‘ঢাকার সমাবেশ থেকে রাজপথে নামার নতুন ঘোষণা আসবে’

সিলেট নগরীর আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে তারুণ্যের সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: স্টার

ঢাকায় বুধবারের সমাবেশ থেকে সরকার পতনে 'রাজপথে নামার' নতুন ঘোষণা আসবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
 
আজ রোববার বিকেলে সিলেট নগরীর আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে তারুণ্যের সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
 
মির্জা ফখরুল বলেন, 'দেশকে মুক্ত করতে হবে, গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে। আমাদের যে নেত্রী বছরের পর বছর নির্যাতন ভোগ করছেন এখনো, এই বৃদ্ধ বয়সে এসে কারাগারে আটক রয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া তাকে মুক্ত করতে হবে। আমাদের নেতা তারেক রহমান যিনি এক হাজার মাইল দূরে মিথ্যা মামলায় নির্বাসিত অবস্থায় আছেন তাকে ফিরিয়ে আনতে হবে। আর আমাদের মতো ৪০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা রয়েছে সেই মামলাগুলো প্রত্যাহার করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে এই সরকারকে বিদায় দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় আছে?'
 
'এ ব্যাপারে কি সবাই একমত, সবাই নামবেন। নেমেছেন নাকি? তাহলে আগামী ১২ তারিখ ঢাকায় একটা সমাবেশ হবে। সেই সমাবেশে নতুন ঘোষণা আসবে, সেই ঘোষণার মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের নতুন যাত্রা শুরু হবে', বলেন তিনি।
 
বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'সেই যাত্রায় তরুণদের জেগে উঠতে হবে, সমগ্র মানুষকে জাগিয়ে তুলতে হবে। গণতন্ত্রকে উদ্ধার করার জন্য, দেশনেত্রীকে মুক্ত করার জন্য, তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনার জন্য, আমাদের মানুষকে মুক্ত করার জন্য, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করার জন্য আমাদের এই সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।'
 
'এই সংগ্রামে রাজপথে মানুষ আর মানুষ, তরুণ আর তরুণ, যুবক আর যুবকের সমাহার দিয়ে এই ভয়াবহ দানবীয় সরকার যারা আমার বুকের ওপর চেপে বসে আছে তাদের পরাজিত করে সত্যিকার অর্থেই একটা জনগণের সরকার, জনগণের পার্লামেন্ট, জনগণের রাষ্ট্র আমাদের নির্মাণ করতে হবে', যোগ করেন তিনি।
 
যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ উদ্যোগে সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে তারুণ্যের এই সমাবেশ হয়। সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী মিছিল নিয়ে এই সমাবেশে যোগ দেন। নেতাকর্মীদের মাথায় লাল-সবুজ-হলুদ রঙের টুপি এবং গায়ে ছিল রঙ্গিন টি-শার্ট।
 
সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, 'দুটি নির্বাচন করেছে এর আগে। আর নির্বাচনটা কী? নির্বাচনটা হলো একটা অস্ত্র। বেআইনিভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকা, নির্বাচন ব্যবস্থাকে তাদের মতো করে ব্যবহার করার জন্য তারা নির্বাচনটা ব্যবহার করেন। আর বলবেন, নির্বাচন তো হবে। আওয়ামী লীগের আমলে নাকি সবচেয়ে ভালো নির্বাচন হয়, আওয়ামী লীগ নাকি সবচেয়ে ভালো নির্বাচন করতে পারে… এ কথা বলে টেলিভিশনে।'
 
'আপনারা দেখেছেন কি, আওয়ামী লীগের আমলে কখনো সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে? আওয়ামী লীগের আমলে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি, হয় না। তারা সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে জানে না। গত দুটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। তাদের চরিত্রের মধ্যে সেটা নেই। তাদের চরিত্রের মধ্যে রয়েছে যে, দেশটা তাদের বাপের তালুকদারি, জমিদারি। ওরা রাজা আর আমরা সব প্রজা… এটা তারা সবসময় মনে করে', বলেন তিনি।
 
মির্জা ফখরুল বলেন, 'সেই কারণে তারা সবসময় ক্ষমতা ধরে রাখতে চায় বেআইনিভাবে নির্যাতন করে, হত্যা করে, গুম করে নিষ্ঠুরভাবে। আমাদের মনে রাখতে হবে এই নির্বাচন ব্যবস্থা আওয়ামী লীগ ইচ্ছাকৃতভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে, আমাদের মনে রাখতে হবে আজকে এখানে তরুণ-যুবক আছে তাদের যদি অধিকার আদায় করতে হয়, একটা সুন্দর দেশ তৈরি করতে হয়, সেখানে তারা চাকরি পাবে, শিক্ষার সুযোগ পাবে, স্বাস্থ্যের সুযোগ পাবে তাহলে এই তরুণদের এই অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে।'
 
তিনি বলেন, 'বাংলাদেশকে আগের জায়গায় ফিরিয়ে নিতে হবে। সেজন্য আমাদের নেতা তারেক রহমান বলেছেন, টেক ব্যাক বাংলাদেশ। কোন বাংলাদেশ? যে বাংলাদেশে গণতন্ত্র থাকবে, মানুষের সার্বভৌমত্ব থাকবে, কাজ করে আয় করার ব্যবস্থা থাকবে, মানুষ সহজভাবে জীবনযাপন করতে পারবে। তরুণ ছেলেরা আজকে কোনো চাকরি পায় না। বেকারত্ব বাড়ছে।'
 
'এই অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। এই তারুণ্যের সমাবেশে একটাই লক্ষ্য হওয়া উচিত… আজকে দেশকে মুক্ত করতে, গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে সবাইকে একসঙ্গে নামতে হবে। ফয়সালা হবে কোথায়? রাজপথে এর ফয়সালা করতে হবে', বলেন তিনি।
 
মির্জা ফখরুল বলেন, 'আজকের খবরের কাগজে দেখবেন ডেঙ্গুতে ঢাকায় এখন পর্যন্ত ১০০ জনের ওপর মারা গেছে, তার মধ্যে শিশু আছে ৭০ জন। কোনোরকম কোনো ব্যবস্থা হচ্ছে না ডেঙ্গু দূর করার জন্য। চট্টগ্রামে আজ এক পরিবারেই ৭ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন।'
 
'সাধারণ মানুষ কোনো স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পায় না, সব ভঙ্গুর হয়ে গেছে। শিক্ষাখাতের কথা কী বলব, সব বিশ্ববিদ্যালয়কে তাদের দলীয় শিক্ষক দিয়ে পূর্ণ করে দিয়েছেন, সেখানে লেখাপড়া বলে কিছু হয় না। একইভাবে সব খাতকে লুটের স্থান করেছে', বলেন তিনি।  
 
বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'পত্রিকায় বেরিয়েছে যে, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ইভালুয়েশনে বিদ্যুতখাতকে বলা হয়েছে অপচুক্তি ও লুটেরা মডেল। কারা বলছে? সরকারের লোকেরা। কেন বলছে? শুধু কেন্দ্রগুলোতে কোনো উৎপাদন না করে বিদ্যুৎ বাবদ ভাড়া দিতে হচ্ছে ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৪ হাজার কোটি টাকা। সব মিলিয়ে গোটা বিদ্যুৎখাতে লোকসান দিয়েছে এক লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা, এই ২ বছরে।'
 
'আমি একটা খাতের কথা বললাম। এখন বলে রোল মডেল বাংলাদেশ। উন্নয়ন করছে- তাই না, উন্নয়নে একেবারে সোনা দিয়ে মুড়িয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশকে। ১০ হাজার টাকায় যে পদ্মা সেতু করা যেত, সেই সেতু করতে লেগেছে ৩০ হাজার কোটি টাকা। আর উড়াল সেতু বানাচ্ছে, টানেল বানাচ্ছে পানির তল দিয়ে। কিন্তু আমার গরিব কৃষক তার ধানের দাম পাচ্ছে না, তার পণ্যের দাম পায় না। সারের দাম কমে না, সারের দাম বাড়তে থাকে। আর মা-বোনেরা বাজারে গেলে তেল-লবণ-ডাল-ডিম কিনতে পারেন না। কারণ দাম ৩-৪ গুণ বেড়ে গেছে।'
 
সমাবেশের শুরুতে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এমএজি ওসমানি, মুক্তিযুদ্ধে সিলেট সেক্টরে নেতৃত্বদানকারী জিয়াউর রহমান, সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিএনপি মহাসচিব।  
 
স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানীর সভাপতিত্বে যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের যৌথ সঞ্চালনায় সমাবেশে যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন জীবন, জেলা সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, মহানগর সভাপতি নাসিম হোসাইন, যুবদলের জাকির হোসেন সিদ্দিকী, স্বেচ্ছাসেবক দলের ফখরুল ইসলাম রবিন ও ছাত্রদলের রাকিবুল ইসলাম রাকিব বক্তব্য রাখেন।
 
দলের 'গুম' হওয়া সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহমিনা রুশদির লুনা, ছাত্রদলের জোনায়েদ আহমেদের মা আয়েশা বেগম ও ইফতেখার আহমেদ দিনারের বোন তাহমিন শারমিন তামান্না, নবীন ভোটার সাদিয়া কাউসার রুহি, সাবিহা জামান আরিফা, ক্ষমতাসীনদের হামলায় পঙ্গু যুবদলের খালেদুর রহমান খালেদ সমাবেশে নিজেদের বেদনার কথা তুলে ধরেন।
 
সমাবেশে প্রতিবাদী কবিতা আবৃত্তি করেন এম এ চৌধুরী শাহান, আরিফ উল্লাহ ও শায়মা আহমেদ অসীম।
 
সমাবেশে সিলেটের বিদায়ী মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, এনামুল হক চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা কলিম উদ্দিন মিলন, নাসের রহমান, এম এ সালাম, শাম্মী আখতার, জেলা সাধারণ সম্পাদক ইমরান আহমেদ চৌধুরী এবং মহানগর সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন চৌধুরীসহ অঙ্গসংগঠনের নেতারা যোগ দেন।

Comments