অবিলম্বে মেঘনা আলমের মুক্তি চেয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে ২৭ নারী অধিকারকর্মীর চিঠি

'বিশেষ ক্ষমতা আইনে' গ্রেপ্তার মেঘনা আলমকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে প্রধান উপদেষ্টাকে চিঠি দিয়েছেন দেশের ২৭ নারী অধিকারকর্মী। আজ রোববার তারা ইমেইলে এই চিঠি দেন।
এতে বলা হয়, 'মেঘনা আলমকে গত ৯ এপ্রিল পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ ও ভাটারা থানার কর্মকর্তারা তার মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন ও আদালতের নির্দেশ অবমাননা করে আটক করে।'
ঘটনাটি মেঘনা আলমের ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে প্রকাশ পায় উল্লেখ করে চিঠিতে উদ্বেগ জানিয়ে তারা বলেন, 'ভিডিওতে দেখা যায় বুধবার ৯ এপ্রিলে সূর্যাস্তের পর অস্ত্রে সজ্জিত একদল পুরুষ জন্ম নিবন্ধন যাচাইয়ের নাম করে তার বাসায় জোরপূর্বক ঢোকার চেষ্টা করছে। মেঘনা দরজা খুলতে অস্বীকার করলে তারা দরজা ভেঙে প্রবেশ করে, কোনো পরোয়ানা ছাড়াই তার ডিভাইসগুলো ছিনিয়ে নেয় এবং কোনো কারণ না জানিয়ে, তাদের পূর্ণ পরিচয় না দিয়ে, কোথায় কেন নিচ্ছে না জানিয়ে আটক করে।'
কিছুক্ষণ পরে ফিরে এসে তারা বিল্ডিংটির সিসিটিভি হার্ডড্রাইভ নিয়ে যায় বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
এতে আরও বলা হয়, ৯ এপ্রিল রাতে ভাটারা থানা জানায় মেঘনা আলম ডিবির হেফাজতে আছেন এবং তারা মেঘনার আটকের ব্যাপারে জিডি করতে রাজি হয়নি। ডিবি অফিসে গেলে তারা মেঘনাকে আটকের বিষয়টি অস্বীকার করে।
'প্রায় ২৪ ঘণ্টার অনিশ্চয়তার পর ১০ এপ্রিল জানা যায় মেঘনা আলমকে সেদিন রাত সাড়ে ১০টায় আদালতে তোলা হয় এবং "জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি", "কূটনৈতিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত করা" এবং "দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতির ষড়যন্ত্র" করার অভিযোগে অভিযুক্ত করে বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪ অনুযায়ী ৩০ দিনের জন্য কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়েছে,' বলা হয় চিঠিতে।
এ বিষয়ে ১৩ এপ্রিল হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ রুল জারি করে সরকারের কাছে দুই সপ্তাহের মধ্যে জানতে চান, কেন মেঘনা আলমের আটকের প্রক্রিয়াকে এবং তার ওপর বিশেষ ক্ষমতা আইনের অধীনে আটকাদেশ জারি করা অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং কেন তাকে মুক্তি দেওয়া হবে না।
'কিন্তু ১৭ এপ্রিল মেঘনা আলমকে ধানমন্ডি থানায় দায়েরকৃত একটি নতুন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে বলে আমরা গণমাধ্যম থেকে জানতে পারি, যেখানে তাকে চাঁদাবাজি ও প্রতারণায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। এই সময়ে মেঘনা আলমের পরিবার ও আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না এবং তাদের উপস্থিত থাকারও কোনো সুযোগ দেওয়া হয়নি,' যোগ করা হয় এতে।
চিঠিতে আরও জানানো হয়, মেঘনা আলমের সঙ্গে তার পরিবার ৭ দিন পরে দেখা করার সুযোগ পান, যেহেতু এই আইনে সাক্ষাতের ওপর জোর রেস্ট্রিকশন দেওয়া আছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনুমোদন ছাড়া দেখা না করার।
চিঠিতে বলা হয়, 'এই ঘটনাগুলো গুরুতর মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন ও আদালতের অবমাননার উদ্বেগের সৃষ্টি করে, বিশেষ করে বাংলাদেশের সংবিধানের ২৭, ৩১, ৩২ ও ৩৩ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন, যা যথাযথ প্রক্রিয়া, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করে।'
এ অবস্থায় চিঠিতে এসব বিষয়ের স্পষ্ট ব্যাখ্যা এবং পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করে জানতে চাওয়া হয়, প্রথমে আটক তারপর গ্রেপ্তার দেখানোর প্রক্রিয়া কেন অনুসরণ করা হলো, কে আটকের নির্দেশ দিয়েছে, কী তদন্তের ভিত্তিতে মেঘনাকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে, আটকের ক্ষেত্রে যথাযথ আইনানুগ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে কি না, হেফাজতে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং এসব ঘটনা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা লঙ্ঘন করে কি না।
এতে সই করেছেন:
১. ব্যারিস্টার তাবাসসুম মেহেনাজ, মানবাধিকার আইনজীবী ও অধিকারকর্মী
২. ইশরাত জাহান প্রাচী, মানবাধিকার আইনজীবী ও অধিকারকর্মী
৩. পারসা সানজানা সাজিদ, লেখক ও গবেষক
৪. নাসরিন সিরাজ, নৃবিজ্ঞানী ও চলচ্চিত্র নির্মাতা
৫. মীর্জা তাসলিমা সুলতানা, অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
৬. মোশাহিদা সুলতানা, শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৭. নাজনীন শিফা, শিক্ষক, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ
৮. জিনাত আরা হক, প্রধান নির্বাহী, আমরাই পারি জোট
৯. সায়দিয়া গুলরুখ, সাংবাদিক
১০. ফারজানা ওয়াহিদ, সায়ান, সংগীত শিল্পী ও গীতিকার
১১. আমিনা সুলতানা সোনিয়া, অ্যাকটিভিস্ট ও উন্নয়নকর্মী
১২. আয়লা আমিন, শিল্পী
১৩. সৈয়দা নূর-ই-রায়হান, ইন্ডিপেন্ডেন্ট কন্ট্রাক্টর
১৪. অধরা মাধুরী, গবেষক
১৫. আদিবা রাইসা, উন্নয়নকর্মী
১৬. পদ্মিনী চাকমা, আলোকচিত্রী
১৭. নাজিফা তাসনিম খানম তিশা, থিয়েটারকর্মী
১৮. অরুণিমা তাহসিন, গবেষক ও অ্যাক্টিভিস্ট
১৯. সুমি আজুমান, ভিজ্যুয়াল আর্টিস্ট
২০. কাব্য কৃত্তিকা, গবেষক ও শিক্ষক
২১. শাহেলা আক্তার উমামা, ভিজ্যুয়াল আর্টিস্ট
২২. ওয়াসিমা ফারজানা, এসপায়ারিং এনথ্রোপলজিস্ট ও সোশাল একটিভিস্ট
২৩. দিলশাদ সিদ্দিকা, গবেষক ও নৃবিজ্ঞানী
২৪. সেঁজুতি মাকসুরাত, প্রভাষক, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ
২৫. আনতারা ফারনাজ যান, সংগঠক ও শিক্ষাবিদ
২৬. তৃষিয়া নাশতারান, নারীবাদী সংগঠক ও ফিউচারিস্ট
২৭. মহিমা চৌধুরী, শিক্ষার্থী ও টিম লিডার (অরোধ্য ফাউন্ডেশন)
Comments