বিলিভ ইট অর নট

মানুষ স্পর্শ করলে মা পাখি কি ছানাকে পরিত্যাগ করে?

মানুষ স্পর্শ করলে মা পাখি কি ছানাকে পরিত্যাগ করে?
ছবি: সংগৃহীত

কোনো এক দুরন্ত কিশোর, ছুটে বেড়ায় তেপান্তর; দেখতে থাকে আশপাশের জগৎটাকে; গাছ, নদী, বিল, পাহাড়, আকাশে উড়তে থাকা পাখি। আশেপাশে পাখির ছোট ছানা দেখলেই হাতে নিয়ে আদর করতে চায় তার মন। কিন্তু আছে বড়দের সতর্কবাণী; পাখির ছানা ধরলে মা পাখিরা পেয়ে যায় মানুষের ঘ্রাণ, তখন তারা বাচ্চাটাকে পরিত্যাগ করে। তাই সাবধান, পাখির ছানাদের হাতে নিতে হয় না! 

কিন্তু এই বিশ্বাস বা সংস্কারটি কি আদতে সত্যি? বলা হয়ে থাকে, মা পাখিরা মানুষের ঘ্রাণ পেলে শঙ্কিত হয়ে পড়ে। মানুষ শিকার করতে পারে তাদের; এই সম্ভাবনা থেকে নিজ সন্তানকে পরিত্যাগ করে তারা, নিরাপদে রাখতে চায় বাকিদের। 

রিপলি'স বিলিভ ইট অর নটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সত্যি বলতে, প্রচলিত এই বিশ্বাস কিন্তু ঠিক নয়। পাখিরা অনুভব করতে পারে না মানুষের ঘ্রাণ। শুধু তাই নয়, পাখিদের ঘ্রাণশক্তি সাধারণত কুকুরের মতো অমন শক্তিশালীও নয়। 

কিছু পাখি আছে যাদের ঘ্রাণশক্তি ভালো। তুর্কি শকুনেরা যেমন, বহু দূর থেকে পেয়ে যায় লাশের গন্ধ। কিন্তু বেশিরভাগ পাখির ঘ্রাণেন্দ্রিয় তেমন শক্তিশালী নয়। তাই ঘ্রাণের ওপর তারা এতটা নির্ভরশীল হয় না। 

প্রচলিত এই বিশ্বাসের সঙ্গে বিরোধ দেখা যায় প্রকৃতির। পাখি ছাড়াও অন্যান্য প্রাণীর ছানারাও মানুষের সংস্পর্শে আসে। কিছু ব্যতিক্রম বাদে, তাদের কাউকেই মায়েরা পরিত্যাগ করে না। বরং অলট্রুইজম বা পরার্থপরতার সার্থক উদাহরণ দেখা যায় পায়রাসহ অনেক পাখিদের ক্ষেত্রে। মা পাখিরা সন্তানদের খাবার চিবিয়ে নরম করে দেয়, যা মাতৃদুগ্ধের সমতুল্য। 

কাজেই, মা পাখিরা সন্তানকে মানুষের ঘ্রাণ পেয়ে পরিত্যাগ করে না। একান্তই সংক্রামক রোগ বা এমন কিছুর প্রাদুর্ভাব না হলে সন্তানকে ফেলে যাবার প্রশ্নই ওঠে না। 

মূলত পাখির বাচ্চা ধরতে গিয়ে শিশু-কিশোররা যেন অতি কৌতূহলে ক্ষতিকর কোনো কিছু করে না বসে, তাই এমন সাবধানবাণী দেওয়া হয় তাদের। তাই পাখির নীড়ের বাইরে কোনো ছানাকে দেখলে মনে করবেন না তাকে ফেলে যাওয়া হয়েছে। 

মূলত উড়তে শেখার আগে প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে পাখিরা মাটিতে এসে বসে। তাই মাটিতে কোনো পাখির ছানাকে বেড়াতে দেখলেই তাকে ধরতে যাবেন না। হতে পারে, সে ওড়ার অভ্যাস করছে। আর যদি গায়ে পালক দেখেন, তবে বুঝবেন ওড়ার জন্য সে তৈরি। এখন শুধু দরকার কিছু অনুশীলন। 

তবে যদি দেখেন, কোনো পাখি অসুস্থ কিংবা ওড়ার চেষ্টা করেও পারছে না, সে ক্ষেত্রে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারেন। অস্বাভাবিক কিছু না হলে খুব আলতো করে হাতে তুলে নীড়ে রেখে দেবেন। একদম ভয় পাবেন না, মানুষ ছুঁয়েছে বলে মা পাখি তার ছানাকে পরিত্যাগ করবে না। 

তথ্যসূত্র: রিপলি'স বিলিভ ইট অর নট
গ্রন্থনা: মাহমুদ নেওয়াজ জয়

Comments

The Daily Star  | English
price hike of essential commodities in Bangladesh

Essential commodities: Price spiral hits fixed-income families hard

Supply chain experts and consumer rights activists blame the absence of consistent market monitoring, dwindling supply of winter vegetables, and the end of VAT exemptions granted during Ramadan.

13h ago