহভাজন হামলাকারী ২৪ বছর বয়সী হাদি মাতারের আইনজীবী তাকে এ ঘটনায় নির্দোষ দাবি করেন। পশ্চিম নিউইয়র্কের এক আদালতে শুনানির সময় তিনি এই দাবি করেন। হাদি মাতারের বিরুদ্ধে হত্যা প্রচেষ্টা ও হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে। একজন কৌসুলি একে 'পূর্বপরিকল্পিত' অপরাধ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
কালো ও সাদা জাম্পস্যুট এবং সাদা ফেস মাস্ক পরিহিত অবস্থায় হাদিকে আদালতে হাজির করা হয়। তার হাতে হাতকড়া পরানো ছিল।
বিচারক জামিনের আবেদন নাকচ করে হাদি মাতারকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
ধর্ম অবমাননার অভিযোগে ১৯৮৮ সাল থেকে ইরানে সালমান রুশদির উপন্যাস 'দ্য স্যাটানিক ভার্সেস' নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ঘটনার এক বছর পর ইরানের প্রয়াত নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি রুশদির মৃত্যুদণ্ডের হুকুম দিয়ে ফতোয়া জারি করেন।
সেখানে রুশদিকে হত্যা করতে পারলে ৩ মিলিয়ন ডলারের বেশি পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়।
ইরানের সরকার অনেক আগেই খোমেনির ওই ঘোষণা থেকে বেরিয়ে আসলেও রুশদিবিরোধী মনোভাব বজায় ছিল। ২০১২ সালে ইরানের একটি আধা-সরকারি ধর্মীয় ফাউন্ডেশন রুশদির জন্য ঘোষণা করা অর্থের পরিমাণ ২ দশমিক ৮ মিলিয়ন থেকে বাড়িয়ে ৩ দশমিক ৩ মিলিয়ন করে।
রুশদি সে সময় ওই হুমকি প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন, 'মানুষের পুরস্কারে প্রতি আগ্রহী হওয়ার কোন 'প্রমাণ' নেই।'
সালমান রুশদির ওপর হামলায় সারা বিশ্বে নিন্দার ঝড় বয়ে গেছে। সাহিত্য, সংস্কৃতি অঙ্গনের ব্যক্তিত্বদের পাশাপাশি রাজনীতিবিদরাও এ হামলার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শনিবার এক বক্তব্যে জানান তিনি ও ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন এই ঘটনায় 'হতভম্ব ও দুঃখিত' হয়েছেন।
Comments