নেতাদের কাউন্সিলর পদেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার নির্দেশ

৫ সিটি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা বিএনপির

রোববার থেকে ৪৮ ঘণ্টা হরতালের ডাক বিএনপির

সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের যে নেতারা কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন এবং যারা তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করবেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে বিএনপি।

কাউন্সিলর নির্বাচন নির্দলীয় হলেও তৃণমূল পর্যায়ের কিছু নেতা, বিশেষ করে বর্তমান কাউন্সিলররা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান।

এই প্রথম দলটি কাউন্সিলর নির্বাচনে যোগ দেওয়ার বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিচ্ছে। আসন্ন ৫ সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দিয়েছে তারা।

এ বিষয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এটা একটা দলীয় সিদ্ধান্ত। কাউকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেওয়া হচ্ছে না। আমরা একটা আন্দোলনে আছি। যখন সরকারের বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ, তখন আমরা কীভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারি? তাই কাউকে নির্বাচন করতে দেওয়া হচ্ছে না।'

সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরপরই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের জানান, এবার কোনো নির্বাচনে অংশ নিয়ে তারা কোনো ধরনের ফাঁদে পড়বেন না।

তবে দলের এই অবস্থানের পরেও কিছু নেতা 'চাপে বা স্বেচ্ছায়' নির্বাচনে অংশে নেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছেন বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আজ বৃহস্পতিবার গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। খুলনা ও বরিশালে ১৬ মে এবং রাজশাহী ও সিলেটের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ২৩ মে।

গাজীপুরে আগামী ২৫ মে, খুলনা ও বরিশালে ১২ জুন এবং রাজশাহী ও সিলেটে ২১ জুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী সংস্থা বিএনপির স্থায়ী কমিটি সম্ভাব্য প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে দূরে রাখতে কাউন্সেলিং শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

মঙ্গলবার রাতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। তখন সিটি নির্বাচন নিয়ে আলোচনার জন্য এই কমিটির বৈঠক হয়।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, সিটি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার বিষয়ে দলের পক্ষ থেকে পুনরায় জানানো হয়েছে এবং কেউ দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বৈঠকে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে গণমাধ্যমে উঠে আসা নামগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়, যদিও তাদের কেউই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বিষয়ে দলের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি।

খুলনার সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জু, বরিশালের সাবেক মেয়র মুজিবুর রহমান সারোয়ার ও রাজশাহীর সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না বলে স্থায়ী কমিটির বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।

গাজীপুর থেকে কেউ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য দলের সঙ্গে যোগাযোগ না করলেও কেন্দ্রীয় নেতারা সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে নিয়ে সন্দিহান। আগামী দিনগুলোতে আরিফ কী পদক্ষেপ নেন, সেদিকেই নজর থাকবে দলের।

সম্প্রতি লন্ডনে এক অনুষ্ঠানে আরিফ জানান, তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন না। কিন্তু দেশে ফেরার পর তিনি বলেন, 'সবার জন্য চমক আছে।' তিনি অবশ্য তা এখানো প্রকাশ করেননি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, 'কেউ যদি মেয়র বা কাউন্সিলর প্রার্থী হতে চান, তাহলে শীর্ষ নেতৃত্ব প্রথমে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করবেন যে দল একটি আন্দোলনে আছে।'

তার ভাষ্য, দলীয় আদেশ অমান্য করে যারা আগে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন তাদের কী অবস্থা হয়েছিল তাও শীর্ষ নেতারা প্রার্থীদের স্মরণ করিয়ে দেবেন।

এরপরও কেউ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দলের নেতারা যদি মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে উৎসাহিত করেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দলীয় সূত্র জানায়, বহিষ্কার সবচেয়ে কঠিন পদক্ষেপ এবং শীর্ষ নেতারা এটি এড়ানোর চেষ্টা করবেন। কারণ, এই ধরনের পদক্ষেপ চলমান আন্দোলনেও বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর থেকে রাজপথে নেমেছে বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো।

দলটি ২০২১ সালের মার্চের পর থেকে সরকারের অধীনে কোনও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি।

দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ২০২২ সালে বিএনপি নেতা তৈমুর আলম খন্দকার ও মনিরুল হক সাক্কু নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে দল তাদের বহিষ্কার করে।

২০১৮ সালে ৫ সিটির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা ৪টি এবং বিএনপির প্রার্থীরা একটিতে জয়ী হন।

এর আগে ২০১৩ সালে সব সিটিতেই জয়ী হন বিরোধী দলের প্রার্থীরা।

 

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

6h ago