‘৩ সমন্বয়ককে সেফ কাস্টডিতে নিয়েছি, নিরাপত্তা শঙ্কা আছে কি না জিজ্ঞাসাবাদ করছি’

আসাদুজ্জামান খান
ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। ছবি: স্টার

কোটা সংস্কারের আন্দোলনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে বিএনপি-জামায়াত ও যারা দেশে জঙ্গির উত্থান করতে চায় তারা ধ্বংসলীলা চালিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।

সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাটের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, 'তাদের প্রধান আক্রোশ ছিল পুলিশ ও আওয়ামী লীগের প্রতি।'

আজ শনিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের দেওয়া এক ব্রিফিংয়ে তিনি এই কথা বলেন।

তিনি জেলার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, পিবিআই কার্যালয়, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনসহ ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি স্থাপনা পরিদর্শন করেন।

কোটা সংস্কারের দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছি তাদের সন্তানদের বয়স ইতোমধ্যে ৩০ বছর পার হয়ে গেছে। ৩০ বছরের নিচে এখন আর কেউ নাই। কাজেই এই মুক্তিযোদ্ধা কোটাও আর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে থাকবে না, এইটাও মেধায় চলে গিয়েছে। মানে এখন মেধায় ৯৮ শতাংশ।'

আন্দোলন ছাত্রদের নিয়ন্ত্রণে ছিল না মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, 'কয়েকদিনের ধ্বংসের লীলাখেলায় প্রমাণ হয়েছে ছাত্ররা ছাত্রদের নিয়ন্ত্রণে নেই। তারা জামায়াত, বিএনপি এবং জঙ্গি; যারা স্বাধীনতা চায়নি, জঙ্গি ও সন্ত্রাসের উত্থান ঘটাতে চেয়েছিল, তাদের হাতের ক্রীড়নক (পুতুল) হয়ে গিয়েছে। দুইজন সাংবাদিক নিহত হয়েছে, এক নারী সাংবাদিককে নাজেহাল করা হয়েছে। এরা মানুষের শত্রু, জনগণের শত্রু, দেশের শত্রু।'

'এদের আক্রোশই ছিল এবং আওয়ামী লীগের প্রতি। যে পুলিশ স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছিল, সেই পুলিশের ওপর তাদের আক্রমণ। বিজিবির ওপরও তারা আক্রমণ করেছিল', যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি একত্র হয়ে যখন পারছিল না, তখন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বাধ্য হয়ে সেনাবাহিনীকে দিয়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করার জন্য তাদের সহযোগিতা চেয়েছি। সেনাবাহিনী কাজ করছে, শিগগিরই আমরা এই অবস্থান থেকে পরিত্রাণ পাব।'

আসাদুজ্জামান বলেন, 'ছাত্রদের আন্দোলনের ফাঁকে, ছাত্রদের মিসগাইড করে যে ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে, যে হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটিয়েছে, যারা মৃত্যুবরণ করেছে তারা অনেকেই সাধারণ মানুষ। আমাদের আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের অনেকে শাহাদাত বরণ করেছেন। তিনজন পুলিশ, একজন আনসার শাহাদাত বরণ করেছেন। একজন পুলিশ মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। এক পুলিশ সদস্যকে মেরে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল।'

তিনি বলেন, 'নরসিংদীতে জেলে হামলা চালিয়ে জঙ্গিদের বের করে নিয়ে গেছে, অস্ত্র লুট করেছে। অস্ত্র ও জঙ্গি নেওয়ার উদ্দেশ্য আপনারা নিজেরাই বুঝতে পারেন। জঙ্গি উত্থান যারা ঘটাতে চেয়েছিল তারাও এই আন্দোলনে সক্রিয় হয়েছে। অস্ত্রগুলো তারা আমাদের পুলিশের বিপক্ষে ব্যবহার করছে। আমাদের পুলিশ ও বিজিবি অত্যন্ত দক্ষ, দেশপ্রেমিক। কাজেই এরা এই সমস্ত জিনিসে ভয় করে না।'

সারাদেশে সংঘটিত 'ধ্বংসলীলা' গণমাধ্যমে প্রচারের আহ্বান জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে 'গুজব' ছড়ানো অব্যাহত রয়েছে দাবি করে আওয়ামী লীগ সরকারের এ মন্ত্রী বলেন, 'একটি মহল সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে এমন সব গুজব ছড়াচ্ছেন, যেগুলো শুনলে সাধারণ মানুষও ঠিক থাকতে পারেন না, বিভ্রান্ত হচ্ছেন। একদল গুজব ছড়িয়েছে, আরেকদল আক্রমণ করেছে। এই রকম সংঘবদ্ধ আক্রমণ শুধুডেডিকেটেড ফোর্সরাই করতে পারে। যেটা নাকি জামায়াত, বিএনপি এবং জঙ্গিদের কাছে রয়েছে। ১৯ তারিখের আগ পর্যন্ত পুলিশের অনেক ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। বাচ্চা বাচ্চা ছেলেগুলোকে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।'

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী তিন মন্ত্রীকে ছাত্রদের সাথে কথা বলার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তিন জন মন্ত্রী ছাত্রনেতাদের নিয়ে বসেছিলেন, তাদের আট দফা দাবির কথা শুনেছেন। প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছিলেন যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে নেবেন, কিন্তু সেই সুযোগ তারা দেয়নি।'

'বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে' নেতৃত্ব দেওয়া তিন সমন্বয়ককে হেফাজতে নেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমরা তাদের সেফ কাস্টডিতে নিয়েছি। নিরাপত্তা নিয়ে কোনো শঙ্কা আছে কি না এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

এই সময় পুলিশের আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক, জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল উপস্থিত ছিলেন।

Comments

The Daily Star  | English
Drug sales growth slows amid high inflation

Drug sales growth slows amid high inflation

Sales growth of drugs slowed down in fiscal year 2023-24 ending last June, which could be an effect of high inflationary pressure prevailing in the country over the last two years.

17h ago