চট্টগ্রামে ৫ মাস ধরে ইপিআই কর্মসূচির গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি টিকা সরবরাহ বন্ধ

পাঁচ মাস ধরে ইপিআই কর্মসূচির গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি টিকা সরবরাহ বন্ধ থাকায় সময়মতো টিকা দেওয়া যাচ্ছে না চট্টগ্রামের হাজারো নবজাতক শিশুকে।

অভিভাবকরা তাদের নবজাতকদের নিয়ে প্রতিদিন নগরী ও উপজেলার বিভিন্ন টিকাকেন্দ্রে যাচ্ছেন। কিন্তু, গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি টিকা না দিয়েই তাদের ফিরতে হচ্ছে বলে সূত্র জানায়।

নগরীর হালিশহর এলাকার বাসিন্দা আকমল হোসেন পাঁচ মাস ধরে তার নবজাতক কন্যাকে পেন্টাভ্যালেন্ট টিকার তৃতীয় ডোজ এবং নিউমোকক্কাল কনজুগেট ভ্যাকসিনের (পিসিভি) দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার জন্য ঘুরছেন।

আকমল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত বছরের নভেম্বরে আমার মেয়ের জন্ম। তখন ইপিআই প্রোগ্রামের সবগুলো টিকার প্রথম ডোজ নিতে কোনো  সমস্যা হয়নি।'

তিনি 'তবে, সমস্যা শুরু হয় জানুয়ারি থেকে, যখন আমার বাচ্চাকে টিকার দ্বিতীয় ডোজ দিতে নিয়ে যাই। বাসার পাশের যে টিকাকেন্দ্রে যাই, সেখানে পিসিভির সরবরাহ না থাকায় বাচ্চাকে শুধু পেন্টাভ্যালেন্টের দ্বিতীয় ডোজ দিয়ে চলে আসি। এরপর আরও পাঁচটি টিকাকেন্দ্রে গিয়েও কোনোটিতেই পিসিভি পাইনি।'

তিনি আরও বলেন, 'স্বাস্থ্যকর্মীরা আমাকে কয়েকদিন পর কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য বলেন এবং সেই অনুযায়ী গিয়েও পিসিভির দ্বিতীয় ডোজ পাইনি।'

'এরপর তৃতীয় মাসে অবস্থা আরও খারাপ হয়। কোনো টিকাকেন্দ্রে পেন্টাভ্যালেন্ট ভ্যাকসিন এবং পিসিভির সরবরাহ ছিল না,' যোগ করেন তিনি।

উদ্বিগ্ন ও শঙ্কিত আকমল বলেন, 'আমার পাঁচ মাস বয়সী বাচ্চাকে এখনো পেন্টাভ্যালেন্ট ভ্যাকসিনের তৃতীয় ডোজ এবং পিসিভির দ্বিতীয় ডোজ দিতে পারিনি। টিকার ডোজ মিস হলে তার কি পর্যাপ্ত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হবে?'

একই কথা বলেন নগরীর সদরঘাট এলাকার বাসিন্দা শম্পা চক্রবর্তী। তার সন্তান ফেব্রুয়ারিতে জন্ম নিলেও প্রথম ডোজ পেন্টাভ্যালেন্ট টিকা এবং পিসিভি এখনো দিতে পারেননি।

তিনি বলেন, 'আমি জানি না আমার বাচ্চার কী হবে। টিকাকেন্দ্রের স্বাস্থ্যকর্মীরা দিনের পর দিন শুধু আশ্বাস দিচ্ছে যে টিকা আসবে।'

'আমার বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হবে কি না, এ নিয়ে চিন্তিত,' যোগ করেন তিনি।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, সময়মতো নবজাতকদের টিকা না দিলে বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি না হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ডা. বসনা মুহুরী বলেন, 'নবজাতকের কিছু প্রাণঘাতী রোগ প্রতিরোধের জন্য ইপিআইতে নির্ধারিত টিকাগুলো সময়মতো দেওয়া উচিত।'

তিনি বলেন, 'বাংলাদেশে আমরা এসব টিকার প্রতিটি ডোজের মধ্যে কমপক্ষে ২৮ দিনের বিরতি রাখতে বলি। কিন্তু আমেরিকাসহ উন্নত দেশগুলোতে ডোজগুলোর মধ্যে দুই মাসের বিরতি রাখা হয়। তাই, আমাদের দেশেও ডোজগুলোর মধ্যে দুই মাসের বিরতি হলেও কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না। কিন্তু বিরতি যদি দুই মাসের বেশি হয়, তাহলে শিশুর মধ্যে ওইসব রোগের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি না হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়।'

'সম্প্রতি আমার চেম্বারে এমন প্রচুর শিশু পাচ্ছি, যারা ইপিএই থেকে টিকাগুলোর ডোজ সঠিক সময়ে নিতে পারছে না। অভিভাবকরা বলছেন, টিকাকেন্দ্রে সরবরাহের ঘাটতি থাকায় বাচ্চাদের সময়মতো টিকা দিতে পারছেন না,' বলেন ডা. বাসনা।

যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ইমাম হোসেন রানা বলেন, 'নগরীর টিকাকেন্দ্রগুলো চসিক পরিচালনা করে। টিকা সরবরাহের ঘাটতির কারণে বর্তমানে আমরা কিছু সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি।'

তিনি বলেন, 'চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন অফিস থেকে আমরা টিকা পাই। কিন্তু, ফেব্রুয়ারি থেকে পেন্টাভ্যালেন্ট টিকা ও পিসিভি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিভিল সার্জন অফিসের কর্মকর্তারা বলেছেন যে সারা দেশে ভ্যাকসিনের ঘাটতি রয়েছে। আমরা জানতে পেরেছি, ইপিআই প্রোগ্রামের যেসব টিকা সরকার ক্রয় করে, সেসবের কোনো ঘটতি নেই। তবে গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (গাভি) যেসব টিকা বিনামূল্যে দেয়, সেগুলোর ঘাটতি রয়েছে।'

'সিভিল সার্জন আমাকে আশ্বস্ত করেছেন যে চট্টগ্রামের জন্য কিছু টিকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এবং সেগুলো আজ (বৃহস্পতিবার) চসিককে দেওয়া হবে। এগুলো হাতে পেলে শনিবার থেকেই আবারও টিকাদান কার্যক্রম শুরু করবো,' যোগ করেন তিনি।

এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াস চৌধুরী জানান, নিয়োগ পরীক্ষার দায়িত্বে থাকায় তিনি আগামী শনিবার পর্যন্ত কারো সঙ্গে কোনো বিষয়ে কথা বলবেন না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তিনি ফোন না ধরায় এই ব্যাপারে তার বক্তব্য জানা যায়নি।

Comments

The Daily Star  | English

Govt publishes gazette of 1,558 injured July fighters

Of them, 210 have been enlisted in the critically injured "B" category, while the rest fall under the "C" category of injured fighters

1h ago