‘দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা দূর করতে পারলে বিদ্যুতের মূল্য না বাড়িয়ে কমানো যেত’
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম বলেছেন, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি জনজীবনে আরও সংকট নিয়ে আসবে। দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, অপচয় দূর করতে পারলে বিদ্যুতের মূল্য না বাড়িয়ে কমানো যেত।
সিপিবির দেশব্যাপী বিক্ষোভ সপ্তাহের প্রথম দিনে আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় ঢাকায় পল্টন মোড়ে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলে তিনি এ কথা বলেন।
শাহ আলম বলেন, 'লুটেরা রাজনীতি আর লুটেরা অর্থনীতি পরাজিত না করতে পারলে মানুষের মুক্তি আসবে না। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি পেলে কৃষি শিল্পসহ সর্বত্র উৎপাদন খরচ বাড়বে। ওই বাড়তি দামও সাধারণ মানুষের পকেট থেকে তুলে নেওয়া হবে।'
'এ সময় সাধারণ মানুষের আয় বাড়েনি। প্রকৃত আয় কমে গেছে। খাদ্যপণ্য, ওষুধের মূল্য আকাশচুম্বী। এই অবস্থায় বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি জনজীবনে আরও সংকট নিয়ে আসবে। দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, অপচয় দূর করতে পারলে বিদ্যুতের মূল্য না বাড়িয়ে কমানো যেত। আজ বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির কথা বলা হচ্ছে। অথচ সরকারের ভুলনীতির কারণে উৎপাদন ব্যয় বাড়ার দায় সাধারণ মানুষ নেবে না', যোগ করেন তিনি।
শাহ আলম আরও বলেন, 'মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে সরকারকে পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া, নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার করে নির্দলীয় তদারকি সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিতে হবে।'
সমাবেশে ভোটাধিকার, দাম কমানো, পাচারের টাকা ফেরত, বৈষম্য ও দুর্নীতি দূর করার দাবিতে গণসংগ্রাম গড়ে তোলার আহ্বান জানায় সিপিবি।
সিপিবি সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলমের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক কমরেড রুহিন হোসেন প্রিন্স, সিপিবি ঢাকা দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার, সিপিবি ঢাকা উত্তরের সাধারণ সম্পাদক লুনা নূর।
সমাবেশ পরিচালনা করেন সিপিবির সহ-সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য শামসুজ্জামান সেলিম, সিপিবির অন্যতম নেতা কমরেড আব্দুল্লাহ আল ক্বাফী রতন, ডা. ফজলুর রহমান, অ্যাড. আনোয়ার হোসেন রেজা, লাকী আক্তারসহ নেতারা।
এ সময় সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, 'গণতন্ত্রহীন পরিবেশে দুর্নীতি ও লুটেরারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সর্বত্র ঘুষ-দুর্নীতির উৎসব চলছে। টাকা পাচারকারী আর ঋণ খেলাপিরা থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। সাম্প্রদায়িক অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। এই আর্থিক সংকটের সময় ইভিএম নিয়ে নির্বাচন কমিশন ও সরকারের তৎপরতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, জনমত উপেক্ষা করে আগামী নির্বাচনে প্রশাসনিক কারসাজির যে কোনো চক্রান্ত দেশবাসীকে রুখে দাঁড়াতে হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে সরকারকে পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া, নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার করে নির্দলীয় তদারকি সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিতে হবে। সাম্রাজ্যবাদ আর বিদেশি আধিপত্যবাদী শক্তি দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব বিস্তার অব্যাহত রেখে এখন রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছে। মানুষ বাঁচাতে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, রেশনিং, ন্যায্যমূল্যের দোকান ও গণবণ্টন ব্যবস্থা চালু করতে হবে। সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে।'
'বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির পায়তারার প্রতিবাদে ১৫ জানুয়ারি বামজোট বিটিআরসির সামনে বিক্ষোভ করবে। পাচারের টাকা ফেরত ও খেলাপি ঋণ উদ্ধারে দুদক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনেও আগামীতে বিক্ষোভ হবে', যোগ করেন তিনি।
বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে একটি মিছিল পল্টন মোড় থেকে বিজয় নগর হয়ে দৈনিক বাংলা মোড় ঘুরে সিপিবির অফিসের সামনে এসে শেষ হয়।
Comments