সরকার পতনে এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা শিগগির: মির্জা ফখরুল
সরকার পতনে এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা শিগগির আসছে বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ রোববার বিকেলে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায় কবে হবে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, 'আপনারা দেখতে পারছেন আমরা আন্দোলনে আছি। মূলত এক দফার আন্দোলনেই আছি। এটা একেবারে আনুষ্ঠানিকভাবে আসবে। তা খুব শিগগির দেখতে পারবেন।'
মির্জা ফখরুল বলেন, 'ঈদের পর আমাদের আন্দোলন আরও জোরদার হবে, আরও বেগবান হবে। যারা আমাদের সঙ্গে একসঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করছেন তাদের সঙ্গে কথা বলছি। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে আন্দোলনকে আরও বেগবান করব।'
'রমজানের পর আন্দোলন একটা পর্যায়ে যাবে', 'আন্দোলনের রূপরেখা আসছে' এরকম কথা বলা হয়েছিল উল্লেখ করে প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'দেখেন, রমজান বা ঈদ বলে কোনো জিনিস নেই। ওটা অন্য ব্যাপার। আন্দোলনের ক্ষেত্রে রমজান বা ঈদ কোনো বিষয় না। আমরা আমাদের মতো করে যাই।'
'রূপরেখা বলেন, যা বলেন সবই আসবে। অস্থির হবেন না। আমাদের তো কৌশল আছে, অনেক কৌশল আছে। আমরা আমাদের মতো করে যেতে চাই', যোগ করেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব ঈদ উদযাপনসহ দলীয় কর্মসূচিতে আগামৗকাল মঙ্গলবার গ্রামের বাড়ি ঠাকুরগাঁও যাচ্ছেন। এবার তিনি সেখানে ঈদ উদযাপন করবেন এবং বাবা-মায়ের কবর জিয়ারত করবেন। সেজন্য এবার বিএনপি মহাসচিব ঢাকায় ঈদের দিন থাকছেন না। এর আগে সাংবাদিকদের ঈদের অগ্রিম শুভেচ্ছা জানাতে গুলশানে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল বলেন, 'এখনও সময় আছে, তাদের শুভ বুদ্ধি উদয় হোক। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে তাদের উচিত একটা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের ব্যবস্থা করা, এর আগে পদত্যাগ করা। এই সরকার যদি ক্ষমতায় থাকে তাহলে কোনো মতেই নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ হবে না। সেজন্য আমাদের বক্তব্য পরিষ্কার, এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে কনসেনসাসের ভিত্তিতে নিরপেক্ষ সরকার, যেটা আমরা নির্বাচনকালীন সময়ের সরকার বলছি, সেটা করতে হবে।'
অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে বিদেশিদের চাপ ও প্রভাবের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, 'তার মানে হচ্ছে, সরকার নেই। সেন্ট মার্টিন না দিলে যদি আপনার (প্রধানমন্ত্রী) ক্ষমতায় না থাকা হয় তাহলে তো নেই। বলেছেন যে, উনি দেবেন না, তাহলে উনি নেই। আবার উনি গ্যাস বিক্রি না করলে থাকা যাবে না। তাহলে উনি নেই। মানেটা তো সেটাই দাঁড়ায়।'
তিনি আরও বলেন, 'আসলে এই বক্তব্যটা উনার (প্রধানমন্ত্রী) নিজের, উনার দলের। আমাদের তো সেটা না। তাদের দুঃশাসন ও গণতন্ত্র বিরোধিতা এমন এক পর্যায় চলে গেছে যে, সমগ্র দেশের মানুষ না, আন্তর্জাতিক গণতান্ত্রিক বিশ্ব বলতে বাধ্য হচ্ছে, তোমার এখানে মানবাধিকার নেই। তোমার এখানে গণতন্ত্র নেই। আমরা মনে করি, দেয়ার ইজ দ্য ট্রুথ।'
'ওদেরটা (বিদেশি) আপনারা বেশি শোনেন আর কী! আর আমরা গত ১২ বছর ধরে বলছি, চিৎকার করছি, আমাদের ৬০০ মানুষ গুম হয়ে গেল, সম্প্রতি রাস্তায় ১৭ জন নেতাকর্মী গুলি খেয়ে মারা গেল- তখন কিন্তু সেটাকে আপনারা গুরুত্ব দেন না' যোগ করেন তিনি।
'যতক্ষণ পর্যন্ত গার্ডিয়ানে লেখা না হবে, স্টেটসম্যানে না লেখা হবে, যতক্ষণ বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকায় না বলা হবে ততক্ষণ পর্যন্ত বিশ্বাস করতে চান না। তবে আরেকটা কারণ হচ্ছে আপনারা (বাংলাদেশের গণমাধ্যম) এমন একটা যাতাকলে পড়েছেন। বাস্তবতা হলো, আপনারা সব কথা বলতে পারেন না, লিখতে পারেন না, দেখাতে পারেন না, সম্ভব হচ্ছে না। কেন? কারণ মিডিয়া কন্ট্রোল, বিভিন্ন নিবর্তনমূলক আইন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট। এভাবে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কীভাবে চলতে পারে?', তিনি বলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'বিশ্বাস করেন, আমার মাঝেমধ্যে গলা ছেড়ে কাঁদতে ইচ্ছা করে। এই বাংলাদেশ তো আমরা চাইনি ভাই, ১৯৭১ সালে এর জন্য আমরা যুদ্ধ করিনি। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এমন একটা পরিবেশ আমরা দেখতে চাইনি।'
তিনি আরও বলেন, 'অর্থনীতি ভালো— এই ধরনের মিথ্যাচার তো তারা ক্রমাগত করে চলেছে। মানুষকে বোকা বানিয়ে ভুল বুঝিয়ে বলা যে, অর্থনীতি খুব শক্ত আছে, সবল আছে। দেশের অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে কথা বলেন, তারা সবাই বলবেন, দেশে অর্থনৈতিক সংকট চলছে। এই সংকটটা বড় রকমের সংকট। উপরন্তু কালকেই দেখলাম সংসদে যে, ব্যাংকের পরিচালকদের মেয়াদ আবার ১২ বছর করেছে। কার ইঙ্গিতে, কার হুকুমে এটা হলো, এই দেশ কীভাবে চলে আমরা জানি না।'
'আমরা দেখতে পারছি সরকারের জনগণের কাছে কোনো দায়বদ্ধতা নেই। তাদের দায়বদ্ধতা শুধু যারা লুট করছে, বিদেশে অর্থবিত্ত তৈরি করছে তাদের কাছে। যে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠির আয় বাড়ছে না, তারা নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারছে না সেই দেশে কীভাবে এটাকে জনগণের সরকার বলতে পারেন?', যোগ করেন তিনি।
রিজার্ভের অর্থ খরচ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, 'ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, সিডিপি বিভিন্ন সময়ে রিপোর্ট করেছে। সেখানে পরিষ্কার দেখা গেছে, ইম্পোর্ট কস্ট দেখিয়ে বেশি করে ওয়ার ইনভেয়স করে টাকা বের করে নিয়ে চলে গেছে। আর রিজার্ভের টাকা থেকে লোন (আইডিএফ) দেওয়া হয়েছে, সেটা রিজার্ভের টাকা থেকে খরচ করতে পারে না। এভাবে তারা রিজার্ভ থেকে টাকা বের করে নিয়ে নিজেরাই পাচার করেছে।'
সিটি নির্বাচন নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, 'এই নির্বাচনগুলোতে তো প্রতিন্দ্বন্দ্বিতাই না। নির্বাচনে তো সবসময় একটা প্রতিপক্ষ থাকবে। সেই প্রতিপক্ষই তো নেই।'
সুইস ব্যাংক থেকে বাংলাদেশের অ্যাকাউন্টধারীদের অর্থ তুলে নেয়ার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, 'টাকা-পয়সা যাদের বেশি হাতে আছে তারা টাকা কোথায় রাখছে কেউ জানে না। এরা আবার এখন সুইস ব্যাংক থেকে সব টাকা বের করে আনছে? এসব টাকা কাতারে যাচ্ছে না মধ্যপ্রাচ্যে যাচ্ছে তা আমরা জানি না। এটা সত্য যে, সুইস ব্যাংকের টাকা বেরিয়ে আসছে।'
তিনি বলেন, 'একদিকে নেতা-কর্মীদের ওপর ওরা হামলা করছে, আরেকদিকে আমাদের দলের পটেনশিয়াল ক্যান্ডিডেটদের তুলে দিয়ে যাওয়া, ভয় দেখানোর কাজ করছে। শুধু তাই নয়, যারা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন তাদেরকে চাকুরিচ্যুত করছে, বাধ্য করছে সেখান থেকে রিজাইন করতে।'
'কীভাবে আশা করেন এখানে একটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে? এখানে নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচন হবে না। আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারি, জনগণের অভ্যুত্থানে নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি মানতে বাধ্য হবে সরকার। একটা কেয়াটেকারের ব্যবস্থা করে ক্ষমতা ছেড়ে দিতেই হবে', যোগ করেন তিনি।
পশ্চিমা বিশ্বসহ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো সরকারকে ইতোমধ্যে সেরকম বার্তা জানিয়ে দিয়েছে বলে উল্লেখ করেন বিএনপি মহাসচিব।
Comments