দুর্গাপূজা উদযাপনে প্রস্তুত চট্টগ্রাম

বাঙালি হিন্দুদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা আগামীকাল বুধবার থেকে শুরু। বন্দরনগরী চট্টগ্রামে ইতোমধ্যে পূজা উদযাপনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
নগরীর একটি ওয়ার্কশপে প্রতিমার কাজ করছেন এক কারিগর। ছবি: রাজীব রায়হান/স্টার

বাঙালি হিন্দুদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা আগামীকাল বুধবার থেকে শুরু। বন্দরনগরী চট্টগ্রামে ইতোমধ্যে পূজা উদযাপনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।

ঐতিহ্যগতভাবে দুর্গাপূজা উপলক্ষে নতুন পোশাক কেনা হয়। পরিবার ও প্রিয়জনদের উপহার দেওয়া হয় নতুন পোশাক। নগরী ও উপজেলার শপিংমলগুলোতে গত কয়েকদিন ধরে মাঝরাত পর্যন্ত ক্রেতাদের ভিড় দেখা যাচ্ছে। 

রাজশ্রী দত্তকে শহরের টেরি বাজারের একটি শপিং মলে কেনাকাটা করতে দেখা যায় গতকাল। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রতি বছর পরিবারের সবার জন্য এবং বাবা-মা ও ভাইবোনের জন্য পোশাক কিনেছি।'

নগরীর অ্যাপোলো শপিং সেন্টারের নওফা ফ্যাশন বুটিকসের স্বত্বাধিকারী সেলিম জাহাঙ্গীর ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে দোকানে বিক্রি বাড়তে শুরু করেছে।'

নগরীর একটি ওয়ার্কশপে প্রতিমার কাজ করছেন এক কারিগর। ছবি: রাজীব রায়হান/স্টার

যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি নিতাই প্রসাদ ঘোষ বলেন, 'নগরী ও উপজেলাগুলোতে দুর্গাপূজা উদযাপনের জন্য সব প্রস্তুতি শেষ। এ বছর জেলায় (শহর ও ১৫টি উপজেলা) মোট ২ হাজার ১২২টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপিত হবে।'

গত বছর জেলায় মোট ২ হাজার ১৯০টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপিত হয়েছিল বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

এ বছর মণ্ডপের সংখ্যা কেন কমেছে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক সভাপতি অমৃত লাল দে বলেন, 'আর্থিক সমস্যার কারণে অনেকেই নিজেরা মণ্ডপ করে পূজা উদযাপন করতে পারছেন না। এছাড়া মণ্ডপে অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কায় অনেকেই ভয়ে আছেন।'

জানতে চাইলে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, 'উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গাপূজা উদযাপনের জন্য চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে। প্রতি বছরের মতো এবারও জেলায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য, উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপিত হবে। অন্তর্বর্তী সরকার এ বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে।'

এ বছর দুর্গোত্সব শুরু হবে ৯ অক্টোবর এবং ১৩ অক্টোবর বিসর্জন। 

বন্দরনগরীর কারিগরদের দেখা গেছে প্রতিমার চূড়ান্ত রূপ তারা ব্যস্ত সময় পার করছেন। তাদের কেউ কেউ বিভিন্ন মণ্ডপে কাজ করেন, সেখানে তারা চুক্তি অনুযায়ী প্রতিমা তৈরি করে থাকেন।
   
নগরীর চট্টেশ্বরী রোড এলাকার প্রতিমালয় শিব দুর্গা মৃৎ শিল্পালয়ের প্রধান কারিগর পরেশ পাল। গত পরশু তার কর্মশালায় গিয়ে দেখা যায়, তিনি দেবী দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক ও গণেশের প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন।

পরেশ ডেইলি স্টারকে জানান, দুর্গাপূজার জন্য এক সেট প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ করতে ৮-১০ দিন সময় লাগে। তিনি বলেন, 'আমার নেতৃত্বে ৬ সদস্যের একটি দল প্রতিমার কাজ করে।'

পরেশ জানান, প্রতি সেট প্রতিমা তৈরির জন্য তিনি ৩৫-৬৫ হাজার টাকা নিয়ে থাকেন। তিনি বলেন, 'প্রতিমার নকশার ওপর খরচ নির্ভর করে। ওয়ার্কশপে কাজের পাশাপাশি আমি চুক্তিতে বিভিন্ন মণ্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজও করি।'

পরেশ জানান, ১৩ বছর নগরীর একটি ওয়ার্কশপে জুনিয়র কারিগর হিসেবে কাজ করার পর গত ৫ বছর আগে তিনি তার নিজের দল তৈরি করেন। 'প্রতি বছর আমার দল দুর্গাপূজার সময় গড়ে ১২ সেট প্রতিমা তৈরি করে,' বলেন তিনি।

পরেশের মতো বন্দরনগরীর সদরঘাট কালীবাড়ি, দেওয়ানজী পুকুর পাড়, বোস ব্রাদার্স লেন, হাজারী লেন, পাথরঘাটা ও নালাপাড়া এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রতিমা গড়ার বেশ কয়েকটি ওয়ার্কশপ আছে। এসব ওয়ার্কশপগুলোর বংশ পরম্পরায় প্রতিমা তৈরির ঐতিহ্য রয়েছে। 

কারিগরদের মতে, প্রতিমা স্থাপনের সূক্ষ্ম কারুকাজ শুরু হয় বাঁশ ও খড় ব্যবহার করে কাঠামো তৈরির মাধ্যমে। এই কাঠামোর গায়ে কাদামাটি লেপা হয় এবং পরে আকৃতির জন্য পালিশ করা হয়। 
কাদামাটি শুকিয়ে গেলে প্রতিমা রঙ করা হয় এবং নিখুঁত করতে ডিটেইলিং করা হয়।

Comments

The Daily Star  | English
Awami League leader Matia Chowdhury (1942-2024)

Matia Chowdhury no more

She breathed her last at 12:37pm at Evercare Hospital where she was undergoing treatment

2h ago