ইরানে বিক্ষোভ চলছেই, নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৩৩

সুইজারল্যান্ডের বার্নে ইরানী দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছে সুইস নাগরিকরা। ছবি: এপি
সুইজারল্যান্ডের বার্নে ইরানী দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছে সুইস নাগরিকরা। ছবি: এপি

পুলিশি হেফাজতে মাহসা আমিনির (২২) মৃত্যুর প্রতিবাদে ইরানের বেশ কয়েকটি শহরে এখনও বিক্ষোভ চলছে। ২ সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলতে থাকা সংঘাতে দেশটিতে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৩৩ জন নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে নরওয়েভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা ইরান হিউম্যান রাইটস (আইএইচআর)

আজ সোমবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

ইরানের কতৃপক্ষ গত সপ্তাহের পর মৃতের সংখ্যা নিয়ে নতুন কোনো তথ্য দেয়নি। তাদের দাবি, বেশ কয়েকজন নিরাপত্তা কর্মীও 'দাঙ্গাকারী ও বিদেশী শত্রুদের মদদপুষ্ট দুবৃত্তের' হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন। গত সপ্তাহে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব টিভি চ্যানেলে নিরাপত্তা বাহিনির সদস্য সহ ৪১ জনের মৃত্যুর কথা জানানো হয়।

আইএইচআর অভিযোগ এনেছে, বিক্ষোভ দমনে কতৃপক্ষ অসঙ্গতিপূর্ণ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে এবং তাজা গোলাবারুদ ব্যবহার করছে।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি এখন পর্যন্ত ইরানের ৩১টি প্রদেশে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভ নিয়ে কিছু বলেননি। ইরানের প্রায় সর্বস্তরের ও সব ধর্মের মানুষ এই বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছে বলে জানা গেছে।

মাহসা আমিনির মৃত্যু ও বিক্ষোভের বিরুদ্ধে দমননীতি প্রয়োগের কারণে ইরানের শাসকরা আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে পড়েছেন। প্রত্যুত্তরে ইরান কতৃপক্ষ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোর বিরুদ্ধে এই বিক্ষোভের ফায়দা নিয়ে দেশটিকে অস্থিতীশীল করার প্রচেষ্টার অভিযোগ এনেছে।

ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব গণমাধ্যমে সরকারপন্থী শিক্ষার্থীদের ভিডিও দেখানো হয়। মাশদাদ অঞ্চলের ফেরদৌসি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল ছাত্র সরকারের পক্ষে শ্লোগান দেন।

রোববার একটি সংসদীয় অধিবেশনে সরকার বিরোধী বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে পুলিশের বলিষ্ঠ ভূমিকাকে সাধুবাদ জানিয়ে 'ধন্যবাদ, পুলিশ' বলে শ্লোগান দেন দেশটির আইনপ্রণেতারা।

তেহরানের বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষ

রোববার ইরানের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে তেহরানের শরীফ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়।

বিক্ষোভকারীদের সমর্থন জানানো টুইটার অ্যাকাউন্ট ১৫০০তাসভিরে শরীফ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু ভিডিও পোস্ট করা হয়।

তেহরানের পুরনো বাজারে বিজয় চিহ্ন দেখাচ্ছেন এক ইরানী নারী। ছবি: এপি
তেহরানের পুরনো বাজারে বিজয় চিহ্ন দেখাচ্ছেন এক ইরানী নারী। ছবি: এপি

এক ভিডিওতে দেখা গেছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করছেন। দূর থেকে আসা গুলির শব্দও শোনা যায় ভিডিওতে।

আরেক ভিডিওতে দেখা গেছে, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগর্ভস্থ গাড়ি রাখার জায়গায় আটকে পড়া বেশ কিছু শিক্ষার্থীদের তাড়া করছেন। টুইটার বার্তা মতে, কয়েক ডজন শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে 'সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে' এবং পরিস্থিতি যাচাই করতে দেশটির বিজ্ঞান মন্ত্রী ক্যাম্পাস পরিদর্শন করেছেন।

রয়টার্স স্বাধীনভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনাগুলোর সত্যতা যাচাই করতে পারেনি।

মাহসা আমিনির গ্রেপ্তার ও মৃত্যু

১৭ সেপ্টেম্বর মাহসা আমিনির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার পর সরকারবিরোধী বিক্ষোভের সূত্রপাত ঘটে।

মাহসা আমিনি। ছবি: রয়টার্স
মাহসা আমিনি। ছবি: রয়টার্স

১৩ সেপ্টেম্বর ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের শহর সাকেজের বাসিন্দা কুর্দি বংশোদ্ভূত নারী মাহসা আমিনি (২২) রাজধানী তেহরানে বেড়াতে আসেন। সে সময় তাকে সঠিক নিয়মে হিজাব দিয়ে মাথার চুল ঢেকে না রাখার অভিযোগে ইরানের নৈতিকতা পুলিশ গ্রেপ্তার করে।

তাকে একটি বন্দীশালায় নিয়ে যাওয়ার পর তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। হাসপাতালে নেওয়ার পর তিনি ৩ দিন কোমায় থেকে অবশেষে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

পুলিশের দাবি, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মাহসা প্রাণ হারিয়েছেন। কিন্তু মাহসার পরিবার এই দাবী নাকচ করে অভিযোগ করেছে, পুলিশ তাকে মারধর করে।

ইরানের কর্মকর্তারা মোট ১ হাজার ২০০ মানুষকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে।

দেশটির প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম রাইসি বলেন, 'দেশের নিরাপত্তা ও শান্তির বিপক্ষে যারা আছেন, তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা নিতে হবে।'

 

Comments

The Daily Star  | English

Dhaka airport receives 2nd bomb threat

Operations at HSIA continue amid heightened security

3h ago