উজান থেকে আসা পলিতে ভরাট তিস্তার বুক

প্রতি বছর জমছে ২ কোটি টন পলি
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানী এলাকায় শুকিয়ে গেছে তিস্তা | ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

উজানে ভারত থেকে আসা পলিতে ভরাট হয়ে গেছে তিস্তা নদীর ১১৫ কিলোমিটার অংশ। মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে প্রায় সমান্তরাল হয়ে উঠেছে নদীর তলদেশ, ফলে কমেছে পানির ধারণ ক্ষমতা।

বর্ষাকালে সামান্য পানিতেই উপচে পড়ে নদীর দুকূল, দেখা দেয় বন্যা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, প্রতি বছর বর্ষার সময় উজানে ভারত থেকে প্রায় দুই কোটি টন পলি তিস্তার পানির সঙ্গে বাংলাদেশে প্রবেশ করে।

সমতল মনে হলেও এটি আসলে তিস্তা নদী | ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা এই পলির কারণে নদীর তলদেশ উঁচু হয়ে গেছে। কখনোই তিস্তা খনন না করায় গত কয়েক বছরে তিস্তা ব্যারেজ ও কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার মান চারবার পরিবর্তন করতে হয়েছে।

এক সময়ের খরস্রোতা নদী তিস্তা প্রবাহিত হয়েছে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার ভেতর দিয়ে। এই পাঁচ জেলার প্রায় দুই কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে তিস্তা নদীর ওপর নির্ভরশীল।

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী গ্রামের কৃষক হাফিজুল ইসলাম (৭০) বলেন, 'দুই যুগ আগেও তিস্তা অনেক গভীর ছিল, এখন নদীর বুক আর পাড় সমান হয়ে গেছে। বর্ষায় সামান্য পানি এলেই বন্যা হয়, আর পানির সঙ্গে আসা বালু জমির উর্বরতা নষ্ট করে, ফসল ফলানো যায় না।'

তিস্তার বুকে ধু ধু বালুচর | ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

একই অভিজ্ঞতা রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মহিপুর গ্রামের কৃষক যামিনী কান্ত রায়ের (৭৬)। তিনি বলেন, 'ড্রেজিং ছাড়া বালু সরানো সম্ভব নয়। দীর্ঘদিন ধরে পলি জমতে জমতে নদী কয়েকটি শাখায় ভাগ হয়ে গেছে। খননের মাধ্যমে এটি একক প্রবাহে আনা হলে তিস্তা নদীতে পানিপ্রবাহ থাকবে। এতে বর্ষাকালে তিস্তাপাড়ে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে না।'

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার বুড়িরহাট এলাকার কৃষক সিরাজুল ইসলাম (৬০) জানান, 'পানি ঢলের সঙ্গে আসা বালু শতাধিক কৃষকের এক হাজারের বেশি বিঘা জমি ঢেকে ফেলেছে। কোথাও কোথাও দুই-তিন ফুট পর্যন্ত বালুর স্তর জমে গেছে, যা সরানো প্রায় অসম্ভব।'

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, 'তিস্তা উত্তরের জীবনরেখা। এটির বয়স ২৩৫ বছর। কিন্তু এ নদী নিয়ে কখনো যৌথ সমীক্ষা হয়নি। নদীটি ১০ হাজার কিউসেক পানি ধারণ করতে পারে, তবে শুষ্ক মৌসুমে এ পরিমাণ পানি থাকে না। বর্ষায় এই প্রবাহ বেড়ে চার লাখ কিউসেক ছাড়িয়ে যায়।'

তিনি বলেন, 'তিস্তার বুক ভরাট হয়ে যাওয়ায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ড্রেজিং করতে হবে, তবে এর জন্য বিপুল অর্থের প্রয়োজন। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ফেরানো সম্ভব হবে, এতে তিস্তাপাড়ের মানুষের দুর্ভোগও কমবে।'

Comments

The Daily Star  | English

20 non-banks on BB red list

As of December last year, they disbursed Tk 25,808 crore in loans against collateral worth Tk 6,899 crore, according to the BB report

10h ago