২০২৬ সালের আগে চালু হবে না ঢাকা বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল ব্যবহার করতে যাত্রীদের আরও অন্তত দেড় বছর অপেক্ষা করতে হবে। কেননা, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এখনও অত্যাধুনিক টার্মিনালটি পরিচালনার রূপরেখা তৈরি করতে পারেনি।
তৃতীয় টার্মিনালের প্রায় ৯৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন গত ৯ আগস্ট দায়িত্ব পাওয়া বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (সিএএবি) চেয়ারম্যান মো. মনজুর কবির ভূঁইয়া।
কাজ প্রায় শেষ হলেও আগের পরিকল্পনা অনুযায়ী অক্টোবরে যাত্রীদের জন্য টার্মিনাল চালু করা সম্ভব হবে না বলে জানান তিনি।
সিএএবির সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান সাদিকুর রহমান চৌধুরী জানান, দেরির কারণ হচ্ছে, টার্মিনাল পরিচালনার জন্য ভেন্ডর সুপারিশ ও তাদের জন্য শর্ত নির্ধারণে যে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তারা এখনো প্রতিবেদন জমা দেয়নি।
তৃতীয় টার্মিনালের পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে ট্রানজেকশন অ্যাডভাইসরি সার্ভিসের জন্য গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ অথরিটি বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) সঙ্গে চুক্তি সই করে।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের অধীনে একটি জাপানি কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে তৃতীয় টার্মিনাল পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
টার্মিনালের অপারেশনাল কার্যক্রমের জন্য জাপানি প্রতিষ্ঠানটি এবং নিরাপত্তায় সিএএবির দায়িত্ব পালনের কথা ছিল।
আইএফসির প্রতিবেদনে পরিচালনা খরচ এবং সিএএবি ও পরিচালনাকারী ভেন্ডরের মধ্যে লভ্যাংশ বণ্টনের সুপারিশ করার কথা ছিল।
সাদিকুর রহমান চৌধুরী জানান, আইএফসি প্রতিবেদন আসার পর সরকার এটি পরীক্ষা করবে এবং তারপর ভেন্ডরের সঙ্গে চুক্তি সই করবে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এই চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার পর সিএএবি জনশক্তি নিয়োগ, তাদের প্রশিক্ষণ ও তৃতীয় টার্মিনালের পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরু করবে।
তারা জানান, ২১ হাজার ৩০০ কোটি টাকারও বেশি ব্যয়ে নির্মিত টার্মিনালটির জন্য স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং পদ্ধতি এখনও প্রণয়ন করা হয়নি।
পাঁচ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটারের তৃতীয় টার্মিনালটি চার শিফটে ২৪ ঘণ্টা পরিচালনার জন্য প্রায় ছয় হাজার জনবল প্রয়োজন। শুধু নিরাপত্তার জন্যই প্রায় চার হাজার জনবল প্রয়োজন হবে।
সিএএবি চেয়ারম্যান মো. মনজুর কবির ভূঁইয়া বলেন, 'যাত্রীদের জন্য টার্মিনাল খুলে দিতে আরও সময় লাগবে। কারণ, প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ করতে হবে, তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে।'
সিএএবি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, টার্মিনালটি চালু করতে আরও অন্তত দেড় বছর সময় লাগবে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর অত্যাধুনিক টার্মিনালটি আংশিকভাবে উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সিএএবি ও বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ঘোষণা করে, যাত্রীরা এ বছরের অক্টোবর থেকে তৃতীয় টার্মিনালটি ব্যবহার করতে পারবেন।
কিন্তু টার্মিনালের ঠিকাদার এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম (এডিসি) ৬ এপ্রিলের সময়সীমার মধ্যে প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করতে না পারায় সিএএবি প্রথম ধাক্কা খায়।
পরবর্তীতে কাজ শেষ করতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে আরও পাঁচ মাস সময় দেওয়া হয়।
২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণ কাজ শুরু করে মিতসুবিশি করপোরেশনের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এডিসি, ফুজিতা করপোরেশন এবং স্যামস্যাং সিঅ্যান্ডটি।
তৃতীয় টার্মিনালের জন্য সরকার অর্থায়ন করেছে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। বাকি অর্থ জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছে।
তৃতীয় টার্মিনালে দুই লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটারের ফ্লোর স্পেস, ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার, ৬৬টি ডিপার্চার ইমিগ্রেশন ডেস্ক, ৫৯টি এরাইভাল ইমিগ্রেশন ডেস্ক এবং তিনটি ভিআইপি ইমিগ্রেশন ডেস্ক থাকছে।
তৃতীয় টার্মিনালটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বার্ষিক যাত্রী ও পণ্য ব্যবস্থাপনা সক্ষমতা দ্বিগুণ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
Comments