২৪ অক্টোবর: গাজার রক্তাক্ত দিন

২৪ অক্টোবর গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলায় বিধ্বস্ত দালান থেকে মরদেহ উদ্ধার করছেন ফিলিস্তিনিরা। ছবি: এএফপি
২৪ অক্টোবর গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলায় বিধ্বস্ত দালান থেকে মরদেহ উদ্ধার করছেন ফিলিস্তিনিরা। ছবি: এএফপি

গাজায় প্রায় ১৮ দিন ধরে নির্বিচার বিমান হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। গতকাল দিনটি ছিল ফিলিস্তিনের সাম্প্রতিক ইতিহাসের সবচেয়ে রক্তাক্ত ও ভয়াবহ দিন। ইসরায়েলি হামলায় এক দিনেই নিহত হয়েছেন ৭০৪ ফিলিস্তিনি নাগরিক।

আজ বুধবার রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে।

গতকাল বিকেলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগের ২৪ ঘণ্টায় বোমার আঘাতে ৭০৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে শিশুর সংখ্যা ৩০৫।

ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৭ অক্টোবর ইসরায়েল–ফিলিস্তিন সংঘাত শুরুর পর থেকে এক দিনে এত মৃত্যু দেখেননি গাজার বাসিন্দারা। এর মধ্য দিয়ে গাজা উপত্যকায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৭৯১ জনে। নিহতদের মধ্যে দুই হাজার ৩৬০ জন শিশু। আর আহত হয়েছেন ১৬ হাজার ২৯৭ জন।

অপরদিকে হামাসের হামলায় নিজেদের এক হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ইসরায়েল।

ইসরায়েলের ভাষ্য, হামাসকে নির্মূল করতেই তারা অব্যাহত হামলা চালাচ্ছে।

২৪ অক্টোবর আবু মুরাদ ও তার পরিবারের সব সদস্য দক্ষিণ গাজায় ইসরায়েলই বিমান হামলায় প্রাণ হারালে তাদের জানাজা পড়ছেন প্রতিবেশীরা। ছবি: এএফপি
২৪ অক্টোবর আবু মুরাদ ও তার পরিবারের সব সদস্য দক্ষিণ গাজায় ইসরায়েলই বিমান হামলায় প্রাণ হারালে তাদের জানাজা পড়ছেন প্রতিবেশীরা। ছবি: এএফপি

তবে বাস্তব পরিস্থিতি ভিন্ন বলেই জানানো হয়েছে রয়টার্সের প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, গাজায় হামলা চালানোর ক্ষেত্রে ইসরায়েল কোনো বাছবিচার করছে না। অবিরাম বোমাবর্ষণে নিমেষে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে গাজার সব ধরনের স্থাপনা, যার মধ্যে হাসপাতাল, গির্জা, মসজিদ ও স্কুলও আছে।

২৪ অক্টোবর গাজার ৪০০ লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানোর বিষয়টি ইসরায়েল নিশ্চিত করেছে।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের প্রতিটি বোমা হামলার সঙ্গে সঙ্গে গাজার হাসপাতালগুলোতে আহতদের ভিড় বাড়ছে।

সরেজমিনে গাজার নাসের হাসপাতালে পরিদর্শন করে আল জাজিরার সাংবাদিক আবু ইশেবা জানান, সেখানে কর্তৃপক্ষ বিশেষ জরুরি উদ্যোগ নিয়েছে, যার অংশ হিসেবে 'প্রাণের ঝুঁকি নেই, কিন্তু আহত' এমন রোগীদের ছেড়ে দিয়ে গুরুতর আহতদের ভর্তি করানো হচ্ছে।

যাদেরকে রিলিজ দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে অনেকেরই চিকিৎসা পুরোপুরি শেষ হয়নি। তাদের জন্যও হাসপাতালে ভর্তি থাকা জরুরি ছিল। কিন্তু তাদের চেয়েও গুরুতর আহতদের জন্য বাধ্য হয়েই তাদের রিলিজ দিয়ে দিতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে গাজায় এক ভয়ংকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে এবং ক্রমশ পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে।

২৪ অক্টোবর হামলার পর গাজা উপত্যকার খান ইউনিস এলাকা। ছবি: এএফপি
২৪ অক্টোবর হামলার পর গাজা উপত্যকার খান ইউনিস এলাকা। ছবি: এএফপি

গাজার পাশাপাশি অধিকৃত পশ্চিম তীরেও অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েল। এ ছাড়া, ইসরায়েল-লেবানন সীমান্তে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধেও চলছে হামলা। অধিকৃত পশ্চিম তীরে মঙ্গলবার রাতভর অভিযান চালায় ইসরায়েল। এতে জেনিনে তিন ও কালকিয়ায় এক ফিলিস্তিনি নিহত হন।

৭ অক্টোবর থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত পশ্চিম তীরের ১০০ ফিলিস্তিনি ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এ সময়ের মাঝে এক ইসরায়েলি নিরাপত্তাকর্মী নিহতের কথা জানিয়েছে ইসরায়েল।

যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে ইসরায়েলকে গাজার বিরুদ্ধে স্থল-হামলা স্থগিত রাখার সুপারিশ করেছে। স্থল হামলা শুরু হলে ২২২ জিম্মিকে বের করে আনা জটিল হয়ে পড়বে বলে মত যুক্তরাষ্ট্রের।

২৪ অক্টোবরের হামলায় গাজার এই পেট্রোল পাম্প পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়। ছবি: এএফপি
২৪ অক্টোবরের হামলায় গাজার এই পেট্রোল পাম্প পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়। ছবি: এএফপি

হামাস এখন পর্যন্ত দুই মার্কিন নাগরিকসহ চার জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে।

ইসরায়েলকে স্থল হামলা শুরু করতে যুক্তরাষ্ট্র বাধা দিচ্ছে কি না, প্রশ্নের জবাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, 'ইসরায়েলিরা তাদের নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরাই নিচ্ছে।'

এ পরিস্থিতিতে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্যোগে রাশিয়ার সঙ্গে যোগ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রও। তবে তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে রয়েছে পার্থক্য।

জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি নাগরিকদের জন্য মানবিক সহায়তার দুইটি ভিন্ন পরিকল্পনা উপস্থাপন করে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া।

ওয়াশিংটন যুদ্ধ 'স্থগিতের' আহ্বান জানায়, যেটি যুদ্ধ বিরতির চেয়ে কম সময়ের ও অনানুষ্ঠানিক উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত।

ইসরায়েলের অব্যাহত হামলার মাঝে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন গাজার ফিলিস্তিনিরা। ছবি: এএফপি
ইসরায়েলের অব্যাহত হামলার মাঝে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন গাজার ফিলিস্তিনিরা। ছবি: এএফপি

অপরদিকে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে রুশ রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া বলেন, 'সারা বিশ্ব নিরাপত্তা পরিষদের কাছ থেকে দ্রুত ও নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির আহ্বান প্রত্যাশা করে।'

আরব রাষ্ট্রগুলোও এ ধরনের মানবিক যুদ্ধবিরতি ও গাজার ওপর নির্বিচার হামলা বন্ধের সিদ্ধান্তে সমর্থন জানাচ্ছে।

ইতোমধ্যে ইসরায়েলি সহিংসতার সমালোচনা করে তোপের মুখে পড়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।

তার মন্তব্যের নিন্দা জানিয়ে এর জেরে জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের ভিসা দেওয়াও বন্ধ করেছে ইসরায়েল।

 

Comments

The Daily Star  | English
CAAB pilot licence irregularities Bangladesh

Regulator repeatedly ignored red flags

Time after time, the internal safety department of the Civil Aviation Authority of Bangladesh uncovered irregularities in pilot licencing and raised concerns about aviation safety, only to be overridden by the civil aviation’s higher authorities.

12h ago