ফ্রান্সে অবসরের বয়স বাড়ানোর প্রতিবাদে বিক্ষোভ

ফ্রান্সে সিজিআই ইউনিয়নের কর্মীরা বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছে। ছবি: রয়টার্স
ফ্রান্সে সিজিআই ইউনিয়নের কর্মীরা বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছে। ছবি: রয়টার্স

ফ্রান্সে অবসর গ্রহণের বয়সসীমা ৬২ থেকে ৬৪ বছরে উন্নীত করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দফায় বড় আকারে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।

আজ বুধবার যুক্তরাজ্যের সংবাদ মাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে। 

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর সরকারের বিরুদ্ধে ১২ দিন আগে প্রথম দফায় ১১ লাখ ২০ হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেন। তবে এবারের বিক্ষোভ এই সংখ্যাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ভাবছেন বিশ্লেষকরা।

দেশের ৮ প্রধান ইউনিয়নের সদস্যরা ধর্মঘটে অংশ নেন। এতে স্কুল, গণপরিবহন ও তেল পরিশোধনাগারের কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়।

সিজিটি ইউনিয়ন জানিয়েছে, শুধু প্যারিসেই তাদের ৫ লাখ সদস্য বিক্ষোভ জানিয়েছে। তবে প্রশাসনের দেওয়া সংখ্যা হচ্ছে প্যারিসে ৮৭ হাজার ও দেশজুড়ে ২৮ লাখ মানুষ এই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন।

তবে এত মানুষ জমায়েত হওয়া সত্ত্বেও প্রেসিডেন্ট মাখোঁ তার অবস্থান থেকে সরে আসবেন কী না, সে বিষয়টি নিশ্চিত নয়। এ ধরনের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে যত বেশি মানুষ অংশগ্রহণ করুক না কেন, সরকারের তাতে খুব একটা সমস্যা হচ্ছে না।

মাখোঁর সরকার পেনশনের বয়সসীমা সংস্কারের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে এবং এই বিলটি আগামী সপ্তাহে ফরাসি জাতীয় অ্যাসেম্বলিতে উত্থাপন করা হবে। জনমত সমীক্ষা মতে, ভোটারদের প্রায় ৬৭ শতাংশ এই উদ্যোগের সঙ্গে একমত নন।

এ মুহূর্তে মাখোঁর দলের পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। ফলে এই বিল পাস করাতে তাদের নিজ দলের আইনপ্রণেতাদের পাশাপাশি ডানপন্থী রিপাবলিকানদের সহায়তা প্রয়োজন হবে।

প্রায় ২০০ শহরজুড়ে আয়োজিত এই বিক্ষোভের ব্যবস্থাপনা করতে প্রায় ১১ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়। প্যারিসের দিকে আগাতে থাকা বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে প্লেস ভাউবানে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় ৩০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

প্যারিসে কারিমা (৬২) নামের একজন বিক্ষোভকারী জানান, সরকারের এই পরিকল্পনায় পুরুষদের চেয়ে নারীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

ফরাসি সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ। ছবি: রয়টার্স
ফরাসি সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ। ছবি: রয়টার্স

তিনি বলেন, 'আমাদের অনেকের ক্যারিয়ারে বিভিন্ন বাধা-বিপত্তি এসেছে এবং এখন আমাদের সম্পূর্ণ পেনশন পেতে হলে পুরুষদের চেয়েও বেশি সময় কাজ করতে হবে'।

বিক্ষোভের কারণে ফ্রান্সের পরিবহণ খাত বড় আকারে বিঘ্নিত হয়েছে। প্যারিসের বাইরে প্রায় ৭৫ শতাংশ পূর্বনির্ধারিত ট্রেন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হতে পারেনি। প্যারিসে শুধু ২টি চালকবিহীন মেট্রো লাইন চালু ছিল।

রাজনৈতিক বিজ্ঞানী ব্রুনো প্যালিয়ের বিবিসিকে বলেন, 'অনেক ফরাসি মানুষ মনে করছেন কাজ করা আগের তুলনায় অনেক বেশি বেদনাদায়ক হয়ে গেছে। এমন না যে তারা কাজ করতে চান না—তারা চলমান পরিস্থিতি বজায় রেখে কাজ করতে চাচ্ছেন না'।

একজন পুরুষ নার্স বলেন, সরকারি হাসপাতালের পরিস্থিতি অসহনীয়। এ জন্য তিনি বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছেন। এছাড়াও, শিক্ষকরাও স্কুলের পরিস্থিতি নিয়ে রাগান্বিত।

ফ্রান্সের অবসরগ্রহণের বয়সসীমা ৬২, যেটি পশ্চিম ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় কম। ইতালি, জার্মানি ও স্পেন ইতোমধ্যে বয়সসীমা ৬৭ করার উদ্যোগ নিয়েছে। যুক্তরাজ্যে এটি ৬৬ বছর।

মাখোঁর সরকার ইঙ্গিত দিয়েছে, তারা তাদের সংস্কার কার্যক্রমের কিছু অংশ পরিবর্তন করবে, তবে অবসরগ্রহণের বয়সসীমা ২ বছর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে দাঁড়ানোর কোনো ইচ্ছে তাদের নেই।

মাখোঁর রেনেসাঁ দলের আইনপ্রণেতা ক্রিস্টোফার ওয়েইসবার্গ বলেন, 'যদি কোন সংস্কার কার্যক্রম মানুষকে বেশিদিন কাজ করার অনুরোধ জানায়, তবে তা অবধারিতভাবে অজনপ্রিয় হবে। কিন্তু আমরা এই সংস্কারের প্রতিশ্রুতির ওপর নির্বাচিত হয়েছি'।

ফ্রান্সের বিরোধীদলগুলো ভাবছে, বিক্ষোভ সফল হলেও তাদের উদ্দেশ্য সফল নাও হতে পারে। ফলে তারা তেলের পাম্পে ধর্মঘট ও সুনির্দিষ্টভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার মতো কঠোর কর্মসূচীর কথা ভাবছে।

এখন পর্যন্ত বিক্ষোভগুলো শান্তিপূর্ণ হয়েছে। তবে এতে অর্থনীতির ক্ষতি হতে শুরু করলে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং সরকার ও বিরোধী দলের অবস্থানেরও পরিবর্তন হতে পারে।

Comments

The Daily Star  | English
Chattogram port Imports

Reducing penalty on false declarations will encourage smuggling: experts

In the Finance Ordinance 2025–26, presented on Monday, the government proposed amending the Customs Act 2023 and revising the penalty structure for tax evasion related to intentional false declarations during import clearance, reducing the minimum fine from twice the evaded amount to an equivale

24m ago