রেলের জায়গায় সরকারি টাকায় সাবেক মন্ত্রীপুত্রের ‘ব্যক্তিগত পার্ক’
লালমনিরহাট-বুড়িমারী রেলরুটের কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার রেলওয়ে স্টেশনের পাশে প্রায় ৭০ শতাংশ জায়গা দখল করে ব্যক্তিগত বিনোদনের জন্য পার্কের আদলে একটি স্থাপনা গড়ে তুলেছেন সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের ছেলে রাকিবুজ্জামান আহমেদ।
রাকিবুজ্জামান লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান।
রেলওয়ের জায়গার ওপর অবৈধভাবে এ স্থাপনাটি গড়ে তুলতে রাকিবুজ্জামান জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দপ্তর থেকে ভিন্ন নামে ২০টি প্রকল্পের মাধ্যমে দেড় কোটি টাকাও তুলেছেন। যদিও এ জায়গাটিতে অন্য কারও প্রবেশাধিকার ছিল না।
গত ৫ আগষ্ট তীব্র গণআন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ার থেকে নুরুজ্জামান আহমেদ ও রাকিবুজ্জামান পলাতক আছেন। তাদের দুজনের বিরুদ্ধেই পৃথক হত্যা মামলা হয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, ২০২২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত তুষভান্ডার রেলওয়ে স্টেশনের পার্শ্ববর্তী উন্মুক্ত জায়গাটিতে এলাকার লোকজন অস্থায়ী দোকান বসিয়ে বিভিন্ন পণ্যের ব্যবসা করতেন। সাবেক মন্ত্রীর ছেলে হঠাৎ একদিন জায়গাটি দখলে নিয়ে প্রথমে টিন দিয়ে ঘিরে ফেলেন। পরে জায়গাটির চারদিকে ইটের প্রাচীর দেওয়া হয়। মূল ফটকের ওপর বসানো হয় কংক্রিটের নৌকা।
এছাড়া ভেতরের অংশে একটি বড় পুকুর কেটে এর চারপাশ ঘিরে তৈরি করা হয় সড়ক। বসানো হয় চেয়ার-টেবিল। রাকিবুজ্জামান সেখানে মাঝেমধ্যে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দিতেন।
রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, রেলওয়ের জায়গা দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের শুরুতেই সাবেক মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদকে চিঠি দিয়ে কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি এর তোয়াক্কা করেননি।
আবার গত বছর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা ওই জায়গায় দুইবার যান। কিন্তু সাবেক মন্ত্রীর প্রভাব উচ্ছেদ অভিযানে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
নুরুজ্জামান আহমেদ ২০১৬ সালে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী এবং ২০১৯ সালে সমাজকল্যাণমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০২৪ সালের মন্ত্রিসভায় তিনি বাদ পড়েন। তিনি ২০১৪ সাল থেকে লালমনিরহাট-২ (কালীগঞ্জ-আদিতমারী) আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন।
জানতে চাইলে রেলওয়ের বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা (ডিইও) পূর্ণেন্দু দে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রেলওয়ের জায়গার ওপর গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার প্রস্তুতি আছে। এ মাসেই সেখান থেকে সব স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।'
পলাতক থাকায় বিষয়টি নিয়ে নুরুজ্জামান আহমেদ ও রাকিবুজ্জামান আহমেদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়নি।
Comments