দেশের এভিয়েশন খাতকে আমূল বদলে দিতে পারে তৃতীয় টার্মিনাল

আগামী ৭ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টার্মিনাল ভবনটি উদ্বোধন করবেন। চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি।
তৃতীয় টার্মিনাল
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল। ফাইল ছবি: জাইকা বাংলাদেশ

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের আংশিক উদ্বোধন আর কয়েকদিন পরই। এখন চলছে চূড়ান্ত প্রস্তুতি। ধারণা করা হচ্ছে দেশের এভিয়েশন খাতে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে পারে তৃতীয় এই টার্মিনাল।

আগামী ৭ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টার্মিনাল ভবনটি উদ্বোধন করবেন বলে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান।

নতুন টার্মিনালটি যাত্রীদের বিশ্বমানের সেবা দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে আগামী বছরের শেষ পর্যন্ত তাদের অপেক্ষা করতে হবে এই টার্মিনাল পুরোপুরি চালু হওয়ার জন্য। টার্মিনাল অপারেশনে ব্যবহৃত সরঞ্জামের প্রয়োজনীয় ক্যালিব্রেশন এবং প্রস্তুতির কারণে এই সময়ের প্রয়োজন হবে বলে জানান মফিদুর রহমান।

তবে আংশিক উদ্বোধনের পর তৃতীয় টার্মিনালের নতুন পার্কিং অ্যাপ্রোন ও ট্যাক্সিওয়ে ব্যবহার করতে পারবে এয়ারলাইন্সগুলো। পুরাতন দুটি টার্মিনালের অ্যাপ্রোনে বর্তমানে ২৯টি উড়োজাহাজ থাকতে পারে।

মফিদুর রহমান বলেন, ৫ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটার আয়তনের টার্মিনালটি পুরোপুরি চালু হলে একসঙ্গে মোট ৩৭টি উড়োজাহাজ পার্ক করা যাবে।

তিনি আরও বলেন, মেগা প্রকল্পের প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। টার্মিনালের কাঠামো প্রস্তুত রয়েছে এবং বর্তমানে অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও প্রযুক্তিগত বিষয়ে কাজ চলছে।

তৃতীয় টার্মিনালের পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরুর আগে বিভিন্ন বিদেশি এয়ারলাইন্স ঢাকা বিমানবন্দর থেকে তাদের কার্যক্রম শুরু করার দিকে নজর রাখছে, যা দেশের এভিয়েশন খাতকে এগিয়ে নিতে বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সুইস এয়ার, এয়ার কানাডা, এয়ার ফ্রান্সসহ অন্তত ১৫টি নতুন বিদেশি এয়ারলাইন্স ইতোমধ্যে ঢাকা থেকে ফ্লাইট পরিচালনার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

বেবিচকের মতে, নতুন টার্মিনালে ব্যাগেজ হ্যান্ডলিং সিস্টেম, অ্যারাইভাল লাউঞ্জ, ক্যান্টিনা, ডিউটি ফ্রি শপ ও বোর্ডিং ব্রিজ থাকবে।

৪১ হাজার ৫০০ বর্গমিটার জুড়ে দুটি এক্সিট ট্যাক্সিওয়ে রয়েছে, যাতে কোনো উড়োজাহাজ অবতরণের পর দ্রুত রানওয়ে ছেড়ে যেতে পারে এবং এটি উড্ডয়ন বা অবতরণের জন্য অন্যান্য উড়োজাহাজ ব্যবহার করতে পারে।

নতুন টার্মিনালে ট্রানজিট যাত্রীদের জন্য একটি বড় লাউঞ্জ বছরে ৪০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেবে।

প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে দুটি পুরানো টার্মিনালের সাথে নতুন টার্মিনালকে সংযুক্ত করার জন্য একটি করিডোর নির্মাণ করা হবে।

অন্যান্য দেশ থেকে আগত যাত্রীদের জন্য কাস্টমসের জন্য একটি হল ও ছয়টি চ্যানেল থাকবে।

টার্মিনালটিতে ৩৬৫০-বর্গ-মিটার এলাকা থাকবে ভিআইপি যাত্রীদের সেবা দেওয়ার জন্য।

শাহজালাল বিমানবন্দরের দুটি টার্মিনাল বর্তমানে ৩০টি এয়ারলাইন্সের প্রায় ১৫০টি ফ্লাইট পরিচালনা করে এবং প্রতিদিন প্রায় ২৫,০০০ থেকে ৩০,০০০ যাত্রীকে পরিষেবা দেয়।

বর্তমানে যাত্রীদের বিমানবন্দরে ম্যানুয়াল সিকিউরিটি চেক করা হয়। এটি ভবিষ্যতে সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় সুরক্ষা চেকের মাধ্যমে পরিবর্তন করা হবে, যাত্রীরা বিমানে না ওঠা পর্যন্ত স্ক্রিনিং প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে হবে।

বেবিচকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তৃতীয় টার্মিনালটি পুরোপুরি চালু হলে যাত্রীদের নির্বিঘ্নে বিমানবন্দরে আসা-যাওয়া ও ভ্রমণের সুযোগ করে দেবে।

মেট্রোরেল ও ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ ভূগর্ভস্থ টানেল ও ফ্লাইওভার নির্মাণের ফলে যাতায়াতের সুবিধা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে।

এয়ারলাইন্স লাউঞ্জ, ডেরুম, মুভি লাউঞ্জ, শিশুদের জন্য প্লে-জোন এবং ফুড কোর্ট যাত্রীদের চাহিদা ও স্বাচ্ছন্দ্য পূরণ করবে।

প্রখ্যাত স্থপতি রোহানি বাহারিনের নকশায় ২১ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে নতুন টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শুরু হয়।

জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি ১৬ হাজার ১৪১ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে এবং বাকি ৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে।

তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং কাজ পেতে যাচ্ছে জাপান।

নির্মাণ কাজ করছে জাপানের মিৎসুবিশি, ফুজিটা ও দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং।

Comments

The Daily Star  | English

Saber Hossain Chowdhury arrested

The Detective Branch of police arrested former environment minister Saber Hossain Chowdhury from the capital’s Gulshan area today

38m ago