মুক্তিযুদ্ধে মানিকগঞ্জের হালিম বাহিনী

(১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় সারা বাংলাদেশে একাধিক আঞ্চলিক বাহিনী গড়ে উঠেছিল। বেঙ্গল রেজিমেন্টের নিয়মিত বাহিনীর প্রশিক্ষিত ও সাব সেক্টরের অধীনে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা যেভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন ঠিক তেমনি আঞ্চলিক বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারাও পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিটি যুদ্ধে অসীম বীরত্ব দেখিয়েছেন। বিজয়ের মাসে আমরা তুলে ধরছি সেইসব বাহিনীর কথা। পঞ্চম পর্বে আজ থাকছে হালিম বাহিনীর অনন্য বীরত্বগাঁথা।)

মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই মানিকগঞ্জসহ ঢাকার উত্তরাংশে বিস্তৃত এক অঞ্চলজুড়ে গড়ে উঠেছিল স্বতন্ত্র এক আঞ্চলিক বাহিনী। অবসরপ্রাপ্ত বাঙালি সেনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন আবদুল হালিম চৌধুরীর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা বাহিনীটি পরিচিত ছিল 'হালিম বাহিনী' নামে।

মুক্তিযুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে মানিকগঞ্জ ট্রেজারি থেকে সংগৃহীত থ্রি নট থ্রি রাইফেল নিয়ে শুরু করা হালিম বাহিনীতে একপর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল প্রায় দুই হাজারে।

'বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ সেক্টর ভিত্তিক ইতিহাস (সেক্টর-২)' গ্রন্থ সূত্রে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে মানিকগঞ্জের সদর, সিঙ্গাইর, ঘিওর, শিবালয়, দৌলতপুর, হরিরামপুর, ঢাকার দোহার, নবাবগঞ্জ, ধামরাই, সাভার, মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরসহ ২২টি থানার প্রায় ৮০০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছিল হালিম বাহিনীর বিস্তৃতি।

হালিম বাহিনীর উপর বিস্তারিত প্রতিবেদনের কাজে চলতি বছরের জুন মাসে সরেজমিনে মানিকগঞ্জের সদর, ঘিওর, শিবালয়, হরিরামপুর, সিঙ্গাইর, ঢাকার দোহার ও নবাবগঞ্জ সফর করেন এই প্রতিবেদক। এসময়ে হালিম বাহিনীর অন্তত ৫০ জন মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়।

অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ

হালিম বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে আলাপচারিতা ও 'বাাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ সেক্টর ভিত্তিক ইতিহাস (সেক্টর- ২)' গ্রন্থ সূত্রে জানা যায়, ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি বাহিনী কর্তৃক বর্বরোচিত গণহত্যার খবরে মানিকগঞ্জে গঠন করা হয় ৭ সদস্য বিশিষ্ট 'মানিকগঞ্জ স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিষদ'।

পরিষদের অন্যতম সদস্য ছিলেন ক্যাপ্টেন আবদুল হালিম চৌধুরী।

২৭ মার্চ ক্যাপ্টেন হালিম চৌধুরীর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা মানিকগঞ্জের ট্রেজারির তালা ভেঙে বেশ কিছু রাইফেল ও কয়েক হাজার গুলি তুলে নেন। এদিন অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ খানের সভাপতিত্বে শিবালয়ের মালুচি উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় শিবালয়ের প্রতিটি ইউনিয়নে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রশিক্ষণের সিদ্ধান্ত হয়।

একইসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে সর্বসাধারণের অংশগ্রহণের জন্য ২৮ মার্চ হরিরামপুরের আন্ধামানিক মাদ্রাসায়, মুক্তিকামী জনতার মধ্যে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকের ধারাবাহিকতায় ২৯ মার্চ থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত ৯ দিন সুতালড়ী, চাঁদপুর, দিয়াবাড়ি, রামকৃষ্ণপুর, ঝিটকা, লেছড়াগঞ্জ, ধুলসুড়াসহ বিভিন্ন স্কুল ও হাটবাজারে বৈঠক করে সর্বাত্মক প্রতিরোধ যুদ্ধ গড়ে তোলার নির্দেশনা দেয়া হয়।

ট্রেজারি থেকে সংগ্রহীত অস্ত্র দিয়ে প্রাথমিকভাবে মানিকগঞ্জ শহরে প্রশিক্ষণের কাজ শুরু হয়। ৮ এপ্রিল পাকিস্তানি সেনারা মানিকগঞ্জ শহরে প্রবেশ করলে ক্যাপ্টেন হালিম ২৬টি রাইফেল ও ২০০ গুলি নিয়ে মানিকগঞ্জ থেকে মালুচি গিয়ে আজিমনগরের মতিন চৌধুরীর কাছে পাঠিয়ে দেন।

এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকেই ক্যাপ্টেন হালিমের নির্দেশে মানিকগঞ্জের মহকুমা সদর, শিবালয়, ঘিওর, হরিরামপুর ও সিঙ্গাইরে বাহিনীর তত্ত্বাবধানে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের কাজ শুরু হয়।

মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে পদ্মা নদীর সম্প্রতি তোলা ছবি। এই নদীর তীরে ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে হালিম বাহিনী তাদের সদরদপ্তর স্থাপন করে। ছবি: আহমাদ ইশতিয়াক

এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে নিরাপত্তার খাতিরে হরিরামপুরের পদ্মা তীরবর্তী জনপদে হালিম বাহিনীর সদর দপ্তর গড়ে তোলা হয়।

মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে রাজাকার ও শান্তি কমিটির সহযোগিতায় হরিরামপুরের হরিণায় ক্যাম্প স্থাপন করে পাকিস্তানি বাহিনী। এরপরই মানিকগঞ্জের সর্বত্র হালিম বাহিনীর সঙ্গে পাকিস্তানি বাহিনীর একের পর এক যুদ্ধ শুরু হয়।

মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকারদের বিরুদ্ধে অন্তত ৪০টিরও বেশি যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন হালিম বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা। এসব যুদ্ধে কয়েকশ পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকার নিহত হয়েছিল।

পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে হালিম বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা যেসব যুদ্ধে করেছিলেন তার মধ্যে প্রথম পর্যায়ের উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ ছিল ১৭ জুনের সিঙ্গাইরের চারিগাঁও লঞ্চঘাট অপারেশন।

মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের পাটগ্রাম অনাথবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয়। স্কুলের পাশেই ছিল হালিম বাহিনীর হরিণা প্রশিক্ষণ ক্যাম্প। স্কুলটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ছবি কৃতজ্ঞতা: তোয়েবুল আজহার

১৭ জুন সিঙ্গাইরের কালীগঙ্গা নদীপাড়ের চারিগাঁওতে পজিশন নিয়ে অ্যামবুশের ফাঁদ পাতেন মুক্তিযোদ্ধারা। দুপুরে পাকিস্তানি লঞ্চটি অ্যামবুশ পজিশনে ঢুকতেই অতর্কিত আক্রমণ করেন মুক্তিযোদ্ধারা। যুদ্ধে অংশ নেয়া মুক্তিযোদ্ধা ইয়াকুব হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দুটো লঞ্চে করে ওরা আসছিল। আমরা যে অ্যামবুশ বসিয়েছি ওরা বুঝতেই পারেনি। আমাদের আক্রমণে ওরা সামান্য প্রতিরোধটুকুও করতে পারেনি। লঞ্চের মধ্যে ১২/১৪ জন মিলিটারি ছিল সবাই গুলিতে মারা গেছে। পরে লঞ্চে থাকা গোলাবারুদ নিয়ে দুটো লঞ্চই আমরা পানিতে ডুবিয়ে দিই।'

কালীগঙ্গা নদীর মতো ধলেশ্বরী ও পদ্মা নদীতে একাধিক আক্রমণ চালিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীকে রীতিমতো পর্যদুস্ত করে ফেলেছিলেন হালিম বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা।

সেপ্টেম্বর মাসে হরিরামপুরের পদ্মা নদীতে ক্যাপ্টেন হালিমের নেতৃত্বে মাত্র ৮ জন মুক্তিযোদ্ধা একটি পাকিস্তানি লঞ্চে অতর্কিত হামলা চালান। এই হামলায় ১১ পাকিস্তানি সেনা ও ৩ রাজাকার নিহত হয়। পরে লঞ্চটি থেকে প্রচুর অস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধার করেন মুক্তিযোদ্ধারা।

কেবল জলেই নয়, স্থলপথেও পাকিস্তানি বাহিনীকে পুরোপুরি পর্যদুস্ত করেছিলেন হালিম বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা।

২৯ আগস্ট মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার নয়াডিঙ্গি ব্রিজ অপারেশনে মুক্তিযোদ্ধারা ব্রিজটি অনেকাংশেই চলাচলের অনুপযুক্ত করে দিয়েছিলেন।

পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে একের পর এক যুদ্ধে হালিম বাহিনীর গোলাবারুদের সংগ্রহ কমে আসছিল। তাই অস্ত্র সহযোগিতা পাওয়ার লক্ষ্যে সেপ্টেম্বর মাসে ভারতের ত্রিপুরার মেলাঘরে যান ক্যাপ্টেন আবদুল হালিম চৌধুরী। মেলাঘরে তার সঙ্গে সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফের সঙ্গে দেখা যায়।

মুক্তিযুদ্ধের অন্য মাসগুলোতে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে হালিম বাহিনীর একাধিক যুদ্ধ সংঘটিত হলেও অক্টোবর মাসে মানিকগঞ্জের বিভিন্ন অঞ্চলে পাকিস্তানিদের মেরুদণ্ড পুরোপুরি ভেঙে দেন হালিম বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা।

মুক্তিযুদ্ধের ১৩ অক্টোবর দুর্ধর্ষ অপারেশন চালিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর হরিরামপুরের হরিণা ক্যাম্প দখল করেন হালিম বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা। শত্রুপক্ষ বেলুচ সেনাদের সাহায্য নিয়েই এই যুদ্ধ জয় করেছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা।

হালিম বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা আওলাদ হোসেন বলেন, 'চার বেলুচ বাকি পাকিস্তানিদের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে আমাদের পক্ষে যুদ্ধ করবে বলে প্রস্তাব পাঠায়। ১৩ অক্টোবর প্রথমে চতুর্দিক থেকে পাকিস্তানি ক্যাম্প ঘিরে ফেলে আমরা আক্রমণ চালাই। আমাদের আক্রমণে ৫৩ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়।

হরিণা ক্যাম্প দখলের যুদ্ধে পাকিস্তানিদের ছোঁড়া গ্রেনেডে গুরুতর আহত হন বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা মাহফুজুর রহমান খান। পরবর্তীতে ১৫ অক্টোবর শহীদ হন তিনি।

পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে হালিম বাহিনীর সবচেয়ে বিধ্বংসী যুদ্ধ ছিল সিঙ্গাইরের গোলাইডাঙ্গার যুদ্ধ। মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো ক্ষতি ছাড়াই এই যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর ৮২ সেনা নিহত হয়েছিল।

গোলাইডাঙ্গা স্কুলে ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প। ২৮ অক্টোবর গোপনসূত্রে মুক্তিযোদ্ধারা খবর পান ১০/১২টি নৌকায় করে পাকিস্তানি সেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পটি দখলের লক্ষ্যে এগিয়ে আসছে। তখন তবারক হোসেন লুডুর নেতৃত্বে অ্যামবুশের ফাঁদ পাতেন মুক্তিযোদ্ধারা। পাকিস্তানি সেনারা প্রথমে স্কুলে ঢুকে মুক্তিযোদ্ধাদের না দেখতে পেয়ে নৌকাযোগে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। একপর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অ্যামবুশ পজিশনে ঢুকতেই

দুর্ধর্ষ আক্রমণ গড়ে তোলেন মুক্তিযোদ্ধারা। আক্রমণে পাকিস্তানিদের সব নৌকাই ডুবে যায়। পানিতে ডুবে বেশিরভাগ সেনা মারা যায়। বাকিরা পানিতে ঝাঁপ দিলে মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে মারা যান।

যুদ্ধে অংশ নেয়া মুক্তিযোদ্ধা লোকমান হোসেন বলেন, 'সেদিন আমরা মাত্র ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধা সামান্য অস্ত্র নিয়ে পাকিস্তানিদের পানিতে নামিয়ে, কাদায় ডুবিয়ে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছিলাম। টানা তিনদিন স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকে সেই যুদ্ধের বীরত্ব প্রচার করা হয়েছিল।

মুক্তিযুদ্ধে হালিম বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধগুলোর মধ্যে আরও ছিল ১৩ জুলাই ও অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে বায়ড়া গ্রামের যুদ্ধ, ১৮ জুলাই মাচাইন বাজারের যুদ্ধ, ৯ আগস্ট মালুচি গ্রামের অ্যামবুশ, ২৮ নভেম্বরের ঘিওরের নারচি ও কুস্তাগ্রামের যুদ্ধ। ৮ ডিসেম্বরে শিবালয়ের দাসকান্দি গ্রামের যুদ্ধ। ১৪ ডিসেম্বরে সিঙ্গাইরের বালিরটেকের খাদ্য গুদাম লুট প্রভৃতি।

বাহিনীর গঠনতন্ত্র ও সাংগঠনিক কাঠামো

মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময়েই হালিম বাহিনীর স্বতন্ত্র গঠনতন্ত্র বজায় ছিল। বাহিনী প্রধান ছিলেন ক্যাপ্টেন আবদুল হালিম চৌধুরী। বাহিনীর সহযোগী পরিচালক ছিলেন আবদুল মতিন চৌধুরী (সার্বিক) ও অধ্যক্ষ আবদুর রউফ খান (অপারেশন)। অতিরিক্ত পরিচালক ছিলেন আওলাদ হোসেন।

যুদ্ধকালীন সময়ে হালিম বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাদের তিনটি ইউনিট ও পাঁচটি কোম্পানিতে ভাগ করা হয়েছিল। অধ্যক্ষ রউফ খানের নেতৃত্বে হরিরামপুর-শিবালয়-ঘিওর-দৌলতপুর অঞ্চল। তবারক হোসেন লুডুর নেতৃত্বে সিঙ্গাইর-মানিকগঞ্জ-সাটুরিয়া ও সাভার অঞ্চল এবং সিরাজউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন ইউনিটটি ছিল ঢাকার নবাবগঞ্জ-দোহার-কেরানীগঞ্জে।

হালিম বাহিনীতে সর্বমোট পাঁচটি কোম্পানি থাকলেও প্রথমদিকে চারটি কোম্পানি ছিল। অক্টোবরে সম্মুখযুদ্ধে বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা মাহফুজ শহীদ হলে তার নামকরনে মাহফুজ কোম্পানি গঠিত হয়। কোম্পানি কমান্ডাররা ছিলেন যথাক্রমে - আবদুর রাজ্জাক(আলফা), আবুল বাশার (ব্রাভো), মৈনুদ্দিন চৌধুরী/ সিপাই আবদুল হাকিম (চার্লি), আবুল খালেক (ডেল্টা) ও রেজাউর রহমান(মাহফুজ কোম্পানি)।

গণচাঁদাতেই চলত বাহিনী

মুক্তিযুদ্ধে হালিম বাহিনীর কৃতিত্ব ছিল গণমানুষের। এমন মন্তব্য করে বাহিনীর অতিরিক্ত পরিচালক ও মুক্তিযোদ্ধা আওলাদ হোসে বলেন, 'স্থানীয় গ্রামবাসীরা না থাকলে আমাদের পক্ষে কিছুই করা সম্ভব ছিল না। আমরা গ্রামের ধনাঢ্য ব্যক্তি ও বাজারের ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা তুলতাম। সেই অর্থেই বাহিনী পরিচালিত হতো। এছাড়া গ্রামের মানুষই সার্বক্ষণিক আমাদের খাবার ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করত। অস্ত্র সরবরাহের লক্ষ্যে ভারতে দুই মাস অবস্থানের পর নভেম্বর মাসে ক্যাপ্টেন হালিমকে ঢাকা-মানিকগঞ্জ-মুন্সিগঞ্জের ২২টি থানার আঞ্চলিক কমান্ডারের দায়িত্ব দেয়া হয়। নভেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহে বিপুল সেনা ও অস্ত্র নিয়ে দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন ক্যাপ্টেন হালিম। বিজয়ের পূর্ব পর্যন্ত বাকিটা সময় এই বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা রণাঙ্গনেই বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করেছিল।

স্মরণে শহীদ মিরাজ

শহীদ এ কে এম মিরাজ উদ্দিন। পোলভল্টে স্বর্ণজয়ী ক্রীড়াবিদ মিরাজ ছিলেন হালিম বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা। ৩ নভেম্বর গড়পাড়া ও ঘিওরে এক সভা শেষে ফেরার পথে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজাকারেরা তাদের ঘেরাও করে। এসময় বাকিরা পালিয়ে যেতে পারলেও মিরাজ রাজাকারদের হাতে ধরা পড়েন।

হালিম বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা জাহিদুর রহমান খান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রাজাকারেরা মূলত লোকমানকে ধরতে এসেছিল। যেহেতু লোকমান গোলাইরডাঙ্গা যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিল। লোকমানকে ধরতে গেলে লোকমান ঘুষি দিয়ে রাজাকারকে সরিয়ে ওখান থেকে পালিয়ে যায়। লোকমানের দেখাদেখি মিরাজও দৌড় দেয়। লোকমান ধানখেত দিয়ে চলে যাওয়ায় ধরা পড়েনি। মিরাজকে ওরা ধরে ফেলে।'

পরবর্তীতে রাজাকারেরা মিরাজকে আটক করে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে তুলে দেয়। পাকিস্তানি সেনারা তাকে সেনানিবাসে নিয়ে প্রচণ্ড নির্যাতন শেষে ঢাকা কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। এর পর থেকে মিরাজের খোঁজ আর পাওয়া যায়নি।

 

Comments

The Daily Star  | English

Babar, 5 others acquitted in 10-truck arms haul case

On January 30, 2014, a Chattogram court handed down death penalty to 14 people in the 10 truckloads of firearms case

1h ago