‘আমার নামে ৭ মামলা, আর কিসের ভয় পাব বলেন’

সমাবেশে যোগ দিতে এসেছেন মোজাম্মেল হক পলাশ। ছবি: মামুনুর রশীদ/স্টার

'আমাদের এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতারা ঘোষণা দিয়েছেন, যারা ১০ তারিখে ঢাকার সমাবেশে যোগ দিতে যাবে, তারা আর এলাকায় ফিরতে পারবে না। আজকের সমাবেশ শেষ করে বাড়ি ফিরতে পারব কি না জানি না।'

রাজধানীর কমলাপুর স্টেডিয়ামের সামনে থেকে আজ শনিবার সকালে দ্য ডেইলি স্টারকে কথাগুলো বলছিলেন নারায়ণগঞ্জের কাঞ্চন পৌর যুবদলের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক পলাশ।

তিনি বলেন, 'আমরা ১১ দিন ধরে ঘর ছাড়া। সমাবেশের আগে এলাকা থেকে বের হলে সমস্যা হবে, তাই আগেই এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছি।'

ঢাকায় আসার অভিজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, 'ঢাকা আসার সময় পথে পথে আওয়ামী লীগ-যুবলীগের প্রহরা দেখতে পেয়েছি। গতকাল যখন ঢাকায় আসছিলাম তখন গাওসিয়া মার্কেট এলাকায় পুলিশের চেকপোস্টে আমাদের আটকায়। একটি গাড়িতে আমরা মোট ৮ জন এসেছি। একজনকে রোগী সাজিয়ে ঢাকা মেডিকেলে যাওয়ার কথা বলে ঢাকায় ঢুকেছি।'

এত ঝুঁকি নিয়ে আসার ব্যাপারে পলাশ বলেন, 'আমার নামে ৭টি মামলা দিয়েছে। হয়রানির শিকার তো প্রতিনিয়তই হই। আর কিসের ভয় পাব বলেন?'

কাঞ্চন পৌর যুবদলের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি আব্দুল আজিজ একই অভিজ্ঞার কথা জানিয়ে বলেন, 'বাড়ি ফিরতে পারব কি না জানি না। আমাদের এলাকার বাজারে প্রকাশ্যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, সমাবেশে যোগ দিলে কেউ আর এলাকায় ফিরতে পারবে না।'

তিনি বলেন, 'আমার তো আর হারানোর কিছু নেই। হামলা-মামলায় জীবন শেষ। দেশের গণতন্ত্র বাঁচাতে, দুর্নীতিবাজ দের হঠাতে, লাগামহীন দ্রব্যমূল্যের প্রতিবাদে আমরা এই সরকারের পতন ঘটাতে আন্দোলন করছি।'

ময়মনসিংহ জিয়া সাইবার ফোর্সের সদস্য মাসুদুর রহমান শিপন বলেন, 'আমার নামে ৫টি রাজনৈতিক মামলা আছে। ২ বার আমাকে জেলও খাটতে হয়েছে।'

তিনি ৮ তারিখে ঢাকায় এসেছেন উল্লেখ করে বলেন, 'যেদিন ঢাকায় এসেছি সেদিন আমাদের ২০ জনের নামে এবং অজ্ঞাত আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে মামলা দিয়েছে পুলিশ। ঢাকায় এসে পরিচিতদের বাসায় ছিলাম।'

খুলনা সদর থানা শ্রমিক দলের সিনিয়র সহসভাপতি সোহরাব হোসেন জানান, 'অনেক বাধা পেড়িয়ে আসতে হয়েছে ঢাকায়।'

তিনি জানান, নৌকা, ট্রেনসহ নানাভাবে ভেঙে ভেঙে আসতে হয়েছে তাকে। ঢাকায় এসে কখনো রাত কাটিয়েছেন কোনো আত্মীয়ের বাসায়, আবার কখনো রাস্তায়। গতরাতে তিনি সমবেশস্থলে ছিলেন।

সোহরাব বলেন, 'এলাকায় তো থাকতে পারি না। নিত্যদিন পুলিশ বাসায় আসে। আগে তেমনভাবে রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে যেতাম না। তবুও ৮-১০টি মামলা আমার নামে। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এখন সব সমাবেশে যাই। এই সরকারের পতন চাই।'

আজ সকাল থেকেই খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে বিএনপির লাখো নেতাকর্মী এসেছেন গোলাপবাগ মাঠের দিকে। গতকাল রাতেই পূর্ণ হয়ে গেছে মাঠ। মাঠে জায়গা না পেয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়েছেন গোলাপবাগ মাঠের আশেপাশের রাস্তাগুলোতেও। মানিকনগর, সায়েদাবাদ, মুগদার রাস্তাগুলোতেও অবস্থান করছেন তারা।

এরই মধ্যে বিএনপির সমাবেশ এলাকায় মানিকনগরে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মৎসজীবী লীগের একটি মিছিল দেখা যায়। অন্তত ১০০ মানুষের ওই মিছিলটি সম্পূর্ণ পুলিশ প্রহরায় মানিকনগর এলাকা পার হয়।

আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গোলাপবাগ মাঠে বিএনপির সমাবেশ শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত সমাবেশের মঞ্চে আছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদীন ফারুক, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুন নবী খান সোহেল, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, রাজশাহীর সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু, ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনুকুল হাসান শ্রাবণসহ আরও অনেকে। ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আজিজুল বারী হেলাল অনুষ্ঠান পরিচালনা করছেন।

সমাবেশের মূল মঞ্চে প্রথম শ্রেণির ২টি চেয়ার ফাঁকা রাখা হয়েছে। যার একটিতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও অপরটিতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেমপ্লেট রাখা হয়েছে।

কমলাপুর, সায়েদাবাদ, গোলাপবাগ এলাকায় বেশ কিছু তল্লাশি চৌকি স্থাপন করেছে পুলিশ। পুরো এলাকা জুড়ে অতিরিক্ত পুলিশের অবস্থান চোখে পড়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Jatrabari turns into battlefield as students clash

Students of three colleges clashed at Dhaka's Jatrabari today, turning the area into a battlefield

1h ago