যে কারণে হামাস মানতে পারে ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব

গাজার রাফার এই বাড়িতে ইসরায়েল বিমানহামলা চালালেও প্রাণে বেঁচে যান ফিলিস্তিনি নাগরিক আবদেল রহমান বারিকা। ছবি: রয়টার্স
গাজার রাফার এই বাড়িতে ইসরায়েল বিমানহামলা চালালেও প্রাণে বেঁচে যান ফিলিস্তিনি নাগরিক আবদেল রহমান বারিকা। ছবি: রয়টার্স

মিশরের কাছ থেকে আসা একটি নতুন খসড়া চুক্তি প্রস্তাব বিবেচনা করছে হামাস। সংশ্লিষ্টরা ভাবছেন, এ চুক্তিতে হামাসের বেশিরভাগ দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে এবং তারা এটি মেনে নিতে পারেন।

আজ মঙ্গলবার এক ইসরায়েলি সূত্র ও বিদেশি কূটনীতিক সূত্রের বরাত দিয়ে সিএনএন এই তথ্য জানিয়েছে। 

সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন জানান, হামাসকে এমন একটি যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যা তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে।

ব্লিঙ্কেন রিয়াদে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) প্রেসিডেন্ট বোর্হে ব্রেন্দেকে জানান, হামাস চুক্তিতে সম্মত হলেই গাজার মানুষ যুদ্ধবিরতির সুফল পাবে।

'তাদেরকে (হামাস) সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং তা হতে হবে দ্রুত। আমি আশা করি তারা সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে', যোগ করেন ব্লিঙ্কেন। 

ইসরায়েলি কর্মকর্তারা 'টেকসই শান্তি' বা প্রকারান্তরে, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করতে রাজি হয়েছেন, যা এ অঞ্চলে যুদ্ধের অবসান ঘটাবে।

সর্বশেষ এই খসড়া প্রস্তাবের সব শর্ত ইসরায়েল মেনে না নিলেও এটি তৈরিতে সহায়তা করেছে। এতে দুই পর্যায়ের কথা বলা হয়েছে।

প্রথম পর্যায়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে ২০ থেকে ৩৩ জন জিম্মিকে মুক্তির বিনিময়ে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হবে। এ সময়য় যুদ্ধ পুরোপুরি বন্ধ থাকবে।

দ্বিতীয় পর্যায়টিকে সূত্ররা 'টেকসই শান্তির পুন:প্রতিষ্ঠা' হিসেবে অভিহিত করেছেন। এ সময়ে বাকি জিম্মি, বন্দি ইসরায়েলি সেনা ও নিহত জিম্মিদের মরদেহের বিনিময়ে আরও ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি পাবেন।

আলোচনার বিষয়টিকে সম্পর্কে অবগত আছেন এমন কূটনীতিক সূত্র জানান, টেকসই শান্তি বলতে এখানে 'স্থায়ী যুদ্ধবিরতির কথাই বলা হচ্ছে। শুধু শব্দটি ব্যবহার করা হয়নি।'

বেশ কয়েকমাস ধরে আলোচনায় স্থবিরতার পর উভয় পক্ষ এই চুক্তি মেনে নিলে তা যুদ্ধও বন্ধের উদ্যোগে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে ভাবছেন সংশ্লিষ্টরা।

আরব নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন। ছবি: রয়টার্স
আরব নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন। ছবি: রয়টার্স

তবে এই চুক্তি ভেস্তে গেলে পরিণাম ভয়াবহ হতে পারে বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ইসরায়েল অবিলম্বে রাফায় স্থল অভিযান শুরু করবে, যেখানে ১০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি আশ্রয় নেবেন।

ইসরায়েল এখন হামাসের কাছ থেকে জবাবের অপেক্ষায় রয়েছে। গতকাল চূড়ান্ত জবাব আসার কথা থাকলেও এখনো তা আসেনি। সূত্র জানান, হামাসের প্রতিনিধিরা মিশর ও কাতারের মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে আলোচনা করবেন।

ইসরায়েলের মোসাদ, শিন বেট ও সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত একটি প্রতিনিধিদল আজ মঙ্গলবার কায়রো সফর করবেন।

সংশ্লিষ্টদের আশা, হামাসের নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তার জবাব জানাবেন।

ইসরায়েলি সূত্র জানান, মিশর প্রস্তাব দিয়েছে দুই পক্ষকে এক বছরের যুদ্ধবিরতিতে সম্মতি জানাতে। এই চুক্তির আওতায় ইসরায়েলি বাহিনী গাজা থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেবে এবং বিনিময়ে হামাস বাকি সব জিম্মি ও মৃতদের মরদেহ হস্তান্তর করবে। 

এর আগে হামাসের দাবি ছিল স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার। অপরদিকে, এতোদিন পর্যন্ত ইসরায়েলের দাবি ছিল, হামাসকে নির্মূল না করা পর্যন্ত তারা সেনাবাহিনী সরিয়ে নেবে না।

সর্বশেষ চুক্তিতে ইসরায়েল উত্তর গাজায় ফিলিস্তিনিদের অবাধ বিচরণে সম্মত হয়েছে, যা হামাসের অপর দাবি ছিল।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস। এতে এক হাজার ১৬০ জন নিহত হন। হামাসের হাতে জিম্মি হন ২৫০ জন।

এই হামলার প্রতিশোধ হিসেবে সেদিনই গাজার বিরুদ্ধে নজিরবিহীন ও নির্বিচার বিমানহামলা শুরু করে ইসরায়েল। পরবর্তীতে স্থলবাহিনীও এতে যোগ দেয়। গত ৭ মাসে ফিলিস্তিনি নিহতের সংখ্যা অন্তত ৩৪ হাজার ৪৫৪ তে দাঁড়িয়েছে, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

Comments

The Daily Star  | English

Those involved in Ijtema ground deaths won't be spared: home adviser

The home adviser met with both factions of Tabligh Jamaat today at the Secretariat

1h ago