আবারও গাজার আল-শিফা হাসপাতালে ইসরায়েলের সামরিক অভিযান

গাজার আল-শিফা হাসপাতালে চলছে ইসরায়েলি সামরিক অভিযান। ফাইল ছবি: এএফপি (ডিসেম্বর ২০২৩)
গাজার আল-শিফা হাসপাতালে চলছে ইসরায়েলি সামরিক অভিযান। ফাইল ছবি: এএফপি (ডিসেম্বর ২০২৩)

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল-শিফাকে ঘিরে সামরিক অভিযান শুরু করেছে। যার ফলে এই হাসপাতালে আশ্রয় নেওয়া হাজারো বাস্তুচ্যুত গাজাবাসীর নিরাপত্তা নিয়ে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ। 

আজ সোমবার এই অভিযান শুরু হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে এ বিষয়টি জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

সামরিক বাহিনীর আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'ইসরায়েলি সেনারা এখন শিফা হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় একটি সুনির্দিষ্ট অভিযান চালাচ্ছে।'

বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, 'এই হাসপাতালকে হামাসের শীর্ষ সন্ত্রাসীরা তাদের কার্যক্রম চালানোর জন্য ব্যবহার করছেন—এমন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এই অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।

গাজা শহরের প্রত্যক্ষদর্শীরা এএফপিকে জানায়, তারা বেশ কিছু ট্যাংককে হাসপাতাল ঘিরে ফেলতে দেখেছেন।

শনিবার স্যাটেলাইট থেকে ধারণকৃত আল-শিফা হাসপাতাল ও আশপাশের এলাকা। ছবি: ম্যাক্সার স্যাটেলাইট ও এপির সৌজন্যে

তারা হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় বিমান হামলার কথাও উল্লেখ করেছেন।

গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই হাসপাতালে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ ইসরায়েলি হামলার মুখে আটকা পড়েছেন। এর মধ্যে আছেন বাস্তুচ্যুত বেসামরিক মানুষ, আহত রোগী ও চিকিৎসাকর্মিরা।

এর আগে গত নভেম্বরেও আল-শিফায় অভিযান চালিয়েছিল ইসরায়েল। সে সময় সারা বিশ্ব এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছিল।

ইসরায়েল বারবার অভিযোগ করেছে, হাসপাতাল ও অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র থেকে হামাস সামরিক কার্যক্রম পরিচালনা করে। হামাস এই দাবি অস্বীকার করেছে।

গাজায় অবস্থিত হামাসের গণমাধ্যম কার্যালয় এই অভিযানের প্রতি নিন্দা জানিয়ে বলেছে, 'আল শিফা হাসপাতালে ট্যাংক, ড্রোন ও অন্যান্য অস্ত্র নিয়ে আসা এবং হাসপাতালের ভেতর গুলি চালানো যুদ্ধাপরাধের শামিল।'

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাদেরকে হাসপাতালের কাছে বসবাসকারী মানুষ ফোন করে জানিয়েছেন কয়েক ডজন মানুষ ইতোমধ্যে হতাহত হয়েছেন।

মন্ত্রণালয় আরও জানায়, 'বন্দুকের গুলি ও কামানের গোলার তীব্রতায় কেউ আহতদের হাসপাতালের ভেতর নিয়ে যেতে পারছে না।'

চলমান যুদ্ধ শুরুর পর বেশ কয়েকবার গাজার বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রকে ঘিরে হামলা ও অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েল।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, 'সেনাদেরকে সতর্কতার সঙ্গে অভিযানে অংশ নিতে বলা হয়েছে এবং রোগী, বেসামরিক ব্যক্তি, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যসেবা কর্মী ও চিকিৎসা উপকরণের যাতে কোন ক্ষতি না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে বলা হয়েছে।'

একজন বাস্তুচ্যুত মানুষ হাসপাতালের ভেতর রান্না করার চেষ্টা করছেন। ছবি: এএফপি
একজন বাস্তুচ্যুত মানুষ হাসপাতালের ভেতর রান্না করার চেষ্টা করছেন। ছবি: এএফপি

বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, অভিযানে আরবি ভাষাভাষী মানুষদের মোতায়েন করা হয়েছে, যাতে তারা হাসপাতালে থাকা রোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন।

'রোগী ও চিকিৎসকদের হাসপাতাল ছেড়ে যাওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই', যোগ করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

আল-শিফায় ১৫ নভেম্বরের অভিযান শেষে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী অস্ত্র ও অন্যান্য সামরিক উপকরণ খুঁজে পাওয়ার দাবি জানালেও তা অস্বীকার করে হামাস।

হাসপাতালের বেজমেন্টে ৫৫ মিটার দীর্ঘ সুরঙ্গ খুঁজে পাওয়ারও দাবি জানায় ইসরায়েল। তারা কিছু ফুটেজ দেখিয়ে দাবি করে, সেখানে জিম্মিদের আটকে রাখা হয়েছিল। এসব দাবিও নাকচ করেছে হামাস।

জাতিসংঘ জানিয়েছে, এই যুদ্ধ শুরুর পর এখন পর্যন্ত গাজা উপত্যকার ১৫৫টি স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস। এতে এক হাজার ২০০ জন নিহত হন এবং হামাসের হাতে জিম্মি হন প্রায় ২৫৩ জন মানুষ। জিম্মিদের মধ্যে ১৩০ জন এখনো গাজায় আছেন এবং ৩১ জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

এ ঘটনার পর থেকে হামাসকে নির্মূলের লক্ষ্যে গাজায় প্রায় ছয় মাস ধরে সর্বাত্মক ও নিরবচ্ছিন্ন হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৩১ হাজার ৬৪৫ জন মানুষ। নিহতের মধ্যে ১৩ হাজার শিশু রয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। বাকিদের মধ্যে নারীর সংখ্যা বেশি।

আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৭২ হাজার ৮৮৯ জন মানুষ।

Comments

The Daily Star  | English

July uprising injured vow to continue protest at NITOR

Demand key advisers meet them to listen to their demands for better treatment

2h ago