যুবলীগ-ছাত্রলীগ ও পুলিশি হামলায় ফরিদপুরে বিএনপির গণ-অবস্থান পণ্ড
যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও পুলিশের যৌথ হামলায় গণ-অবস্থান কর্মসূচি পণ্ড হয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেছে ফরিদপুর বিএনপি।
তবে পুলিশ বলছে, বিএনপি নেতাকর্মীরা তাদের ওপর ইট ছুড়ে। আত্মরক্ষার্থে তারা বিএনপি নেতাকর্মীদের দিকে রাবার বুলেট ছুড়ে। এতে তাদের গণ-অবস্থান কর্মসূচি পণ্ড হয়ে যায়।
আজ বুধবার সকাল ১১টায় শহরের ঐতিহাসিক অম্বিকা ময়দানে বিএনপির এ গণ-অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়।
'ফ্যাসিস্ট, দুর্নীতিবাজ, গণতন্ত্র হরণকারী সরকারের পদত্যাগ, অবৈধ সংসদ বাতিল ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন'সহ ১০ দফা এবং দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ সব নেতাকর্মীর মুক্তির দাবিতে দেশের ৭ বিভাগ ও ৩টি সাংগঠনিক বিভাগে গণ-অবস্থান কর্মসূচি গ্রহণ করে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে ফরিদপুরে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল ১১টায় অম্বিকা ময়দানে বিএনপির গণ-অবস্থান কর্মসূচির আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। পৌনে ১২টার দিকে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের দুটি মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা অবস্থান কর্মসূচির মাঠের পাশ দিয়ে যায়। সেসময় তাদের হাতে কাঠের লাঠি ছিল। যাওয়ার সময় তারা লাঠি উঁচিয়ে উস্কানিমূলক আচরণ করে। দুপুর ১২টার দিকে ওই মোটরসাইকেল বহরটি পুনরায় পৌর ভূমি অফিসের পাশ দিয়ে অবস্থান স্থলের মাঠের প্রবেশ ফটকে আসলে একটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। এসময় মাঠে সমবেত বিএনপি নেতাকর্মীরা তাদের ইট ও লাঠি নিয়ে ধাওয়া দেয়। ধাওয়া খেয়ে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীরা পালিয়ে যান। সেসময় মাঠের পূর্ব দিকে অবস্থানকারী পুলিশ সদস্যের ওপর বিএনপির কর্মীরা চড়াও হয়ে ইট নিক্ষেপ করতে থাকেন। তখন পুলিশ রাবার বুলেট ছুড়ে। মাঠে সমবেতরা এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করতে থাকেন। বিএনপির বেশ কয়েকজন কর্মী আহত হন। তাদের দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখা যায়। কেন্দ্রীয় নেতারা দলীয় কর্মীদের প্রহরায় সমাবেশ স্থল থেকে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটে যান। এ কারণে বিএনপির গণ-অবস্থান কর্মসূচি পণ্ড হয়ে যায়। দুপুর ১টার দিকে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আসে।
এর আগে, দুপুর ১২টা ২৫ মিনিটের দিকে সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের কাছে মিছিল নিয়ে আসা বিএনপি নেতাকর্মীদের বাধা দেয় পুলিশ। তারা পুলিশের ওপর ইট ছুড়ে। সেসময় পুলিশ গুলি ছুড়ে ও মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
দুপুর দেড়টার দিকে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য খন্দকার ফজলুর হকের ঝিলটুলীস্থ বাসভবনের ৫ তলায় বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. আজম খান এবং কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (ফরিদপুর বিভাগ) শামা ওবায়েদ ব্রিফিং করেন।
ঘটনার বিবরণ দিয়ে আজম খান বলেন, 'সকাল ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে চলছিল। সাড়ে ১২টার দিকে সরকারি দলের সমর্থকরা প্রথমে হামলা চালালে তাদের প্রতিহত করে বিএনপির নেতাকর্মীরা। পরে সরকারি দলের সদস্যরা পুলিশের সঙ্গে যোগ দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে। এতে বিএনপির অনেকে আহত হন।'
তিনি বলেন, 'আমিসহ কেন্দ্রীয় অনেক নেতা বিপদের মুখে পড়ে যাই।'
আজম খান বলেন, 'যে সরকার একটি রাজনৈতিক দলকে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে দেয় না, সেই সরকারের অধীনে অবাধ নির্বাচন হতে পারে না। এ লুটেরা সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। আমরা আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে জনগণের দাবি আদায় করব।'
তিনি বলেন, 'গণ-অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে শহরের বিভিন্ন জায়গায় আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর সরকারি দলের লোক ও পুলিশ হামলা করেছে। তারপরও আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু শেষ মুহূর্তে আমাদের অবস্থান কর্মসূচি স্থলে হামলা চালিয়ে পণ্ড করে দেওয়া হয়েছে।'
সংবাদ সম্মেলনে শামা ওবায়েদ বলেন, 'আমরা কর্মসূচি করছি, তখন আওয়ামী লীগের কোনো কর্মসূচি ছিল না। তারা কেন মহড়া দিলো।'
তিনি প্রশাসনকে দায়ী করে বলেন, 'আমরা দলীয় কার্যালয়ের সামনে কর্মসূচি পালন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু প্রশাসন পরিকল্পিতভাবে আমাদের বিপদে ফেলার জন্য চতুর্দিকে ঘেরা অম্বিকা ময়দানে কর্মসূচি পালনের অনুমতি দেয়।'
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক বলেন, 'কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আমরা রাসেল স্কয়ারে সমাবেশ করছিলাম। এসময় খবর পাই বিএনপির বড় একটি মিছিলের কারণে গোয়ালচামট শ্রীঅঙ্গন থেকে আলীপুর গোরস্থান পর্যন্ত সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে ও জনতার ভোগান্তি হচ্ছে। এ ব্যাপারে ভূমিকা রাখার জন্য পুলিশের সাহায্য চাওয়া হয়।'
'আওয়ামী লীগের কেউ বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দেয়নি' দাবি করে তিনি বলেন, 'আমরা শান্তিপ্রিয় মানুষ, শান্তিতে থাকতে চাই। আমরা কেন বাধা দেব।'
শামীম হক বলেন, 'আওয়ামী লীগ চাইলে ফরিদপুরে বিএনপি কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারবে না। কিন্তু তা আমরা চাই না।'
তিনি আরও বলেন, 'জেলা বিএনপি দলটির সাবেক মহাসচিব ওবায়দুর রহমানের মেয়ে শামা ওবায়েদ এবং সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান নায়াব ইউসুফের নেতৃতে অবিভক্ত। আমরা জানতে পেরেছি তাদের আভ্যন্তরীণ কোন্দলে এ ঘটনা ঘটেছে।'
ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, 'বিএনপির নিজেদের মধ্যে বিরোধ ছিল। পাশাপাশি বিএনপির প্রতিপক্ষ দল সক্রিয় ছিল। গণ-অবস্থান কর্মসূচি করার কথা ছিল কিন্তু মিছিল করার কথা ছিল না। একটি বড় মিছিল সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের সামনে দিয়ে গণ-অবস্থান কর্মসূচি স্থলে যাওয়ার পথে পুলিশ বাধা দেয়। মিছিলকারীরা পুলিশের ওপর হামলা চালালে পুলিশ রাবার গুলি ছুড়ে। পরে গণ-অবস্থান স্থলের সমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়।'
তিনি বলেন, 'পুলিশ মোট ১৬টি রাবার বুলেট ছুড়েছে এবং বিএনপির ১০ কর্মীকে আটক করেছে।'
Comments