গাজার ১১ লাখ শিশুর জীবন ঝুঁকিতে: জাতিসংঘ

সর্বাত্মক ও নির্বিচার হামলায় গাজার বেশিরভাগ স্থাপনাকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে ইসরায়েল
দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরের এক বাড়িতে ইসরায়েলি বিমানহামলার পর ঘটনাস্থলে কৌতুহলী শিশুদের পদচারণা। ছবি: রয়টার্স (ডিসেম্বর , ২০২৩)
দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরের এক বাড়িতে ইসরায়েলি বিমানহামলার পর ঘটনাস্থলে কৌতুহলী শিশুদের পদচারণা। ছবি: রয়টার্স (ডিসেম্বর , ২০২৩)

জাতিসংঘ সতর্কবাণী দিয়েছে, তিন মাসের সংঘাতে গাজা উপত্যকার ফিলিস্তিনি জনপদ বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে এবং এই অঞ্চলের ১১ লাখ শিশুর জীবন ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। 

আজ শনিবার বার্তাসংস্থা এএফপি এই তথ্য জানিয়েছে।

এএফপির সংবাদদাতারা জানান, শনিবার সকালেও গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাহ'র ওপর ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত ছিল। এই শহরে উত্তর গাজা থেকে পালিয়ে আসা হাজারো ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছেন।

ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির সামনে বসে আছে ফিলিস্তিনি শিশুরা। ছবি: রয়টার্স (১৭ ডিসেম্বর)
ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির সামনে বসে আছে ফিলিস্তিনি শিশুরা। ছবি: রয়টার্স (১৭ ডিসেম্বর)

জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ সতর্ক করেছে, 'গাজার ১১ লাখ শিশুর জীবন ঝুঁকিতে আছে'।

এর পেছনে ক্রমশ তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে ওঠা সংঘাতের মুখোমুখি হওয়া, অপুষ্টিতে ভোগা ও জরুরি স্বাস্থ্যসেবা না পাওয়াকে মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে সংস্থাটি।

ইসরায়েলি হামলায় গাজার বেসামরিক মানুষরাই মূলত ভোগান্তিতে পড়ছেন। জাতিসংঘ আরও জানায়, এই অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে এবং নানা সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে পড়ে বড় আকারের মানবিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে।

গাজার কেন্দ্রে অবস্থিত বুরেজি রিফিউজি ক্যাম্প থেকে পালিয়ে রাফাহ এসেছেন ফিলিস্তিনি নাগরিক আবু মোহাম্মেদ (৬০)। তিনি এএফপিকে জানান, গাজার ভবিষ্যৎ 'অন্ধকারাচ্ছন্ন, হতাশাজনক ও খুবই জটিল'।

সর্বাত্মক ও নির্বিচার হামলায় গাজার বেশিরভাগ স্থাপনাকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে ইসরায়েল। এ পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের জরুরি মানবিক ত্রাণ বিষয়ক সমন্বয়ক মার্টিন গ্রিফিথ বলেন, 'গাজা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে'।

দক্ষিণ গাজার রাফাহ অঞ্চলে ফিলিস্তিনি শিশুরা এক দাতব্য লঙ্গরখানা থেকে বিনামূল্যে খাবার পেতে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ছবি: রয়টার্স (১৪ ডিসেম্বর)
দক্ষিণ গাজার রাফাহ অঞ্চলে ফিলিস্তিনি শিশুরা এক দাতব্য লঙ্গরখানা থেকে বিনামূল্যে খাবার পেতে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ছবি: রয়টার্স (১৪ ডিসেম্বর)

শুক্রবার ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি জানান, গাজা উপত্যকার উত্তর, দক্ষিণ ও কেন্দ্রের সব অংশে ইসরায়েলি বাহিনী যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।

বৈরুতে হামাসের এক শীর্ষ নেতা নিহত হওয়ার পর থেকে তারা লেবানন-ইসরায়েল সীমান্তে উচ্চ পর্যায়ের সতর্কাবস্থা বজায় রেখেছেন বলেও নিশ্চিত করেন হাগারি।

ইসরায়েল এই হামলার দায় না নিলেও যুক্তরাষ্ট্রের এক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা এএফপিকে জানান, ইসরায়েলই এই হামলাটি পরিচালিত করেছে।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে নজিরবিহীন ও অতর্কিত হামলা চালায় হামাস। এই হামলায় এক হাজার ১৪০ জন নিহত হন। হামাসের হাতে জিম্মি হন ২৫০ জন। ইসরায়েলের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, হামাসের হাতে এখনো ১৩২ জন আটক আছেন। জিম্মি অবস্থায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৪ জন। বাকিরা এক সপ্তাহব্যাপী যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় চুক্তির আওতায় মুক্তি পান।

রাফাহ অঞ্চলে ইসরায়েলি হামলায় আহত শিশুকে বহন করছেন এক ব্যক্তি। ছবি: এএফপি (১৪ ডিসেম্বর)
রাফাহ অঞ্চলে ইসরায়েলি হামলায় আহত শিশুকে বহন করছেন এক ব্যক্তি। ছবি: এএফপি (১৪ ডিসেম্বর)

হামাসের হামলার জবাবে ইসরায়েল টানা তিন মাস ধরে গাজায় নিরবচ্ছিন্নভাবে স্থল ও বিমানহামলা চালিয়ে যাচ্ছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে আল জাজিরার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই হামলায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ২২ হাজার ৬০০ ফিলিস্তিনি। তাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। নিহতদের মাঝে অন্তত নয় হাজার ৬০০ শিশু রয়েছে।

আহত হয়েছেন প্রায় ৫৭ হাজার ৯১০ জন, যার মধ্যে আট হাজার ৬৬৩ শিশুও রয়েছে। নিখোঁজ আছেন সাত হাজারেরও বেশি মানুষ।

অপরদিকে, অধিকৃত পশ্চিম তীরেও চলছে সংঘাত। ৭ অক্টোবরের পর সেখানে প্রাণ হারিয়েছেন ৩২৫ ও আহত হয়েছেন অন্তত তিন হাজার ৮০০ ফিলিস্তিনি।

 

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

10h ago