ঈদ আনন্দ নেই ভোলার জেলেদের ঘরে

ভোলার জেলে
ছবি: মনির উদ্দিন অনিক

নদীতে মাছ নেই। তাই এবার আনন্দের ঈদ আসেনি ভোলার জেলে পরিবারগুলোতে। ধারদেনা করে কোনোমতে ঈদের আমেজ ধরে রাখার চেষ্টা করছেন তারা।

আজ শনিবার ঈদের দিন দুপুরে ভোলা সদরের শিবপুর জেলেপল্লীতে গিয়ে দেখা যায়, সারি সারি জেলে নৌকা মেঘনার পাড়ে নোঙর করা হয়েছে। নদীতে মাছ না থাকায় বহু জেলে নৌকা আগের মতো আর নদীতে যায় না।

জেলেরা জানান, ৫৮ দিন সমুদ্রে নিষেধাজ্ঞা থাকার পর নদীতে মাছ ধরতে গিয়েও তাদের খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে। অনেক সময় সমুদ্রে গিয়ে মাছ ধরার খরচও উঠছে না। এরমধ্যে আবার আবহাওয়া বেশ কয়েকদিন খারাপ থাকায় নদীতেও মাছ ধরতে যেতে পারেননি অধিকাংশ জেলে। ধারদেনা করে সংসার চালাতে হচ্ছে। এরই মধ্যে কোরবানির ঈদ চলে এসেছে। সেটিও চলছে ধার করেই।

শিবপুর জেলেপল্লীর ইলিশ জেলে আসাদ মাঝি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ধার করে ছেলেমেয়েদের মুখে এক টুকরো মাংস তুলে দিয়েছি ঈদে। এভাবে ধারের ওপরই চলছে আমাদের নিত্যদিন। জানি না এভাবে আর কতদিন চলবে।'

ডালিম মাঝির জেলে নৌকায় তার পরিবারের সদস্যদের রুটি বানাতে দেখা যায়। ঈদ উপলক্ষে তারা রুটি আর মাংস খাবেন।

ডালিম মাঝি জানান, ঈদের জন্য টাকা ধার করেছেন তিনি। সেই টাকা দিয়েই এই আয়োজন।

জেলেপল্লীতে গিয়ে দেখা গেল আক্কেল বেপারী তার সন্তানকে মাংস দিয়ে ভাত খাইয়ে দিচ্ছেন।

সন্তানকে ঈদের খাবার খাইয়ে দিচ্ছেন আক্কেল বেপারী। ছবি: মনির উদ্দিন অনিক
 

তিনি বলেন, 'মাংস কেনার সামর্থ্য নেই। তাই যেটুকু দান করা মাংস পেয়েছি তাই দিয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে খাচ্ছি।'

চরফ্যাশন উপজেলার মেঘনা নদীর জেলে আলাউদ্দিন মাঝি বলেন, 'ছেলেকে নিয়ে ঈদ করার জন্য টাকা ধার করতে হয়েছে। এমনিতে নদীতে মাছ ধরতে গেলে কোনো কোনো দিন মাছ পাওয়া যায় না। তখন পাইকারদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সংসার চালাতে হয়। এখন দীর্ঘদিন নদীতে মাছ না পাওয়ায় আমাদের অবস্থা দিনকে দিন আরও খারাপ হচ্ছে।'

জেলেরা জানান, নদী পলিতে ভরাট হয়ে যাওয়া এরবং আবহাওয়া পরিবর্তন এবং নদী দূষণের কারণে আগের মতো মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই এই মৌসুমে প্রচুর মাছ পাওয়ার কথা থাকলেও খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে তাদের।

বরিশাল বিভাগীয় ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলা সমিতির সভাপতি ইসরাইল পণ্ডিত জানান, বর্তমানে নদ-নদীতে মাছ নেই বললেই চলে। ফলে দক্ষিণ অঞ্চলের প্রায় পাঁচ লাখ জেলে পরিবার অসহায় অবস্থা রয়েছে। সরকার প্রায় অর্ধেক জেলেকে মাসে ৪০ কেজি করে চাল সহায়তা দিলেও, বাকি অর্ধেক জেলেকে অসহায় অবস্থায় কাটাতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, 'আমরা চাই সব জেলেকে সরকার থেকে সহায়তা দেওয়া হোক। এছাড়া বর্তমান চালের পরিমাণও বাড়ানো দরকার।'

বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অফিসের সহকারী পরিচালক এসএম আসাদুজ্জামান বলেন, 'বরিশাল বিভাগে ২ লাখ ৩০ হাজার ৩৮৯ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন। তাদেরকে ভিজিএফ হিসেবে ফেব্রুয়ারি-মার্চ প্রতি মাসে ৪০ কেজি করে ৮ হাজার ১৭৪ মেট্রিক টন চাল দেওয়া হয়েছে।'

তবে এখনও অনেক জেলে নিবন্ধনের বাইরে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন জেলেরা।

বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কান্তি ঘোষ জানান, বরিশালে জেলেদের নতুন জরিপ কার্যক্রম শেষ হয়েছে। তালিকাভুক্ত জেলেদেরকে জেলে কার্ড দেওয়া হলে তাদেরকেও ভিজিএফ দেওয়ার জন্য তালিকাভুক্ত করা হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Eid meat: Stories of sacrifice, sharing and struggle

While the well-off fulfilled their religious duty by sacrificing cows and goats, crowds of people -- less fortunate and often overlooked -- stood patiently outside gates, waiting for a small share of meat they could take home to their families

13h ago