গাজা যুদ্ধের শোকসন্তপ্ত পরিবেশ ও তাপদাহের মাঝে সৌদি আরবে হজ শুরু
আজ মক্কায় ১৫ লাখেরও বেশি মুসুল্লি হজ শুরু করেছেন। গাজার যুদ্ধের ভয়াবহতা ও সৌদি আরবের গ্রীষ্মকালীন তাপদাহের মধ্যে শুরু হয়েছে এ বছরের পবিত্র হজ।
আজ শুক্রবার এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি।
হজ করতে আসা অনেক মুসুল্লি ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা নিয়ে উদ্বেগ ও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
মরক্কো থেকে আসা জাহরা বেনিজাহরা (৭৫) কান্নাজড়িত কণ্ঠে এএফপিকে বলেন, 'আমাদের ভাইয়েরা মারা যাচ্ছে আর আমরা তা নিজের চোখে দেখতে পাচ্ছি।'
একক দেশ হিসেবে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মুসলিমের বসবাস ইন্দোনেশিয়ায়। দেশটির নাগরিক বেলিন্ডা এলহাম বলেন, 'ফিলিস্তিনে যা হচ্ছে, তার যেন অবসান হয়, সেজন্য আমি প্রতিদিন প্রার্থনা করব।'
সৌদি রাজা সালমান সোমবার একটি সরকারি আদেশ জারি করে জানান, তিনি গাজা উপত্যকায় শাহাদাৎবরণ করেছে বা আহত হয়েছে এমন ব্যক্তিদের পরিবারের এক হাজার সদস্যের হজের খরচ বহন করবেন।
সৌদি আরবের আনুষ্ঠানিক প্রেস এজেন্সি জানিয়েছে, এ বছর মোট দুই হাজার ফিলিস্তিনি হজযাত্রীকে এই সম্মান দিয়েছে সৌদি আরব।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালায় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাস। এএফপির সর্বশেষ হিসাব মতে, এই হামলায় এক হাজার ১৯৪ জন নিহত হন। একইসঙ্গে ২৫০ জনকে জিম্মি করে হামাস। গত নভেম্বরে বন্দি বিনিময়ের সময় মুক্তি পান ১০০ জিম্মি। বাকি জিম্মিদের মধ্যে ১১৬ জন এখনো গাজায় আছেন। ইসরায়েলের দাবি, অন্তত ৪০ জিম্মি নিহত হয়েছেন।
এই হামলার প্রতিশোধ হিসেবে সেদিনই গাজার বিরুদ্ধে নজিরবিহীন ও নির্বিচার বিমানহামলা শুরু করে ইসরায়েল। পরবর্তীতে স্থলবাহিনীও এতে যোগ দেয়। গত ৭ মাসে ফিলিস্তিনি নিহতের সংখ্যা অন্তত ৩৭ হাজার ২৩২। আহতের সংখ্যা অন্তত ৮৪ হাজার ৮৩২। হতাহতের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
এ বছরের হজ
ইসলাম ধর্মের পাঁচ স্তম্ভের এক স্তম্ভ হল হজ। প্রতিটি সবল ও সামর্থ্যবান মুসলিমকে তাদের জীবদ্দশায় অন্তত একবার হজ করতে হয়।
করোনাভাইরাস মহামারির বিধিনিষেধ ও ন্যুনতম বয়সসীমা প্রত্যাহারের পর গত বছর ১৮ লাখ মানুষ হজ করার সুযোগ পান।
এ বছর সোমবার দিনের শেষ নাগাদ ১৫ লাখ হজযাত্রী সৌদি আরব পৌঁছেছেন।
এ বছর প্রবল তাপের কারণে হজযাত্রীর সংখ্যা কিছুটা কমেছে। কর্মকর্তারা পূর্বাভাষ দিয়েছেন, সৌদি আরবের এই উষ্ণ গ্রীষ্মে দিনের গড় তাপমাত্রা ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠতে পারে।
সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মোহাম্মেদ আল-আবদুল আলি এএফপিকে জানান, এ বছর তাপ-সংক্রান্ত অসুস্থতায় ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বা চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের ১০ শতাংশ হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছিলেন।
বৃহস্পতিবার হজ করার উদ্দেশে আগত ব্যক্তিদের মোবাইলে সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মেসেজ পাঠিয়ে নিয়মিত পানি পানের পরামর্শ দিয়েছে।
মেসেজে বলা হয়, 'দিনে দুই লিটারের বেশি পানি পান করুন। সঙ্গে সবসময় ছাতা রাখুন।'
এ ছাড়াও, তাপমাত্রা ৪৮ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠতে পারে বলেও সতর্ক করা হয় এই বার্তায়।
Comments