তিন হাজারের বেশি কবর খোঁড়া মনু মিয়া শেষ ঠিকানায়

যিনি সারা জীবন অন্যের 'শেষ ঠিকানা' তৈরি করে দিয়েছেন, সেই মানুষটি নিজেই পাড়ি জমালেন অনন্তলোকে। তিন হাজারেরও বেশি কবর খোঁড়া মনু মিয়া আর নেই। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় কিশোরগঞ্জের ইটনার নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর।

মনু মিয়ার ভাতিজা শফিকুল ইসলাম জানান, তার চাচা দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিসসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। ছয় দিন আগে চিকিৎসা শেষে ইটনার বাড়িতে ফিরে আসেন। আজ সকালে তিনি আবারও অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মারা যান।

কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা উপজেলার জয়সিদ্ধি ইউনিয়নের আলগাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মনু মিয়া। ৫০ বছর ধরে তিনি নিঃস্বার্থভাবে কবর খোঁড়ার কাজ করে গেছেন। কারও মৃত্যুর খবর শুনলেই কোদাল, খুন্তিসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে নিজের ঘোড়ায় চড়ে ছুটে যেতেন কবরস্থানে। মানুষের শেষ যাত্রায় তিনি সব সময় বাড়িয়ে দিতেন তার আন্তরিক হাত। বিনিময়ে কোনো পারিশ্রমিক নেননি কখনো।

মনু মিয়া কবর খোঁড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের মৃত্যুর দিন-তারিখ ডায়েরিতে টুকে রাখতেন। তার ডায়েরি অনুযায়ী, তিনি মোট ৩ হাজার ৫৭টি কবর খুঁড়েছেন।

জীবনভর মানুষের সেবা করতে গিয়ে নিজের স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখার সুযোগ পাননি মনু মিয়া। ফলে শরীরে বাসা বেঁধেছিল নানা জটিল রোগ। সম্প্রতি তিনি শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। গত ১৪ মে তাকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিছুটা সুস্থ বোধ করলে ছয় দিন আগে তাকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয়। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না।

কবর খুঁড়তে দ্রুত পৌঁছানোর জন্য কয়েক বছর আগে কৃষি জমি বিক্রি করে একটি ঘোড়া কিনেছিলেন মনু মিয়া। এই ঘোড়াই তাকে কর্মচঞ্চল রেখেছিল। একসময় দুর্বৃত্তরা তার ঘোড়াটিকে মেরে ফেলে। এ খবর গণমাধ্যমে আসার পর দেশ-বিদেশ থেকে অনেকে তাকে ঘোড়াসহ নানা সহায়তা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মনু মিয়া কারো সাহায্য নিতে রাজি হননি। তিনি কেবল নিজের সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়েছিলেন, যাতে আবারও অন্যের জন্য কবর খুঁড়তে পারেন। পরিহাস হলো, আজ তার নিজেরই কবর খোঁড়া হয়েছে।

স্থানীয় জয়সিদ্ধি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মনির উদ্দিন বলেন, 'সুদক্ষ গোরখোদক হিসেবে মনু মিয়ার সুনাম ইটনা, মিঠামইন, শাল্লা, আজমিরীগঞ্জসহ পাশের হাওর উপজেলাগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছিল। এমনকি ঢাকার বনানী কবরস্থানসহ দেশের নানা প্রান্তেও তার কবর খোঁড়ার সুনাম ছিল।'

চেয়ারম্যান মনির উদ্দিন আরও বলেন, 'মনু মিয়া সারা জীবন নিঃস্বার্থভাবে মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন। বর্তমানে এমন মানুষ পাওয়া বিরল।'

Comments

The Daily Star  | English
Banks income from investment in bonds

Bond boom contributes half of bank income

The 50 banks collectively earned Tk 39,958 crore from treasury bonds in 2024, up from Tk 27,626 crore in the previous year, according to an analysis of their audited financial statements.

13h ago