বর্ষার শুরুতেই ডেঙ্গুর ঝুঁকি

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাত শুরুর সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার বাহক এডিস মশার প্রাদুর্ভাবের ঝুঁকি বাড়ছে।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, মশার প্রজনন নিয়ন্ত্রণে দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া না হলে এই বর্ষায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১৬ জনের এবং দুই হাজার ৭৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, শনিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের এক বা দুই জায়গায় বজ্রসহ বৃষ্টিপাত এবং দমকা হাওয়াসহ ঝড়ো হাওয়া হতে পারে। অন্যান্য এলাকায় আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে, আকাশে আংশিক মেঘও দেখা যেতে পারে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার জানান, প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫০ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হওয়া উদ্বেগজনক।

দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'এটা তো ক্রমবর্ধমান ঝুঁকির ইঙ্গিত দিচ্ছে। যেসব জায়গা মশার সম্ভাব্য প্রজননস্থল, সেগুলো দ্রুত নির্মূল করে এডিস মশার সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে কর্তৃপক্ষকে।'

কীটতত্ত্ববিদ জিএম সাইফুর রহমান উল্লেখ করেন, সামান্য বৃষ্টিও ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বাড়াতে পারে।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বৃষ্টির পর প্রথম যে মশাগুলোর জন্ম হয়, সেগুলো মশার ঘনত্ব উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে দেয়। এখনই যদি বিটিআই বা অন্যান্য পরিবেশবান্ধব লার্ভিসাইড ব্যবহার করা যায়, তাহলে বড় ধরনের প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধ সম্ভব।'

বিটিআই একটি প্রাকৃতিক মাটিজাত ব্যাকটেরিয়া, যা মশার লার্ভা ও অন্যান্য পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণে জৈব কীটনাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

সাইফুর জানান, গত বছর সিটি করপোরেশনের কার্যক্রমে সমন্বয় ছিল না। তবে এ বছর কিছুটা উন্নতি হয়েছে।

তিনি স্থানীয় প্রশাসনকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে সারাদেশে মশা নিয়ন্ত্রণ ইউনিট গঠনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে বলেন, 'এডিস মশার ঘনত্ব প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করাই সবচেয়ে জরুরি। একবার বৃষ্টি শুরু হলে সঙ্গে সঙ্গে এর প্রজননস্থল ও লার্ভা ধ্বংসে অভিযান চালাতে হবে। এখনই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিলে বড় প্রাদুর্ভাব ঠেকানোর সম্ভব হবে।'

ঢাকার বেশকিছু এলাকার বাসিন্দারা ইতোমধ্যে মশা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। জুরাইনের বাসিন্দা মিজানুর রহমান এর জন্য সিটি করপোরেশনের নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করেছেন।

দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'বাড়ির আশপাশ ও ড্রেনে মশার প্রজননস্থল ইতোমধ্যে সক্রিয় রয়েছে। শিগগির সেখান থেকে প্রাপ্তবয়স্ক মশা ছড়িয়ে পড়বে।'

তিনি জানান, জুরাইনের কিছু অংশে উঁচু রাস্তা নির্মাণের ফলে সারা বছর বাড়ি ও আঙিনায় পানি জমে থাকে, যা এডিস মশার প্রজননে আদর্শ পরিবেশ তৈরি করেছে।

মিজানুর বলেন, 'সিটি করপোরেশন এখনই ব্যবস্থা না নিলে এ বছর যেসব এলাকা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তার মধ্যে অন্যতম হবে জুরাইন।'

সম্প্রতি এ বিষয়ে জানতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উপপ্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. এমদাদুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে জানান, ডেঙ্গু মৌসুমে তাদের কাজের প্রস্তুতি চলছে।

তিনি বলেন, 'নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি মশা নিয়ন্ত্রণকর্মীরা অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন।'

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এক কর্মকর্তাও একই কথা বলেন।

Comments

The Daily Star  | English

Uncovering the silent deaths of migrant women

In the shadows of booming remittance flows and the quiet resilience of Bangladesh’s labour diaspora, a disturbing reality persists: numerous Bangladeshi female migrant workers, particularly those employed as domestic help in Gulf countries, are returning home in coffins.

17h ago