মুক্তিযুদ্ধে আত্রাই পাড়ের ওহিদুর বাহিনী
(১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় সারা বাংলাদেশে একাধিক আঞ্চলিক বাহিনী গড়ে উঠেছিল। বেঙ্গল রেজিমেন্টের নিয়মিত বাহিনীর প্রশিক্ষিত ও সাব সেক্টরের অধীনে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা যেভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন ঠিক তেমনি আঞ্চলিক বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারাও পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিটি যুদ্ধে অসীম বীরত্ব দেখিয়েছেন। বিজয়ের মাসে আমরা তুলে ধরছি ১০টি বাহিনীর কথা। প্রথম পর্বে আজ থাকছে ওহিদুর বাহিনীর অনন্য বীরত্বগাঁথা।)
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে রাজশাহীর বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে গড়ে উঠেছিল এক দুর্ধর্ষ প্রতিরোধ বাহিনী। পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি ও কৃষক নেতা ওহিদুর রহমানের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা বাহিনীটি পরবর্তীতে 'ওহিদুর বাহিনী' নামে পরিচিতি পায়।
শুরুতে শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে গঠিত হলেও পরে বাহিনীতে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়ে যায়।
মুক্তিযুদ্ধ গবেষক মিজানুর রহমান মিজান ও ওহিদুর রহমানের 'মুক্তি সংগ্রামে আত্রাই' বই থেকে জানা যায়, বর্তমানে নওগাঁ জেলার সদর থেকে রাণীনগর, আত্রাই হয়ে পূর্বে নাটোরের সদর, নলডাঙ্গা, সিঙড়া ও বগুড়ার নন্দীগ্রাম পর্যন্ত এবং পশ্চিমে রাজশাহীর বাগমারা, পুঠিয়া উপজেলা পর্যন্ত চারটি জেলার ১৪টি থানা জুড়ে ছিল ওহিদুর বাহিনীর বিস্তৃতি।
ওহিদুর বাহিনীর বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদনের কাজে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সরেজমিনে নওগাঁ, রাজশাহী ও নাটোরের একাধিক উপজেলায় যান এই প্রতিবেদক। এসময় ওহিদুর রহমানসহ বাহিনীর পঞ্চাশ জনের বেশি মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে কথা হয়।
তারা জানান, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের বিপক্ষে পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির অবস্থান থাকা সত্ত্বেও ওহিদুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন নেতা সংখ্যাগরিষ্ঠতা উপেক্ষা করে যেভাবেই হোক যোগদানের সিদ্ধান্ত নেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকারদের বিরুদ্ধে অর্ধশতাধিক সফল যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন ওহিদুর বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা। এসব যুদ্ধে কয়েকশ পাকিস্তানি সেনা ও অসংখ্য রাজাকার হতাহত হয়েছিলেন। একইসঙ্গে বাহিনীর দখলে এসেছিল প্রচুর অস্ত্র, গোলাবারুদ ও রশদ।
২৫ মার্চের পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরোচিত গণহত্যার সংবাদ নওগাঁয় এসে পৌঁছালে ২৬ মার্চ নওগাঁর সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। মার্চের শেষের দিকে সংগ্রাম পরিষদের নির্দেশে আত্রাইতে চলে আসেন ওহিদুর রহমান। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে গঠিত হয় ১১ সদস্য বিশিষ্ট আত্রাই থানা সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ।
প্রথমেই শুরু হয় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের কাজ। ওহিদুর বাহিনীর সদস্য খালেকুজ্জামান বুলু ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রাথমিকভাবে আত্রাই থানার কাছে সাহেবগঞ্জ মাঠে বাঁশের লাঠি ও কাঠের ডামি বন্দুক দিয়ে আমরা প্রশিক্ষণ শুরু করি।'
১০ এপ্রিল আত্রাইয়ের তেঁতুলিয়া গ্রামের গান্ধী আশ্রমে অনুষ্ঠিত কর্মীসভায় অস্ত্র সংগ্রহের জন্য ওহিদুর রহমানের নেতৃত্বে আত্রাই থানা দখলের সিদ্ধান্ত হয়।
ওহিদুর রহমান বলেন, 'থানা আক্রমণের জন্য আমরা ২৫ জন কর্মীকে তিনটি ভাগে ভাগ করি। এক গ্রুপ অস্ত্রাগার লুট করবে, এক গ্রুপ ডিউটি অফিসার থেকে পিস্তল কেড়ে নিবে, অন্য গ্রুপ বাইরের তৎপরতা মোকাবিলা করবে। থানায় ঢুকে প্রথমেই আমি ডিউটি অফিসারকে ঘুষি মারতেই সে পিস্তল রেখে পালালো। একটি গ্রুপ অস্ত্রাগারের তালা ভেঙে ৩৪টি রাইফেল ও দুই হাজার গুলি উদ্ধার করে। সেই অস্ত্র দিয়ে দুই জায়গায় প্রশিক্ষণ শুরু হয়।'
ওহিদুর বাহিনীর সদস্য আবদুল মান্নান বলেন, 'প্রথমে সাহেবগঞ্জ মাঠে ১০ দিনের ট্রেনিং হয়। এপ্রিলের শেষে আত্রাইয়ে পাকিস্তানি বাহিনী এলে কয়সা গ্রামের ভবানীপুর স্কুল মাঠে ট্রেনিং শুরু হয়।'
প্রাথমিকভাবে ওহিদুর বাহিনীতে কৃষক ও নেতাকর্মীরা যোগ দিলেও একপর্যায়ে ছুটিতে থাকা ও পালিয়ে আসা বাঙালি সেনা, পুলিশ, ইপিআর সদস্যসহ ছাত্র-যুবক-শ্রমিকসহ সর্বস্তরের মানুষ ওহিদুর বাহিনীতে যোগ দেয়। ফলে বাহিনীটি বিশাল অঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।
ওহিদুর বাহিনীর এই যুদ্ধাঞ্চল জুড়ে প্রবাহিত হয়েছে আত্রাই, ছোট যমুনা, ফক্কিনী, খাজুরা ও নাগরসহ ৬টি নদী ও চলন বিলসহ ১৩টি বিল।
নদীমাতৃক হওয়ায় ওহিদুর বাহিনীর কার্যক্রম পরিচালিত হতো জলপথে। ওহিদুর বাহিনীর সদস্য হাসানুজ্জামান ভুলু বলেন, আমাদের বাহিনীতে ৫২টি বড় পানসি নৌকা ছিল। লোকে বলতো 'ওহিদুরের বায়ান্ন ডিঙ্গি'। এছাড়া বাহিনীর অস্ত্রাগার, চিকিৎসা, রসদ সরবরাহ এবং গোয়েন্দা তৎপরতার জন্য ছিল আলাদা নৌকার ব্যবস্থা।
মুক্তিযুদ্ধে এ বাহিনীর স্থায়ী কোনো হেডকোয়ার্টার ছিল না। তবে কয়েকটি অস্থায়ী ঘাঁটি ছিল। বিল হালতির মধ্যে থাকা খোলাবাড়িয়া গ্রাম ছিল তেমনই একটি ঘাঁটি। এছাড়া ঝিকরা, মিরাট, হাঁসাইগাড়িতেও ওহিদুর বাহিনীর অস্থায়ী ঘাঁটি ছিল।
'মুক্তিযুদ্ধে ওহিদুর বাহিনী' বই ও ওহিদুর বাহিনীর সদস্যদের ভাষ্যে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময়েই স্বতন্ত্র গঠনতন্ত্র বজায় ছিল ওহিদুর বাহিনীতে। বাহিনীর প্রধান সহকারী কমান্ডার ছিলেন আলমগীর কবির। দ্বিতীয় ও তৃতীয় সহকারী কমান্ডার ছিলেন হাবিলদার আবদুল মজিদ ও ইমদাদুর রহমান।
মুক্তিযুদ্ধের মে ও জুন মাসে ওহিদুর বাহিনীর একের পর এক সাঁড়াশি ও গেরিলা আক্রমণে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিল পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকারেরা। অন্যদিকে একের পর এক অপারেশনে ওহিদুর বাহিনীর অস্ত্র, গোলাবারুদ ও ফুরিয়ে এসেছিল। এই অবস্থায় জুলাই মাসে অস্ত্র সংগ্রহের জন্য ১৫ হাজার টাকা নিয়ে ভারতের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন ওহিদুর রহমান ও বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা মনজুর আলম, কাইউম ও আবুল হাসেম। কিন্তু পথে রাজাকারদের হাতে ধরা পড়েন তারা।
মনজুর আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আত্রাই থেকে ৫০ মাইল হেঁটে ধামইরহাটের লক্ষণপাড়ায় ওহিদুরের দুই বন্ধুর বাড়িতে উঠলাম আমরা। দুপুরে গোসল করতে পুকুরে নামতেই চারপাশ থেকে রাজাকাররা ঘিরে ফেলল। ওরা আমাদেরকে পুলিশে দিল। তখন থানার বাঙালি দারোগাকে গোপনে আমরা ১৫ হাজার টাকা দিয়ে হাত করলাম। ওরা আমাদেরকে পাকিস্তানি মেজরের হাতে তুলে দিল। এরমধ্যে আমাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ, মারধর করলেও আমরা মুক্তিযুদ্ধ করছি পুরোপুরি অস্বীকার করলাম।'
কীভাবে ছাড়া পেলেন জানতে চাইলে মনজুর আলম বলেন, 'তিন দিন জিজ্ঞাসাবাদের পর একপর্যায়ে মেজর আমাদের নওগাঁর শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান বদিউল আলমের হাতে তুলে দিল। বদিউল তখন আমাদের তার বাড়িতে তালাবদ্ধ করে রেখেছিল। দরজার সামনে সেন্ট্রি মাতাল থাকায় ওই সুযোগে আমরা সেখান থেকে পালালাম। দেখলাম টাকাও গেল, সঙ্গে থাকা রিভলবারও গেল। তাই আমাদের আর ভারতে যাওয়া হলো না।'
ভারত যেতে না পারায় অস্ত্র সংগ্রহের জন্য একের পর এক থানা আক্রমণ চালানো শুরু করেন ওহিদুর বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা। ১৪ আগস্ট পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবসে রাজশাহীর বাগমারা থানা দখল ছিল ওহিদুর বাহিনীর তেমনই একটি অপারেশন।
ওহিদুর বাহিনীর সদস্য খালেকুজ্জামান বুলু বলেন, 'স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের সুযোগে থানা দখল করে অস্ত্র নেয়াই ছিল আমাদের মূল লক্ষ্য।'
আক্রমণের দিন ওহিদুর বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা জানতে পারেন থানায় কোনো পাকিস্তানি সেনার উপস্থিতি না থাকলেও কিছু বিহারী ও বাঙালি পুলিশ রয়েছে। এদিন রাত দুটোর দিকে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে মুক্তিযোদ্ধারা থানা আক্রমণ করেন।
এ বিষয়ে খালেকুজ্জামান বুলু বলেন, 'আমাদের প্রথম আক্রমণে ওরা প্রতিরোধ গড়ে তুললে, আমরা পিছু হটার সিদ্ধান্ত নিই। ১৫ আগস্ট সকালে আবার থানায় আক্রমণ করে থানা দখল করে ৪০টি রাইফেল ও ২ হাজার গুলি পাই।'
কেবল ১৫ আগস্টই নয়, মুক্তিযুদ্ধের ২১ নভেম্বর দ্বিতীয় দফায় বাগমারা থানায় আক্রমণ চালিয়ে থানা দখল করেছিলেন ওহিদুর বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা।
বাগমারা থানার মতো আত্রাই থানাতেও দ্বিতীয় দফায় আক্রমণ চালিয়েছিলেন ওহিদুর বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের ৯ ডিসেম্বর নওগাঁর রাণীনগর থানায় আক্রমণ করে ৪০ জন রাজাকারকে আত্মসমর্পণ করিয়ে ৫০টিও বেশি রাইফেল নিজেদের দখলে নেন ওহিদুর বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা।
ওহিদুর বাহিনীর থানা আক্রমণের বিষয়ে বলতে গিয়ে ওহিদুর রহমান বলেন, 'যেহেতু আমরা ভারতে যেতে পারিনি। তাই আমাদের অস্ত্র সংগ্রহের জন্য প্রধান লক্ষ্য ছিল থানা আক্রমণ করা। থানা আক্রমণ ও রাজাকার ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে আমরা প্রচুর অস্ত্রের জোগান পেয়েছিলাম।'
নওগাঁ, রাজশাহী ও নাটোরের বিভিন্ন রাজাকার ক্যাম্পে আক্রমণ চালিয়ে প্রচুর অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করেছিলেন ওহিদুর বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অপারেশনগুলো ছিল বেগুনবাড়ি রাজাকার ক্যাম্প, বাঁইগাছা রাজাকার ক্যাম্প, সোনাডাঙ্গা রাজাকার ক্যাম্প, মৈনম রাজাকার ক্যাম্প তাহেরপুর রাজাকার ক্যাম্প, সড়ককুতিয়া রাজাকার ক্যাম্প প্রভৃতি।
পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকারদের বিরুদ্ধে ওহিদুর বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা যেসব যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন তার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ ছিল ৬ সেপ্টেম্বর আত্রাইয়ের সাহাগোলা ব্রিজ ধ্বংস। এই যুদ্ধে শতাধিক পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়।
ওহিদুর বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আনিসুর রহমান বলেন, 'গোপনসূত্রে খবর পেয়েছিলাম পাকিস্তানিদের ট্রেন নাটোর থেকে আত্রাই হয়ে নওগাঁ যাবে। তখনই সাহাগোলা ব্রিজ ধ্বংসের সিদ্ধান্ত হয়। আমাদের কাছে মাইন ডেটোনেটর না থাকায় এরপর রাজা-মালেক গ্রুপকে জানানো হয়। ঠিক হয় যৌথভাবে অপারেশন হবে। অপারেশনের রাতে নৌকায় চেপে সাহাগোলা স্টেশন ও ব্রিজের মাঝামাঝি নেমে ক্রলিং করে ব্রিজ পাহারায় নিযুক্ত ৭ রাজাকারকে আটক করা হয়। রাজা-মালেক গ্রুপ ব্রিজে ডেটোনেটর সেট করে। রেললাইনের দুই পাশে অ্যান্টি ট্যাঙ্ক মাইন পেতে এলএমজি ও এসএমজি নিয়ে পজিশন নিই। ডেটোনেটরে আগুন দেয়ার পরপরই বিস্ফোরণে ব্রিজের বড় অংশ ভেঙে পড়ে। রাতে ঝড়বৃষ্টি হওয়ায় আত্রাইয়ে থাকা মিলিটারিরা কোনো শব্দ শোনেনি।'
অপারেশনে অংশ নেয়া ওহিদুর বাহিনীর আরেক মুক্তিযোদ্ধা মোজাহার হোসেন বলেন, 'হঠাৎ দেখলাম ট্রেনটা ব্রিজের কাছাকাছি এসে ইঞ্জিনের আলো নিভিয়ে দিয়ে ব্রিজে উঠল। ঠিক তখনই ঝাঁকি দিয়ে ট্রেনের ৬টা বগির পাঁচটা বগিই খালের পানিতে ডুবে গেল। সঙ্গে-সঙ্গে শেষের বগিতে থাকা মিলিটারিরা গুলি শুরু করলো। আমরাও তিনটি এলএমজি থেকে পাল্টা গুলি চালালাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওদের গুলি থেমে গেল। বুঝলাম যারা বাকি ছিল তারাও শেষ।'
মুক্তিযুদ্ধে ওহিদুর বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধগুলোর মধ্যে আরও ছিল তারানগর-বাউল্লার যুদ্ধ, বামনীগ্রামে অ্যামবুশ, বার্নিতলার যুদ্ধ, তাহেরপুর-ভবানীগঞ্জ ও ব্রহ্মপুর হাটে অপারেশন, নলদিঘির যুদ্ধ, নলডাঙ্গা ব্রিজ অপারেশন, ভবানীগঞ্জের খণ্ডযুদ্ধ প্রভৃতি।
'মুক্তিসংগ্রামে আত্রাই' গ্রন্থ সূত্রে জানা যায়, ১৯ সেপ্টেম্বর আত্রাইয়ের বান্দাইখাড়া গ্রামে গণহত্যা, লুটপাট ও ধর্ষণ শেষে ফেরার পথে তারানগর বাউল্লায় পাকিস্তানি বাহিনীর একটি নৌকার বহরে অতর্কিত আক্রমণ চালায় ওহিদুর বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা। এসময় গুলিবিদ্ধ ও নদীতে ডুবে ১৫০ জনেরও বেশি পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়।
ওহিদুর বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা মজিবর রহমান বলেন, 'মিলিটারির বান্দাইখাড়া গ্রামে যাওয়ার খবর পেয়ে আমরা কয়েকশ মুক্তিযোদ্ধা নদীর দুপাড়ে অ্যামবুশের ফাঁদ পেতে পজিশন নিই। দুপুরে দিকে পাকিস্তানি সেনারা ১১টা নৌকা আমাদের অ্যামবুশের আওতায় আসতেই আমরা একসঙ্গে ফায়ার করি। মুহূর্তেই ১০টা নৌকা নদীতে ডুবে যায়। বাকি একটা নৌকায় থাকা মিলিটারিরা টিকতে না পেরে আত্রাইয়ের দিকে পালিয়ে যায়।'
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর ভোরে ওহিদুর রহমানের নেতৃত্বে বাহিনীর ৭০০-৮০০ মুক্তিযোদ্ধা আত্রাই থানা দখলের উদ্দেশ্যে থানার দিকে যাত্রা করে। খবর পেয়ে থানায় থাকা পাকিস্তানি সেনা, মিলিশিয়া ও রাজাকারেরা থানা ছেড়ে নওগাঁ মহকুমার সদরের দিকে পালাতে শুরু করে। একপর্যায়ে বিনা বাধায় থানা দখল করে আত্রাইয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন ওহিদুর বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা ওহিদুর রহমান।
Comments