‘কম দামে ভালো জুতা’ পেতে আগ্রাবাদে আসেন তারা

আগ্রাবাদ-জুতার-বাজার
‘কম দামে ভালো জুতা’ পেতে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকায় ফুটপাতে অস্থায়ী জুতার দোকানে আসেন সাধারণ মানুষ। ছবি: স্টার

এক জোড়া মানসম্মত জুতা কিনতে আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকায় এসেছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী শাহেদুল আজম। আগ্রাবাদ চৌরাস্তায় অভিজাত শপিং মলে যাওয়ার পরিবর্তে তাকে দেখা যয় ওই এলাকার ফুটপাত ধরে হেঁটে যতে। প্রায় সব সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের আঞ্চলিক কর্পোরেট অফিস এই এলাকায় বলে একে 'ব্যাংক পাড়া'ও বলে।

ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাওয়ার এক পর্যায়ে তিনি প্রত্যাশিত জায়গা পেয়ে যান। এটি ফুটপাতে জুতা বিক্রির এক 'ভাসমান' বাজার।

ফুটপাতের ২ পাশে শতাধিক ব্যবসায়ী অস্থায়ী জুতার স্টলে পসরা সাজিয়ে বসেছেন।

শাহেদুল তার বন্ধুর কাছ থেকে শুনেছিলেন যে, ওই এলাকায় 'কম দামে ভালো জুতা' বিক্রি হয়। তাই তিনি নিজের জন্য এক জোড়া জুতা কিনতে সেখানে গিয়েছিলেন।

গত সোমবার সকাল ১১টার দিকে শাহেদুলকে একটি স্টলে জুতা পছন্দ করতে দেখা যায়। দাম জানতে চাইলে বিক্রেতা আড়াই হাজার টাকা দাবি করেন। শাহেদুল দর কষাকষি করে জুতা জোড়ার জন্য দেড় হাজার টাকা দিতে চান। শেষ পর্যন্ত এক হাজার ৭০০ টাকা দিয়ে তিনি জুতা জোড়া কিনেন।

আগ্রাবাদ-জুতার-বাজার
চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকায় ফুটপাতে অস্থায়ী জুতার দোকান। ছবি: স্টার

শাহেদুল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আগে কখনো এখান থেকে জুতা কিনিনি। বন্ধুরা বলেছে যে, তারা এখানে কম দামে মানসম্পন্ন জুতা পেয়েছেন। তাই আমি আজ এসেছি।'

সেখানে জুতা কিনতে এসেছিলেন স্কুলশিক্ষক তাপস মল্লিক। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রায় ১০ বছর ধরে এখান থেকে জুতা কিনছি। আমি এর নিয়মিত গ্রাহক।'

'এখান থেকে জুতা কেনার ঝুঁকিও আছে,' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'অনেকে স্থানীয়ভাবে তৈরি জুতায় নামকরা ব্র্যান্ডের লোগো বা স্টিকার লাগিয়ে বিক্রি করেন। তবে আসল ব্র্যান্ডের কিছু জুতাও এখানে আছে। কোনটি আসল ও কোনটি নকল তা যাচাইয়ের জন্য ক্রেতার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।'

সরেজমিনে দেখা যায়, এলাকায় ফক্স, লোটো, এপেক্সসহ বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ডের জুতা বিক্রি হচ্ছে। কোনটা আসল আর কোনটা নকল তা অনেকের বোঝার উপায় নেই। তবে বেশির ভাগ ব্র্যান্ডের জুতাই আসল বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা। যেসব জুতা শো রুমে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয় সেগুলো এখানে এক হাজার ২০০ টাকা থেকে আড়াই হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (সিইপিজেড) কারখানাগুলোই এখানকার জুতার প্রধান উৎস। তবে স্থানীয় কারখানাগুলোও এখানে জুতা সরবরাহ করে।

এক জোড়া আসল ব্র্যান্ডের জুতা কীভাবে খুব কম দামে বিক্রি হয় জানতে চাইলে ব্যবসায়ী মো. শহিদ বলেন, 'সিইপিজেড কারখানায় রপ্তানির জন্য জুতা প্রায়শই বিদেশি ক্রেতারা কিছু কারণে প্রত্যাখ্যান করেন। সেগুলো কারখানার মালিকরা কম দামে বিক্রি করেন। পরে জুতাগুলো কয়েক হাত ঘুরে ফুটপাতের বাজারে আসে। এ জন্য এখানে কম দামে মানসম্পন্ন জুতা পাওয়া যায়।'

তিনি স্বীকার করেন যে, অনেক ব্যবসায়ী স্থানীয়ভাবে তৈরি জুতায় বিখ্যাত ব্র্যান্ডের লোগো বা স্টিকার লাগিয়ে ক্রেতাদের ঠকাচ্ছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নগরীর সবচেয়ে বড় এই অস্থায়ী বাজারে ঢাকা ও চীন থেকেও জুতা আসে। তবে বেশির ভাগ পণ্য আসে সিইপিজেড থেকে। বিদেশি ক্রেতারা যে জুতা কিনতে চান না মূলত সেগুলোই এখানে বিক্রি হয়।'

'তবে ভালো ও নিখুঁত জুতাও এখানে বিক্রি হয়' জানিয়ে তিনি আরও বলেন, 'মাঝেমধ্যে ইপিজেড থেকে চুরি হওয়া জুতাও এখানে আসে।'

ব্যবসায়ী কামাল উদ্দিন বলেন, 'জুতাগুলো ভালো মানের এবং শপিংমলের তুলনায় কম দামে পাওয়া যায় বলে ক্রেতারা আমাদের কাছে আসেন। সাধারণত মধ্য ও নিম্নআয়ের মানুষ এবং শিক্ষার্থীরা এখান থেকে জুতা কেনেন।'

ব্যবসায়ীদের মতে, শহরের সবচেয়ে বড় অস্থায়ী জুতার বাজারটি সারা বছরই সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকে। তবে ঈদ, পূজা ও পহেলা বৈশাখসহ বড় উৎসবে বিক্রি সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে।

'সারা বছর ফুটপাতে কিভাবে ব্যবসা করতে পারেন?' জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী বলেন, 'ফুটপাতে ব্যবসা করতে একজন ব্যবসায়ীকে মাসে দেড় হাজার থেকে ২ হাজার টাকা স্থানীয় প্রভাবশালীদের দিতে হয়।'

তবে সেই প্রভাবশালীদের সম্পর্কে তিনি বিস্তারিত জানাতে অস্বীকৃতি করেন।

Comments

The Daily Star  | English

Commercial banks’ lending to govt jumps 60%

With the central bank halting direct financing by printing new notes, the government also has no option but to turn to commercial banks to meet its fiscal needs.

10h ago