ইসরায়েলের কঠোর সমালোচনা করে গাজায় তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান কমলা হ্যারিসের

১৯৬৫ সালে আলাবামায় নাগরিক অধিকার আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশের সহিংস দমন-পীড়নের ঘটনা স্মরণে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন কমলা হ্যারিস। ছবি: রয়টার্স
১৯৬৫ সালে আলাবামায় নাগরিক অধিকার আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশের সহিংস দমন-পীড়নের ঘটনা স্মরণে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন কমলা হ্যারিস। ছবি: রয়টার্স

গাজায় তাৎক্ষণিকভাবে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। একইসঙ্গে তিনি ইসরায়েলের কঠোর সমালোচনা করেছেন, যা খুবই বিরল।

আজ সোমবার এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা।

রোববার কমলা বলেন, 'গাজায় মানুষ যে মাত্রার দুর্দশার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তাতে অবশ্যই তাৎক্ষণিকভাবে যুদ্ধবিরতি চালু করা উচিত এবং এর সময়সীমা অন্তত ছয় সপ্তাহ হওয়া উচিত, যা এ মুহূর্তে আলোচনার টেবিলে আছে।'

'এতে জিম্মিরা মুক্তি পাবে এবং সেখানে (গাজায়( উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ত্রাণ পৌঁছানো যাবে', যোগ করেন তিনি।

কমলা হ্যারিস আরও জানান, ইসরায়েলকে ত্রাণ সরবরাহ নিশ্চিত করতে আরও কাজ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও জানান, তাদেরকে সীমান্তে আরও নতুন প্রবেশপথ সৃষ্টি করতে হবে এবং 'অপ্রয়োজনীয় প্রতিবন্ধকতা' সৃষ্টি না করার অঙ্গীকার নিতে হবে।

বিশ্লেষকরা কমলার এসব বক্তব্যকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তার কাছ থেকে আসা সবচেয়ে কড়া সমালোচনা হিসেবে বিবেচনা করছেন। 

গাজা-ইসরায়েল সীমান্তে ইসরায়েলি ট্যাংক। ছবি: রয়টার্স
গাজা-ইসরায়েল সীমান্তে ইসরায়েলি ট্যাংক। ছবি: রয়টার্স

১৯৬৫ সালে আলাবামায় নাগরিক অধিকার আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশের সহিংস দমন-পীড়নের ঘটনা স্মরণে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার সময় কমলা আরও বলেন, 'গাজার মানুষ না খেয়ে আছে। তারা অমানবিক পরিবেশে আছে এবং আমাদের সবার মধ্যে যে মানবিক অনুভূতিগুলো রয়েছে, তা আমাদেরকে বাধ্য করছে যথাযথ উদ্যোগ নিতে।'

'ইসরায়েলি সরকারকে ত্রাণের সরবরাহ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়ানোর জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো অজুহাত গ্রহণযোগ্য নয়।'

বৃহস্পতিবার গাজা শহরে ত্রাণ সংগ্রহ করতে যেয়ে ১০০ ফিলিস্তিনি নিহতের ঘটনা প্রসঙ্গে কমলা মন্তব্য করেন, 'অনেক বেশি নিরীহ ফিলিস্তিনিদের হত্যা করা হয়েছে।'

গাজায় প্রবেশ করছে ত্রাণবাহী ট্রাক। ছবি: রয়টার্স
গাজায় প্রবেশ করছে ত্রাণবাহী ট্রাক। ছবি: রয়টার্স

'এই ভয়াবহ ও মর্মান্তিক ঘটনায় নিহতদের জন্য আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে', যোগ করেন তিনি।

কমলা হ্যারিস আরও জানান, হামাসের উচিত হবে যুদ্ধবিরতির খসড়া চুক্তির শর্তগুলো মেনে নেওয়া।

মার্কিন কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, ইসরায়েল এই চুক্তির বেশিরভাগ শর্তে রাজি হয়েছে।

তিনি বলেন, 'হামাসকে এই চুক্তি মেনে নিতে হবে। আসুন আমরা যুদ্ধবিরতিতে যাই। জিম্মিদের তাদের পরিবারের কাছে ফিরে যেতে দেই। এবং আমরা গাজার মানুষকে এখুনি দুর্দশা থেকে রেহাই দেই।'

কমলা এমন সময়য় এই বক্তব্য দিলেন যখন ডেমোক্র্যাট জো বাইডেন নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বামপন্থী ভোটারদের কাছ থেকে ইসরায়েলকে সমর্থন দেওয়া প্রসঙ্গে চাপের মুখে আছেন।

ডেমোক্র্যাটরা উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, চলমান যুদ্ধে বাইডেনের ভূমিকা দলের ক্ষতির কারণ হতে পারে। বিশেষত মিশিগান অঙ্গরাজ্যে।

মিশিগানের প্রাইমারিতে এক লাখেরও বেশি ডেমোক্র্যাট নেতা-কর্মী ইসরায়েলকে সাহায্য করার বাইডেনকে ভোট না দিয়ে 'আনকমিটেড' বিকল্পে ভোট দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে।

দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরে ইসরায়েলি বিমানহামলার পর ধ্বংসযজ্ঞ পরিদর্শন করছেন ফিলিস্তিনিরা। ছবি: রয়টার্স
দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরে ইসরায়েলি বিমানহামলার পর ধ্বংসযজ্ঞ পরিদর্শন করছেন ফিলিস্তিনিরা। ছবি: রয়টার্স

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস। এতে এক হাজার ২০০ জন নিহত হন এবং হামাসের হাতে জিম্মি হন প্রায় ২৫৩ জন মানুষ। জিম্মিদের মধ্যে ১৩০ জন এখনো গাজায় আছেন এবং ৩১ জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

এ ঘটনার পর থেকে প্রায় হামাসকে নির্মূলের লক্ষ্যে গাজায় পাঁচ মাস ধরে সর্বাত্মক ও নিরবচ্ছিন্ন হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। এই হামলায় নিহত অন্তত ৩০ হাজারে ৩২০ জন মানুষের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী নিহত শিশুর সংখ্যা প্রায় ১৩ হাজার ও নারীর সংখ্যা প্রায় আট হাজারের মতো। পাশাপাশি, আহত হয়েছেন অন্তত ৭১ হাজার ৫৩৩ জন।

মিশর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতাকারীরা ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি নিয়ে কাজ করছেন। তাদের আশাবাদ, ১০ বা ১১ মার্চ, অর্থাৎ, রমজান মাস শুরুর আগে থেকেই এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে।

সর্বশেষ তথ্য মতে, হামাসের সম্মতির অপেক্ষায় রয়েছে এই চুক্তি। ইসরায়েল চুক্তির শর্তগুলোতে নীতিগত সমর্থন জানিয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

How Chattogram built its economic legacy

Picture a crowded harbour where the salty seabreeze carries whispers of far-off lands, where merchants of all creed and caste haggle over silks and spices, and where towering ships of all varieties – Chinese junks, Arab dhows, and Portuguese carracks – sway gently in the waters of the Bay of Bengal.

13h ago