যুদ্ধবিরতি নিয়ে ইসরায়েলের সিদ্ধান্তেই বাইডেনের একাত্মতা

এপেক সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ছবি: রয়টার্স
এপেক সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ছবি: রয়টার্স

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় মানবিক বিরতি এবং আরও বেশি মানবিক করিডর গঠনের প্রস্তাব গৃহীত হলেও এই প্রস্তাবকে 'বাস্তবসম্মত নয়' অভিহিত করে নাকচ করেছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে দেশটির প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র।

আজ বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এই তথ্য জানিয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, যুদ্ধে বিরতি দেওয়া হলেও হামাস ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামলা চালানো বন্ধ করবে না।

তিনি আরও জানান, ইসরায়েলি বাহিনী এখন নির্বিচার বোমাবর্ষণের কৌশল বদলে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে হামলা চালাচ্ছে।

জো বাইডেন জানান, ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব না মানার সিদ্ধান্তের সঙ্গে তিনি একমত এবং এ বিষয়টি নিয়ে তার কোনো দ্বিধা নেই। তিনি যুক্তি দেন, হামাস এখনো ইসরায়েলের প্রতি বড় হুমকি এবং ইসরায়েলের সেনারা বেসামরিক ব্যক্তিদের হত্যা না করার বিষয়টি নিয়ে সতর্ক।

আল-শিফা হাসপাতালে ইসরায়েলের হামলা চলার সময় রোগীদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। ছবি: রয়টার্স
আল-শিফা হাসপাতালে ইসরায়েলের হামলা চলার সময় রোগীদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। ছবি: রয়টার্স

সান ফ্রানসিসকোয় এপেক জোটের সম্মেলনের ফাঁকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এর সঙ্গে বৈঠক করেন বাইডেন। এই বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'হামাস ইতোমধ্যে হুমকি দিয়েছে যে তারা আগের মতো আগামীতেও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামলা অব্যাহত রাখবে, শিশুদের মাথা কেটে ফেলবে, নারী ও শিশুদের জীবন্ত পুড়িয়ে মারবে। যার ফলে, (যুদ্ধে বিরতি দিলেই) তারা চুপচাপ বসে থাকবে, এমন চিন্তা অবাস্তব।'

৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় এক হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হয়। সে সময় ইসরায়েল দাবি করে, হামাস যোদ্ধারা শিশুদের মাথা কেটে হত্যা করে। তবে এই দাবির কোনো সত্যতা এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

বাইডেন দাবি করেন, ইসরায়েল এখন আর 'নির্বিচার' বোমাবর্ষণ করছে না, বরং সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানছে। এই যুক্তির মাধ্যমে মার্কিন প্রেসিডেন্ট এক অর্থে স্বীকার করেছেন, গত প্রায় ৪০ দিন ইসরায়েল গাজার ওপর 'নির্বিচার হামলা' চালিয়েছে।

'সেখানে কার্পেট বোমাবর্ষণ চলছে না। এটা ভিন্ন। তারা (ইসরায়েলি বাহিনী) সুড়ঙ্গ ও হাসপাতালে গেছে। তারা হাসপাতালে ইনকিউবেটর নিয়ে গেছে এবং অন্যভাবে সেখানে অবস্থানরত মানুষদের সাহায্য করছে। আমাকে জানানো হয়েছে, হাসপাতালের নার্স ও অন্যান্য কর্মীদের কোনো আঘাত করা হয়নি। আগের নির্বিচার বোমাবর্ষণের পরিবর্তে এখন তারা ভিন্ন কৌশলে কাজ করছে', যোগ করেন বাইডেন।

বাইডেন আরও বলেন, 'ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী স্বীকার করেছে যে তাদের সতর্কতা অবলম্বনের বাধ্যবাধকতা আছে। এমন নয় যে তারা হাসপাতালে ঢুকে মানুষকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করছে।'

গাজায় কামানের গোলা ছুড়ছে ইসরায়েলি বাহিনী। ছবি: রয়টার্স
গাজায় কামানের গোলা ছুড়ছে ইসরায়েলি বাহিনী। ছবি: রয়টার্স

জো বাইডেন ইসরায়েলের সিদ্ধান্তের সঙ্গে এক প্রকার নিঃশর্ত সমর্থন জানিয়েছেন বলেই ভাবছেন বিশ্লেষকরা, যা সাম্প্রতিক সময়ে অন্যান্য মার্কিন কর্মকর্তাদের বক্তব্যের সঙ্গে কিছুটা হলেও সাংঘর্ষিক।

একাধিক জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তা ইসরায়েলকে সরাসরি অনুরোধ করেছে মানবিক আইন মেনে বেসামরিক ব্যক্তিদের সুরক্ষা দিতে।

বাইডেনের এই বক্তব্যে কয়েকজন বিশ্লেষক বলছেন, প্রশাসনের অন্যান্য সদস্যদের চেয়ে বাইডেন ইসরায়েলের প্রতি বেশি সহানুভূতিশীল।

এর আগে গাজায় মানবিক বিরতি এবং আরও বেশি মানবিক করিডর গঠনের আহ্বান জানিয়ে মাল্টার উত্থাপিত প্রস্তাবটি গতকাল বুধবার নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত হয়। নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের মধ্যে প্রস্তাবের পক্ষে ১২টি দেশ ভোট দেয়। এই প্রস্তাবে ভেটো না দিলেও ভোটদানে বিরত ছিল যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও রাশিয়া।

জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলি দূত গিলাড এরডান নিরাপত্তা পরিষদের সভায় দেওয়া ভাষণে বলেন, 'গাজায় চলমান যুদ্ধে মানবিক বিরতি এবং আরও বেশি মানবিক করিডর গঠনের আহ্বান জানিয়ে যে প্রস্তাবটি গৃহীত হয়েছে, তা বাস্তবসম্মত নয়।'

উত্তর গাজা থেকে পালিয়ে দক্ষিনে যাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। ছবি: রয়টার্স
উত্তর গাজা থেকে পালিয়ে দক্ষিনে যাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। ছবি: রয়টার্স

প্রস্তাবটি গৃহীত হওয়ার পর নিরাপত্তা পরিষদে দেওয়া ভাষণে এরডান বলেন, ইসরায়েল এ প্রস্তাব মানবে না। তার দাবি, গাজায় মানবিক পরিস্থিতির উন্নয়নে ইসরায়েল সাধ্যমতো সবকিছুই করছে।

এরডান বলেন, 'এ পরিষদ যে প্রস্তাব গ্রহণ করেছে, তা দুঃখজনকভাবে বাস্তবতা থেকে বিচ্যুত। এ পরিষদ এখনো গত ৭ অক্টোবর হামাসের চালানো হামলা নিয়ে নিন্দা জানাতে পারেনি। প্রস্তাবটিতে কেবল গাজার মানবিক পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কী কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হলো, তার উল্লেখ নেই।'

'আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার কথা ইসরায়েলকে মনে করিয়ে দিতে কোনো প্রস্তাবের প্রয়োজন নেই। ইসরায়েল সব সময় আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলে। জিম্মিদের দেশে ফিরিয়ে আনাটা ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকারের বিষয়। লক্ষ্য পূরণে ইসরায়েলের যা কিছু করার, তা করবে', যোগ করেন এরডান।

গাজার স্থল যুদ্ধে অংশ নিচ্ছেন ইসরায়েলি সেনা। ছবি: রয়টার্স
গাজার স্থল যুদ্ধে অংশ নিচ্ছেন ইসরায়েলি সেনা। ছবি: রয়টার্স

ইসরায়েলি দূত গিলাড এরডান এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে একটি পোস্ট দিয়েছেন। সেখানে তিনি নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত প্রস্তাবকে অর্থহীন বলে উল্লেখ করেন।

তার দাবি, হামাস এ প্রস্তাব মানা তো দূরের কথা, পড়েও দেখবে না।

সশস্ত্র ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাস ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায়। এতে প্রায় এক হাজার ২০০ জন নিহত হন বলে জানিয়েছে ইসরায়েল। যদিও শুরুতে এ সংখ্যা এক হাজার ৪০০ দাবি করেছিল দেশটি। ২০০ ব্যক্তিকে জিম্মি করে হামাস (শুরুতে সংখ্যাটি ২৪০ বলা হয়েছিল)।

হামাসের হামলার জবাবে ওই দিনই গাজায় প্রতিশোধমূলক ও নির্বিচার বিমানহামলা শুরু করে ইসরায়েল। কিছুদিন পর এতে যোগ দেয় স্থলবাহিনী। প্রায় ৪০ দিন ধরে চলমান হামলায় গাজায় ১১ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Govt to scale back foreign loan reliance

The government plans to scale back its dependence on foreign loans as it seeks to mitigate threats to external debt sustainability.

12h ago