‘সৈকত যেখানে গুলিবিদ্ধ হয়েছিল, বাবা মাঝে মাঝে সেখানে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকেন’

সৈকতের রক্তাক্ত মরদেহটি যে জায়গায় পড়ে ছিল, সেখানে এসে নীরবে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই যেন করার নেই তার।
মাহামুদুর রহমান সৈকত। ছবি: সংগৃহীত

মোহাম্মদপুরের নুরজাহান রোডে গত ১৯ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুলি চালালে মাথায় গুলিবিদ্ধ হন মাহামুদুর রহমান সৈকত (১৯)।

সেদিন থেকেই নুরজাহান রোডের ওই জায়গায় প্রায়শই নীরবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় একজন মানুষকে। তিনি সৈকতের বাবা।

ছেলের মৃত্যুতে শোক প্রকাশের ভাষা নেই তার। সৈকতের রক্তাক্ত মরদেহটি যে জায়গায় পড়ে ছিল, সেখানে এসে নীরবে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই যেন করার নেই তার।

ব্যস্ত এই শহরের অন্যতম ব্যস্ত এই সড়কে দিনের পর দিন ঠায় দাঁড়িয়ে থাকেন পুত্রহারা এই পিতা।

সৈকতের বোন সাবরিনা আফরোজ সাবন্তী বলেন, 'সৈকত যেখানে গুলিবিদ্ধ হয়েছে, বাবা মাঝে মাঝেই বাসা থেকে বের হয়ে সেখানে যান। গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। চুপচাপ। কিছুই বলেন না।'

গত ১৯ জুলাই জুমার নামাজ পড়ার পর সৈকত তাদের পারিবারিক কনফেকশনারির দোকান খুলতে যান।

তার বাবা সৈকতের ওপর দোকানের দায়িত্ব দিয়ে নিজ গ্রাম সন্দ্বীপে ছিলেন।

দোকান খোলার কিছুক্ষণ পরই আবার বাসায় ফিরে যান সৈকত। মাকে জানান, তার এক বন্ধু গুলিবিদ্ধ হয়েছে, তাই দোকান বন্ধ করে দিয়েছেন।

সাবন্তী বলেন, 'মাকে বলেই গুলিবিদ্ধ বন্ধুকে খুঁজতে বের হয়ে যায় সৈকত। মা ভয় পেয়ে তাকে বারবার ডাকলেও শোনেনি।'

পরিবারের সবাই মোবাইলে সৈকতের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করতে থাকেন। এক পর্যায়ে সাবন্তীর কল রিসিভ করে সৈকত জানান, তিনি বাসায় ফিরছেন।

বাবার সঙ্গেও কথা বলেছিলেন সৈকত। বলেছিলেন, বাসায় ফিরছেন।

কিন্তু তার আর বাসায় ফেরা হয়নি।

বিকেল ৪টার দিকে কেউ একজন সৈকতের নম্বরে করা তার বাবার কল রিসিভ করেন।

ওপাশ থেকে বলেন, 'আপনার ছেলের গুলি লেগেছে। সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে তার লাশ রাখা আছে।'

ঢাকা থেকে এতদূরে থাকা অসহায় এই বাবা খবরটি জানান তার পরিবারের অন্য সদস্যদের। তারা দ্রুত হাসপাতালে গিয়ে দেখতে পান সৈকতের নিথর দেহ পড়ে আছে।

সাবন্তী ও শাহরিনা আফরোজ সুপ্তির একমাত্র ভাই সৈকত। এবার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিচ্ছিলেন তিনি।

সাবন্তী বলেন, 'কীভাবে আমার নিরপরাধ ভাইটাকে গুলি করল? এত এত নিরীহ মানুষকে গুলি করার সময় কি তাদের হাত কাঁপেনি?'

তার বোন জানান, শৈশবে ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন ছিল সৈকতে। তিনি খুব শান্ত স্বভাবের ছিলেন। এমনকি কখনো কারও সঙ্গে ঝগড়াও করেননি।

সাবন্তী বলেন, 'মা রাতে ঘুমাতে পারে না। কিছুক্ষণ পরপর তার ঘুম ভেঙে যায়। কাঁদতে শুরু করেন। সৈকত মাকে বলতো, তাকে একটা বাড়ি বানিয়ে দেবে।'

'আমরা কার কাছে বিচার চাইব? পুলিশ আমার ভাইকে মেরেছে। যে পুলিশ আমার ভাইকে হত্যা করেছে, তাদের কাছেই বিচার চাইতে যাব?', প্রশ্ন সাবন্তীর।

বাড়ির পাশে মোহাম্মদপুরের একটি কবরস্থানে সৈকতকে শায়িত করা হয়।

 

Comments

The Daily Star  | English

Mirpur-10 metro station reopens

Mirpur-10 metro station resumed operations this morning, almost three months after it was vandalised and consequently shut down in July

53m ago