‘গাজায় নিরাপদ জায়গা বলে কিছু নেই’

ইসরায়েল-গাজা সীমান্তে ইসরায়েলের ট্যাংক। ছবি: এএফপি
ইসরায়েল-গাজা সীমান্তে ইসরায়েলের ট্যাংক। ছবি: এএফপি

ইসরায়েলের স্থল বাহিনী সারা গাজা উপত্যকা জুড়ে হামাসের যোদ্ধাদের সঙ্গে লড়ছেন। গতকালের হামলার ধরন থেকে বিশ্লেষকরা মত দিয়েছেন, দক্ষিণ গাজাতেও এখন পরিকল্পিত স্থল হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। যদিও এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনো আসেনি।

আজ সোমবার এই তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স।

এর আগে, ইসরায়েলি বাহিনী ফিলিস্তিনিদের উত্তর থেকে সরে দক্ষিণে যাওয়ার নির্দেশ দিলে অসংখ্য মানুষ তাদের সহায়-সম্বল ফেলে দক্ষিণ গাজায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। এখন সেই দক্ষিণ গাজাতেও বোমা হামলার পাশাপাশি স্থল বাহিনীর অভিযান শুরু হয়েছে।

লেবানন অবস্থানরত হামাস কর্মকর্তা ওসামা হামদান অভিযোগ করেন, ইসরায়েল ইচ্ছে করেই গাজার বেসামরিক নাগরিকদের উত্তর থেকে দক্ষিণে পাঠিয়ে এখন তাদেরকে ফাঁদে ফেলে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করেছে।

'ইসরায়েল দাবি করেছিল গাজা উপত্যকার দক্ষিণে নিরাপদ আশ্রয় পাওয়া যাবে এবং তারা বারবার নাগরিকদের সেখানে সরে যাওয়ার আহ্বান জানায়। এখন বোঝা যাচ্ছে এটা একটা ফাঁদ ছিল। তারা পরিকল্পিতভাবে নিরস্ত্র বেসামরিক ও বাস্তুচ্যুত মানুষদের দক্ষিণে এনে নির্বিচারে হত্যা করছে', যোগ করেন তিনি।

হামদান সাংবাদিকদের বলেন, 'গাজায় নিরাপদ জায়গা বলে কিছু নেই'।

দক্ষিণ গাজায় হামলা

দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে হামাদ শহরে ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংস হয় এসব দালান। ছবি: রয়টার্স
দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে হামাদ শহরে ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংস হয় এসব দালান। ছবি: রয়টার্স

ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাস জানিয়েছে, তাদের যোদ্ধারা দক্ষিণ গাজার শহর খান ইউনিস থেকে দুই কিলোমিটার দূরত্বে ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে। 

বাসিন্দারা জানান, রোববার দিনভর ট্যাংকের গোলাবর্ষণের শব্দ পেয়েছেন।

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী শহরের কাছাকাছি কিছু জায়গা খালি করার নির্দেশ দিলেও দক্ষিণ গাজায় স্থল হামলার কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলেন, 'আইডিএফ পুরো গাজা উপত্যকাজুড়ে হামাসের নিয়ন্ত্রণকেন্দ্রগুলোর বিরুদ্ধে স্থল অভিযান চালাচ্ছে। আমরা তাদের (হামাস) মুখোমুখি হচ্ছি এবং হত্যা করছি'।

সোমবার হামাস জরুরি সেবাদাতাদের বরাত দিয়ে জানায়, গাজা শহরের উত্তরে তিন জরুরি সেবা কর্মী ইসরায়েলের হামলায় নিহত হয়েছেন।

লোহিত সাগরে হুতিদের হামলা

মার্কিন ডেস্ট্রয়ার জাহাজা ইউএসএস কার্নি হুতিদের ছোঁড়া ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করে। ফাইল ছবি: রয়টার্স
মার্কিন ডেস্ট্রয়ার জাহাজা ইউএসএস কার্নি হুতিদের ছোঁড়া ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করে। ফাইল ছবি: রয়টার্স

অপরদিকে, মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ জানিয়েছে ইয়েমেনের ইরান-সমর্থিত হুতি বাহিনী লোহিত সাগরে তিন বাণিজ্যিক জাহাজের ওপর হামলা চালায়। জাহাজগুলো সাহায্য চেয়ে বার্তা পাঠালে সেখানে মোতায়েন করা একটি মার্কিন ডেস্ট্রয়ার গুলি করে তিনটি ড্রোন ভূপাতিত করে। 

হুতি মুখপাত্র জানিয়েছেন, রোববার তাদের নৌবাহিনী লোহিত সাগরে দুইটি ইসরায়েলি বাণিজ্যিক জাহাজে সশস্ত্র ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে।

তবে ইসরায়েলের সামরিক মুখপাত্র জানান, এই দুই জাহাজের সঙ্গে ইসরায়েলের কোনো যোগসূত্র নেই।

শরণার্থী শিবিরে হামলা

আল জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে ধ্বংসযজ্ঞ। ফাইল ছবি: রয়টার্স
আল জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে ধ্বংসযজ্ঞ। ফাইল ছবি: রয়টার্স

গাজার উত্তরে অবস্থিত জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে বিমানহামলার তথ্য পাওয়া গেছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানান, ইসরায়েলি বিমান হামলায় বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছেন। 

দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস ও রাফাহ শহরেও বিমান ও কামানের গোলার হামলা অব্যাহত ছিল। বাসিন্দারা জানান, হাসপাতালগুলো আহত রোগীর চাপ সামলাতে পারছে না।

ইসরায়েলের সরকারী মুখপাত্র এইলন লেভি জানান, সামরিক বাহিনী শনি ও রোববারে খান ইউনিস এলাকায় ৪০০ লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে।

যুদ্ধবিরতি শেষে নতুন করে সহিংসতা

ইসরায়েল-গাজা সীমান্তে ইসরায়েলের কামান। ছবি: এএফপি
ইসরায়েল-গাজা সীমান্তে ইসরায়েলের কামান। ছবি: এএফপি

শুক্রবার সাত দিনের যুদ্ধবিরতি শেষে গাজায় নতুন করে সহিংসতা দেখা দিয়েছে। যুদ্ধবিরতির মাঝে ২৪০ ফিলিস্তিনি বন্দীর বিনিময়ে ১০৫ জিম্মিকে মুক্তি দেয় হামাস।

প্রায় দুই মাস ধরে চলমান এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত ১৫ হাজার ৫২৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে হামলা চালায় হামাস। এতে এক হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হন এবং হামাসের হাতে জিম্মি হন প্রায় ২৪০ জন। ইসরায়েল দাবি করছে, এখনো হামাসের কাছে ১৩৬ জন জিম্মি আটক আছেন।

হামাসের হামলার পর ইসরায়েল ইরান-সমর্থিত হামাসকে নির্মূল করার অঙ্গীকার করেছে।

Comments