ট্রাম্প-কমলার শেষ দিনের প্রচারণা
দীর্ঘ অপেক্ষার পর শেষ হতে যাচ্ছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌড়। আর একদিন পরই সেই মাহেন্দ্রক্ষণ—ভোটের আনুষ্ঠানিক দিন।
যদিও ইতোমধ্যে সাত কোটি ৭০ লাখেরও বেশি ভোটার আগাম ভোট দিয়েছেন, তা সত্ত্বেও, ভোটের দিন নিয়ে উৎসাহের কমতি নেই। আজ প্রচারণার শেষ দিনটি প্রচণ্ড ব্যস্ততায় কাটাবেন দুই নেতা।
আজ সোমবার এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা এপি।
যেখানে যাবেন কমলা
কমলা হ্যারিস আজ সারাদিন পেনসিলভেনিয়ায় কাটাবেন। লক্ষ্য, ইলেক্টোরাল কলজের ১৯টি মহামূল্যবান ভোট নিজের কব্জায় রাখা। ধারণা করা হচ্ছে, প্রেসিডেন্ট কে হবেন তা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এই দোদুল্যমান রাজ্যের ফল।
তিনি কর্মজীবী শ্রেণির মানুষদের আবাস অ্যালেনটাউন সরেজমিনে পরিদর্শন করবেন। ভোটারদের সঙ্গে কথা বলবেন। শুনবেন তাদের দাবি দাওয়া। পরবর্তীতে, দিনের শেষ ভাগে পপ তারকা লেডি গাগা ও বিখ্যাত উপস্থাপক অপরাহ উইনফ্রের সঙ্গে ফিলাডেলফিয়ায় সমাবেশে যোগ দেবেন।
যেখানে যাবেন ট্রাম্প
অপরদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্প আজ একদিনের মাঝেই তিন অঙ্গরাজ্যে চারটি সমাবেশে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন।
তিনি নর্থ ক্যারোলাইনার র্যালে থেকে প্রচারণা শুরু করবেন। এরপর পেনসিলভেনিয়ায় দুই বার থামবেন। সেখানে রিডিং ও পিটসবার্গে দুইটি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। গত দুই নির্বাচনের মতো একই কায়দায় মিশিগানের গ্র্যান্ড র্যাপিডস শহরে গভীর রাতের এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রচারণার যতি টানবেন ট্রাম্প।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি
ইতোমধ্যে বিপুল সংখ্যক ভোটার আগাম ভোট দিয়েছে। তা সত্ত্বেও আগামীকাল মঙ্গলবার ভোটের দিন নিজেদের পক্ষে আরও লাখো ভোটার টানতে শেষ মুহূর্তেও বিপুল উৎসাহে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন ট্রাম্প-কমলা।
এই নির্বাচনে যেই জিতুক না কেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নতুন ইতিহাস রচিত হতে যাচ্ছে।
ট্রাম্প জিতলে ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত ও সাজাপ্রাপ্ত আসামী হিসেবে প্রথম প্রেসিডেন্ট হবেন তিনি। নিউইয়র্কে পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে ঘুষ দিয়ে বিবাহ-বহির্ভূত অভিসারের বিষয়টি নিয়ে চুপ থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন ট্রাম্প।
প্রেসিডেন্ট হলে তিনি তার বিরুদ্ধে চলমান নানা তদন্ত বন্ধের ক্ষমতা পাবেন।
২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট হয়ে ২০২০ পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু ২০২০ এর পুনর্নিবাচনে হেরে গেলেও আবারও রিপাবলিকান দলের টিকিট পেয়ে এবারের নির্বাচনে লড়ছেন তিনি।
সাধারণত মার্কিন প্রেসিডেন্টরা পুনর্নিবাচন না করে অবসর নেন না সরে দাঁড়ান না। এবার লড়াই থেকে সরে দাঁড়িয়ে জো বাইডেন নতুন নজির স্থাপন করেছেন।
আবার যেসব প্রেসিডেন্ট পুনর্নিবাচনে হেরে যান, তারা পরবর্তীতে আর নির্বাচনও করেন না, বা করলেও জেতার নজির নেই। এ ক্ষেত্রে একমাত্র ব্যতিক্রম সাবেক প্রেসিডেন্ট গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড। এবার জিতলে ট্রাম্পও তার কাতারে যোগ দেবেন।
অপর দিকে প্রথম নারী, অশ্বেতাঙ্গ ও দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত নাগরিক হিসেবে ওভাল অফিসে প্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছেন কমলা। চার বছর আগে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেনের প্রশাসনে এসেও আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন তিনি।
যা বলছেন কমলা
গতকাল সোমবার প্রচারণায় ট্রাম্পকে আক্রমণ করে কোনো বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থেকেছেন কমলা। নির্বাচনী প্রচারণার শেষে তিনি বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন এবং সার্বিকভাবে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করছেন।
ধারণা করা হচ্ছে, তিনি 'উৎফুল্লতার রাজনীতি' ও 'স্বাধীনতা' নিয়ে বক্তব্য অব্যাহত রাখবেন।
প্রচারণার শুরু থেকেই তার বক্তব্যের কেন্দ্রে এসব চিন্তাধারা স্থান পেয়েছে।
মিশিগানে কমলা রোববার সন্ধ্যায় বলেন, 'শুরু থেকেই, আমাদের প্রচারণা কারো বিরুদ্ধে ছিল না, বরং একটি (জীবনধারার) পক্ষে।'
যা বলছেন ট্রাম্প
ট্রাম্প তার বহুলব্যবহৃত 'মাগা' বা মেইক আমেরিকা গ্রেট এগেইন (যুক্তরাষ্ট্রকে আবারও মহান রাষ্ট্রে পরিণত করুন) শ্লোগানেই স্থির থাকবেন বলে বিশ্লেষকরা মত দিয়েছেন। সংগে অভিবাসন প্রত্যাশীদের বিরুদ্ধে কঠোর মনোভাব ও কমলা-বাইডেন প্রশাসনের কড়া সমালোচনা অব্যাহত রাখবেন তিনি।
সাম্প্রতিক সময়ে ট্রাম্প উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও অর্থনীতির অন্যান্য সমস্যা নিয়ে ডেমোক্র্যাটদের কড়া সমালোচনা করেন এবং দাবি করেন, মার্কিন অর্থনীতিকে 'সোনালি যুগে' ফিরিয়ে নেবেন। সব আন্তর্জাতিক সংঘাতের অবসান ঘটাবেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্ত পুরোপুরিও বন্ধ করে দেবেন।
আগের নির্বাচনে 'কারচুপি হয়েছে' এবং তার কাছ থেকে 'চুরি করে' ফলাফল ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে—এই দাবিও অব্যাহত রাখবেন ট্রাম্প। তার প্রচারণায় বারবার উঠে এসেছে দেশ পরিচালনায় বাইডেনের 'অযোগ্যতার' দাবি।
রোববার সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, '২০২১ সালে আমার হোয়াইট হাউজ ছেড়ে যাওয়া উচিত হয়নি।
তিনি আরও দাবি করেন, '(ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে) কমলা যা যা নষ্ট করেছেন, আমি তা ঠিক করব।'
সাত দোদুল্যমান রাজ্যের গুরুত্ব
পেনসিলভেনিয়া, মিশিগান, উইসকনসিন, নর্থ ক্যারোলাইনা, জর্জিয়া, অ্যারিজোনা ও নেভাদা—এই সাত অঙ্গরাজ্যই নির্ধারণ করবে আগামী নির্বাচনের ফল।
এ কারণেই এসব অঙ্গরাজ্যে বিশেষ নজর দিচ্ছেন কমলা আর ট্রাম্প।
২০১৬ সালে পেনসিলভেনিয়া, মিশিগান ও উইসকনসিনে জয়ী হলেও বাইডেনের কাছে ২০২০ সালে এই তিন অঙ্গরাজ্যে হেরে যান তিনি।
ট্রাম্প দুইবার নর্থ ক্যারোলাইনায় জেতেন অ দুইবার নেভাদায় পরাজিত হন। ২০১৬ সালে অ্যারিজোনা ও জর্জিয়ায় বিজয়ী হলেও ২০২০ সালে ডেমোক্র্যাটদের কাছে এই দুই অঙ্গরাজ্যের নিয়ন্ত্রণ হারান ট্রাম্প।
আত্মবিশ্বাসী উভয় পক্ষই
নির্বাচনী প্রচারণার একেবারে শেষ পর্যায়ে এসে কিছু জনমত জরিপে এগিয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে কমলা হ্যারিসের শিবির। অপরদিকে, ট্রাম্প শিবিরে প্রচারণার সময়টুকুতে অন্য অনেক কিছুর কম-বেশি হলেও আত্মবিশ্বাসে কখনোই ঘাটতি ছিল না।
তবে সব মিলিয়ে বিশ্লেষকরা কমলা হ্যারিসকে 'আন্ডারডগ' হিসেবেই দেখছেন। অভিজ্ঞ, সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বাগাড়ম্বরপূর্ণ আক্রমণের পাল্টা জবাব না কমলাকে রক্ষণাত্মক থাকতেই দেখা গেছে বেশি।
Comments