২০২২ সালে খামেনির ফতোয়া বাস্তবায়নের জন্য রুশদির ওপর হামলা: যুক্তরাষ্ট্র
দুই বছর আগে ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক সালমান রুশদির ওপর হামলার অভিযোগে অভিযুক্ত হাদি মাতারের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদের অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগ মতে, তিনি ১৯৮৯ সালে ইরানের ধর্মীয় নেতা খামেনির দেওয়া ফতোয়া বাস্তবায়নের জন্য রুশদিকে হত্যার চেষ্টা চালান।
আজ বৃহস্পতিবার এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি।
বুধবার তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগে বলা হয়েছে, হাদি মাতার হিজবুল্লাহকে সরাসরি সহায়তা করেছেন। এএফপি জানিয়েছে, এবারই প্রথম যুক্তরাষ্ট্র রুশদির ওপর হামলার সঙ্গে হিজবুল্লাহকে সংযুক্ত করল।
কয়েক সপ্তাহ আগে লেবানিজ-আমেরিকান নাগরিক হাদি মাতারকে সরকারি কৌঁসুলিরা অভিযোগের দায় মেনে নিয়ে কারাদণ্ড কমানোর প্রস্তাব দেন। তবে এতে রাজি না হয়ে নিজেকে আবারও নির্দোষ দাবি করেন মাতার।
২০২২ এর আগস্টে রুশদির (৭৭) ওপর ছুরি হাতে ঝাঁপিয়ে পড়েন মাতার। এ সময়য় রুশদি নিউ ইয়র্কের একটি অনুষ্ঠানের মঞ্চে বক্তব্য রাখছিলেন । তাকে আততায়ী ১০-১২ বার ছুরিকাঘাত করেন। এই হামলার জেরে রুশদি একটি চোখে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন।
নিউ ইয়র্কের বাসিন্দা রুশদির জন্ম হয়েছিল ভারতে। ১৯৮৮ সালে 'দ্য স্যাটানিক ভার্সেস' নামে একটি বই প্রকাশ করেন তিনি। এই বই প্রকাশের পর ইরানের তৎকালীন সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খামেনি একে ইসলাম ধর্মের প্রতি অবমাননাকর বলে ঘোষণা দেন।
১৯৮৯ সালে একটি 'ফতোয়া' জারি করে বিশ্বের সব মুসলমানদের রুশদিকে হত্যা করার আহ্বান জানান খামেনি।
বুধবার এফবিআই এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, হিজবুল্লাহ এই ফতোয়াকে সমর্থন করে।
নিউ ইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল মেরিক গারল্যান্ড এক পৃথক বিবৃতিতে বলেন, 'আমাদের অভিযোগ হল, ২০২২ সালে ইরানের শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ও (যুক্তরাষ্ট্রের) তালিকাভুক্ত জঙ্গি সংগঠন হিজবুল্লাহর পক্ষ নিয়ে হাদি মাতার সালমান রুশদিকে হত্যার প্রচেষ্টা চালান, যা একটি জঙ্গি কার্যক্রম হিসেবে বিবেচিত।'
মার্কিন বিচার বিভাগ আরও জানায়, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে শুরু করে হামলার আগে পর্যন্ত মাতার হিজবুল্লাহকে এই ফতোয়া বাস্তবায়নের জন্য প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করেছে।
মাতারের আইনজীবী নাথানিয়েল ব্যারোন বিবিসিকে জানান, তার মক্কেল নতুন অভিযোগেও নিজেকে নির্দোষ দাবি করবেন।
ব্যারোন বলেন, 'এসব অভিযোগ থেকে দায়মুক্তির জন্য আমাদের সর্বোচ্চ সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে আইনি লড়াই চালিয়ে যাব।'
তিনি আরও জানান, মাতার তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগে নিজেকে নির্দোষ দাবি করছেন।
গ্রেপ্তারের পর দুই বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো একবারও জামিন পাননি ২৬ বছর বয়সী মাতার।
পশ্চিমা দেশ, মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশ ও আরব লীগের সদস্যরা হিজবুল্লাহকে জঙ্গি সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।
নিউ জার্সির বাসিন্দা হাদি মাতার কী কারণে রুশদির ওপর হামলা চালিয়েছিলেন, সে বিষয়টি এখনো পরিষ্কার নয়।
কারাগার থেকে নিউ ইয়র্ক পোস্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মাতার জানান, তিনি ইউটিউবে রুশদির ভিডিও দেখেছেন এবং তিনি এ ধরনের ভণ্ড মানুষদের পছন্দ করেন না। তিনি আরও জানান, রুশদির বইয়ের মাত্র দুই পাতা পড়েছেন তিনি। তা সত্ত্বেও তার বিশ্বাস, রুশদি 'ইসলামকে আক্রমণ করেছেন।'
এ বছর বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রুশদি জানান, মাতার সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে এসে তাকে ১২ বার ছুরিকাঘাত করেন।
'আমি তার বিরুদ্ধে লড়তে পারিনি। আমি তার কাছ থেকে দৌড়ে পালাতেও পারিনি', ২৭ সেকেন্ড ধরে চলা হামলার বিষয়ে মন্তব্য করেন রুশদি।
হামলার পর ছয় সপ্তাহ হাসপাতালে ছিলেন রুশদি।
হামলার বিষয়ে পরে তিনি একটি বই লেখেন, যা এ বছরের শুরুতে প্রকাশিত হয়েছে।
ফতোয়া জারির পর ১০ বছর লন্ডনে লোকচক্ষুর অন্তরালে ছিলেন রুশদি। তবে গত ২০ বছর তিনি নিউইয়র্কে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন।
Comments