মুক্তিযুদ্ধে শিববাড়ি ইয়ুথ ক্যাম্প ও জর্জ বাহিনী
(১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় সারা বাংলাদেশে একাধিক আঞ্চলিক বাহিনী গড়ে উঠেছিল। বেঙ্গল রেজিমেন্টের নিয়মিত বাহিনীর প্রশিক্ষিত ও সাব সেক্টরের অধীনে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা যেভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন ঠিক তেমনি আঞ্চলিক বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারাও পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিটি যুদ্ধে অসীম বীরত্ব দেখিয়েছেন। বিজয়ের মাসে আমরা তুলে ধরছি সেইসব বাহিনীর কথা। সপ্তম পর্বে আজ থাকছে শিববাড়ি ইয়ুথ ক্যাম্প ও জর্জ বাহিনীর অনন্য বীরত্বগাঁথা।)
মুক্তিযুদ্ধের সময় জর্জ জে এম দাশ নামে ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসের (ইপিআর) এক অবসরপ্রাপ্ত বাঙালি সেনার হাত ধরে গড়ে উঠেছিল মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বৃহত্তম একটি প্রশিক্ষণ শিবির। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম পর্যায়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের গঙ্গারামপুরের শিববাড়িতে গড়ে উঠা প্রশিক্ষণ শিবির থেকে মুক্তিযুদ্ধকালে প্রশিক্ষণ পেয়েছিলেন আড়াই হাজারেরও বেশি মুক্তিযোদ্ধা। একইসঙ্গে তার হাত ধরেই গড়ে উঠেছিল পৃথক একটি বাহিনী। যা জর্জ বাহিনী নামে পরিচিত ছিল।
মুক্তিযুদ্ধের প্রথম পর্যায়ে প্রশিক্ষক ও সংগঠক এবং পরবর্তীতে রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন জর্জ দাশ। কিংবদন্তিতুল্য এই মানুষটি দিনাজপুরে সবার কাছে পরিচিত ছিলেন 'জর্জ ভাই' নামে।
মুক্তিযুদ্ধে জর্জ দাশ ও তার বাহিনীর বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদনের কাজে সেপ্টেম্বরে দিনাজপুরের বেশ কয়েকটি উপজেলা সফর এবং জর্জ বাহিনীর ১০ জনেরও বেশি মুক্তিযোদ্ধা ও একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা হয় ডেইলি স্টারের। খুঁজে পাওয়া যায় কালের ধুলায় আড়াল হয়ে যাওয়া অনন্য এক বাহিনীর আখ্যান।
জর্জ দাশ ও তার বাহিনীর বীরত্বগাঁথার কথা উল্লেখ রয়েছে একাধিক গ্রন্থে। জর্জ দাশ ও তার বাহিনীর উপর ভিত্তি করে রচিত হয়েছে 'মুক্তিযুদ্ধে দিনাজপুরের জর্জবাহিনীর অবদান ও মহানায়ক জর্জ দাশ' গ্রন্থ। এছাড়া 'দিনাজপুরের ইতিহাস সমগ্র', 'মুক্তিযুদ্ধে বৃহত্তর দিনাজপুর জেলা' গ্রন্থেও আংশিকভাবে উল্লেখ রয়েছে।
জর্জ দাশের সহযোদ্ধা ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, ১৯৫৯ সালে ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসে (ইপিআর) যোগ দিয়েছিলেন জর্জ জে এম দাশ। পায়ে আঘাতের কারণে ১৯৬৯ সালে ল্যান্স কর্পোরাল পদ থেকে জর্জ দাশকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায় পাকিস্তানি বাহিনী। সামরিক জীবনে ফিল্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, প্রশিক্ষক ও বিস্ফোরক বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ছিলেন জর্জ দাশ।
বাহিনীর গঠন
৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ পরবর্তীতে ৮ মার্চ দিনাজপুরে সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। এসময় জর্জ দাশের নেতৃত্বে গোপনে যুবকদের প্রশিক্ষণের কাজও শুরু হয়।
২৫ মার্চের গণহত্যার পর দিনাজপুরের বিরলের বাড়ি থেকে দিনাজপুরে ছুটে আসেন জর্জ দাশ। ২৬ মার্চ রাতে জর্জ দাশসহ দিনাজপুরের রাজনৈতিক নেতা ও সংগঠকদের তৎপরতায় দক্ষিণ কোতোয়ালির গদাগাড়ী হাটে প্রশিক্ষণের জন্য কেবিএম কলেজ ক্যাম্প গঠিত হয়।
২৭ মার্চ বিকেলে ইপিআরের বাঙালি সেনারা বিদ্রোহ ঘোষণা করলে তাদের সঙ্গে হাত মেলান জর্জ দাশ। পাকিস্তানি সেনারা গোলাবর্ষণ শুরু করলে বাঙালি সেনাদের নিয়ে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন জর্জ দাশও। পাকিস্তানি সেনারা তখন পিছু হটলে বাঙালি সেনা ও ছাত্র-তরুণদের নিয়ে কুঠিবাড়ির অস্ত্রাগার অভিযান চালান জর্জ দাশ।
টানা চারদিন যুদ্ধের পর পাকিস্তানি বাহিনী পুরোপুরি পিছু হটায় ৩১ মার্চ দিনাজপুর শত্রুমুক্ত হয়। তখন দিনাজপুর স্টেডিয়াম ও বালুয়াডাঙ্গার অস্থায়ী ক্যাম্পে যুবকদের প্রশিক্ষণের কাজ শুরু করেন জর্জ দাশ।
দিনাজপুর পতন
১২ এপ্রিল সৈয়দপুর সেনানিবাস থেকে পাকিস্তানি সেনারা দিনাজপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হলে দশমাইলে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপক যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে জর্জ দাশের নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধাও অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু পাকিস্তানিদের ভারী অস্ত্রের সামনে টিকতে না পারায় ১৩ এপ্রিল দিনাজপুরের পতন হয়।
জর্জ দাশ ও তার দল পশ্চিমবঙ্গের গঙ্গারামপুর থানার রাজীবপুর মিশনের মিশনারি চার্চে আশ্রয় নেন। এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে রাজীবপুর মিশনের পাশে ছোট পরিসরে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের কাজ শুরু করেন জর্জ দাশ।
পশ্চিমবঙ্গে প্রশিক্ষণ
প্রথম পর্যায়ে জর্জ দাশের সঙ্গে ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মিশনের চারপাশের এলাকা তখন গাছপালা ও আগাছায় ভর্তি ছিল। জর্জ ভাইয়ের নির্দেশে জায়গা সাফ করে তাঁবু টাঙ্গিয়ে আমরা ট্রেনিং ক্যাম্পের কাজ শুরু করি।'
একপর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে পার্শ্ববর্তী শিববাড়ির স্থানীয় এক বাসিন্দার বাগান বাড়িতে প্রশিক্ষণ ক্যাম্প স্থানান্তর করেন জর্জ দাশ।
মুক্তিযুদ্ধকালে শিববাড়ি ক্যাম্পের ডেপুটি ইনচার্জ ছিলেন আনোয়ারুল কাদির জুয়েল। তিনি বলেন, 'রাজীবপুর মিশনে ১৮ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছিল। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বাড়ায় আমরা ১ কিলোমিটার দূরের শিববাড়িতে গিয়ে ওসমান গণির বাগানবাড়ি ও আম বাগানে নতুন ক্যাম্প করি।'
প্রথমে রাজীবপুর মিশন থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার সরবরাহ করা হলেও একপর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় চাহিদার তুলনায় তা অপ্রতুল হয়ে পড়ে। জুয়েল বলেন, 'তখন আমরা জর্জদার নেতৃত্বে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ও লোকাল ট্রেনে জয় বাংলার গান ধরে চাঁদা তুলতাম। দেখা গেল কেউ চাল-ডাল দিত, কেউ কেরোসিন দিত। এভাবে এক বেলা খেয়ে আধপেটা থেকেই আমরা প্রশিক্ষণের কাজ চালিয়েছিলাম।'
এসময় পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকার শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে গিয়ে ছাত্র-তরুণদের মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে উৎসাহিত করতেন জর্জ দাশ। ধীরে ধীরে শিববাড়িতেও মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা আশানুরূপভাবে বৃদ্ধি পায়। প্রথম পর্যায়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ১৮ জন মুক্তিযোদ্ধাকে উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য শিলিগুড়িতে পাঠানো হয়।
ক্রমাগত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্যাম্পের নিকটবর্তী নিমতলার মাঠেও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়।
ক্যাপ্টেন ইদ্রিসের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের মে মাস থেকেই এই অঞ্চলে যুদ্ধ চলমান ছিল। জুলাই মাস থেকে এটি হামজাপুর সাব সেক্টরের আওতাভুক্ত হয়। শিববাড়ি ইয়ুথ ক্যাম্পে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথমে হামজাপুর ক্যাম্পে পাঠানো হতো। এরপর তারা যুদ্ধের জন্য দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতেন।
জুন-জুলাই মাসে শিববাড়ি ইয়ুথ ক্যাম্পে এত অধিক সংখ্যক তরুণের আগমন ঘটে যে স্থান সংকটের কারণে তাদের পতিরাম, প্রাণসাগর, ডাঙ্গারহাট, কুসমন্ডি, পানিহাটি, রায়গঞ্জ, কাটলা, মালন, বটেশ্বরসহ মোট ১২টি ইয়ুথ ক্যাম্পে পাঠানো হয়। এসব ক্যাম্পের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ছিল জর্জ দাশ ও শিববাড়ি ইয়ুথ ক্যাম্পের।
প্রথমদিকে শিববাড়ি ইয়ুথ ক্যাম্পের প্রশিক্ষক ছিলেন তরণী কান্ত রায়। তিনি বলেন, 'প্রথমে আমরা শিববাড়িতে তিনজন প্রশিক্ষক ছিলাম। মাস খানেকের মধ্যে ১৩ জন হয়ে গেলাম। তিন মাস ট্রেনিং দিয়ে আমি ১০০ জনকে নিয়ে পতিরামে চলে যাই। কারণ শিববাড়িতে গণহারে সবাই আসছিল।'
শিববাড়ি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে মালন সাব সেক্টরে যুদ্ধ করেছিলেন রাজেন্দ্রনাথ রায়। তিনি বলেন, 'আমরা ট্রেনিং নেয়ার পরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে যুদ্ধ করি। হামজাপুর সাব সেক্টরে আরও কত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, জর্জদার অধীনে ট্রেনিং পাওয়া বেশিরভাগ মুক্তিযোদ্ধাই অন্য সাব সেক্টরগুলোতে যুদ্ধ করেছেন।'
আগস্ট মাসে বন্যা ও পাহাড় ধসে ৭ নম্বর সেক্টরের হেডকোয়ার্টার তরঙ্গপুর ও পানিহাটি ইয়ুথ ক্যাম্পের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। একইসঙ্গে দেশের অভ্যন্তরে নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ বৃদ্ধি পাওয়ায় সীমান্তে শরণার্থীদের ঢল নামে। তখন প্রচুর তরুণ প্রশিক্ষণের জন্য শিববাড়ি ইয়ুথ ক্যাম্পে উপস্থিত হন।
মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ারুল কাদের জুয়েল বলেন, 'ওরা ক্যাম্পে এসে বললো, আমরা ভাত খেতে আসিনি। যুদ্ধ করতে এসেছি। আমাদের অস্ত্র চালানোর ট্রেনিং দেন, নয়তো আমরা ক্যাম্প পুড়িয়ে দেব। গঙ্গারামপুরে ফোর্থ মাদ্রাজ রেজিমেন্টের ক্যাম্প ছিল। আমরা তাদের ট্রেনিং দিতে অনুরোধ করি। তখন ভারতীয় সেনারা পাঁচশর বেশি তরুণকে ১ মাস ট্রেনিং দেয়।'
অক্টোবরের শেষদিকে হামজাপুর সাব সেক্টর থেকে ঘোষিত হয়, 'প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আগ্রহী তরুণদের দেশের অভ্যন্তরে অপারেশনে পাঠানো হবে।' নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে শিববাড়ি ক্যাম্প থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৪১ জন মুক্তিযোদ্ধাকে আত্মঘাতী স্কোয়াডে অন্তর্ভুক্ত করে মাদ্রাজ রেজিমেন্টের সঙ্গে পাঠানো হয়। একইসঙ্গে শিববাড়িতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা তিনটি গ্রুপে দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন।
একইসঙ্গে আরও চারটি কোম্পানি তৈরি করেন জর্জ দাশ। এর মধ্যে জর্জ দাশের নেতৃত্বে শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা দিনাজপুরের বিরল, হাকিমপুর, রামসাগর, খানপুর, সরস্বতীপুর, জামালপুরৱসহ বিভিন্ন স্থানে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন।
আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধাদের জর্জদা
মুক্তিযুদ্ধে দেশের বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বাসিন্দারাও অংশ নিয়েছিলেন। এদের মধ্যে একটি বড় অংশই যুদ্ধ করেছিলেন জর্জ দাশের অধীনে।
বর্তমানে দিনাজপুরের বিরলের ১০নং রাণী পুকুর ইউনিয়নের হালজায়, রঘুদেবপুর, আছুটিয়া, ঝিনাইকুঁড়ি ও তৎসংলগ্ন বেশ কয়েকটি গ্রামে বসবাস করেন সাঁওতাল, মুন্ডা, কড়া, ওঁরাও, মাহালী, তুরিসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ। মুক্তিযুদ্ধে এসব জাতিগোষ্ঠীর প্রায় শতাধিক বাসিন্দা জর্জ দাশের অধীনে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। এর অন্যতম প্রধান কারণ ছিল জর্জ দাশের গ্রামের বাড়ি এই ইউনিয়নেরই আছুটিয়া গ্রামে। গত কয়েক দশকে এসব ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বেশিরভাগ বাসিন্দাই ভারতে পাড়ি জমিয়েছেন।
এই অঞ্চলের কড়া জনগোষ্ঠীর মধ্যে অন্তত ১৪ জন মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে কিনা কড়া এখনো বেঁচে আছেন। জর্জ দাশের সঙ্গে তিনি ঝিনাইকুঁড়ি গ্রামের একটি ব্রিজ ধ্বংসের অপারেশনে অংশ নিয়েছিলেন।
কিনা কড়া বলেন, 'আমরা দেখলাম ব্রিজটি দিয়ে সীমান্তের একদম কাছাকাছি চলে এসে গোলাগুলি করত পাকিস্তানি মিলিটারি। তখন জর্জদার নেতৃত্বে আমরা ব্রিজটি ভাঙার সিদ্ধান্ত নিই। প্রথমে আমরা হাঁড়িপুকুর দিয়ে সীমান্ত পার হয়ে রাতে ঝিনাইকুঁড়িতে ঢুকি। এরপর ৪০ কেজি বিস্ফোরক ব্রিজে লাগিয়ে ব্রিজ ধ্বংস করি।'
কেবল ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বাসিন্দারাই নন, দিনাজপুর শহরের যেসব খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী বাসিন্দা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন তাদের প্রায় সবাই জর্জ দাশ তথা তার বাহিনীর অধীনেই যুদ্ধ করেছিলেন।
তাদের একজন জর্জ বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা ভিনসেন্ট মারান্ডি। তিনি বলেন, 'দিনাজপুরে তখন প্রচুর খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষ ছিলেন। যেহেতু জর্জদা নিজেও খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী ছিলেন তাই এই অঞ্চলের খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে সবাই তার অনুগত ছিল। আমরা ৬০/৭০ জন খ্রিষ্টান ছেলে জর্জদার বাহিনীতে যুদ্ধ করেছিলাম। এমনটি আমি আর কোথাও দেখিনি।'
পাঁচ ভাই মুক্তিযোদ্ধা
জর্জ দাশেরা ছিলেন পাঁচ ভাই। তারা সবাই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। কুঠিবাড়ী যুদ্ধে জর্জ দাশের সহযোদ্ধা ছিলেন তার ভাই প্রাক্তন ইপিআর সদস্য জেমস এম দাশ লুইস। জর্জ দাশের আরেক ভাই রবার্ট আর এন দাশ ছিলেন মুজিবনগর সরকারের রিলিফ কর্মকর্তা। বাকি দুই ভাই জন এস কে দাশ ও অ্যান্টনি এন এন দাশ মুক্তিযুদ্ধে জর্জ দাশের সার্বক্ষণিক সহযোদ্ধা ছিলেন। জর্জ দাশের সঙ্গে অংশ নিয়েছিলেন বিরল ও ঘুঘুডাঙ্গার যুদ্ধে।
Comments