আগামীকালের পরিস্থিতি দেখে কারফিউ তোলার সিদ্ধান্ত নেবে সরকার

কারফিউ কতদিন থাকবে
ছবি: এমরান হোসেন/স্টার

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে দেওয়া কারফিউ আগামীকাল শুক্রবারের পর দেশের বেশিরভাগ এলাকা থেকে তুলে নিতে পারে সরকার এবং খুলে দিতে পারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

শুক্রবার কী হয়, তা পর্যবেক্ষণ করতে চায় সরকার। ওই দিন ঢাকায় বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে।

গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি 'হাইপ্রোফাইল' বৈঠকে উপস্থিত সূত্র জানায়, শুক্রবার কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলে কারফিউ তুলে নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন এবং পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান মনিরুল ইসলাম বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর ভয়াবহ সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ঢাকা। দ্য ডেইলি স্টারের প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, এই সংঘর্ষে কেবল ঢাকাতেই ৫৫ জন নিহত হন। এ ছাড়া, দেশের বিভিন্ন জেলায় নিহত হন আরও ১১ জন।

আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন, আগামীকাল সহিংসতার ঝুঁকি রয়েছে এবং এ বিষয়ে দলটির নেতাকর্মীরা সতর্ক থাকবে বলে দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে।

আগামীকাল বিকেল ৩টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করবে ক্ষমতাসীন দলটি।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গতকালের বৈঠকে সারা দেশের জেলা প্রশাসকদের তৈরি করা প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা হয় বলে সূত্র জানায়।

ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী এবং ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকা ছাড়া সব জেলায় পরিস্থিতি সন্তোষজনক বলে মত দেন বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা।

অন্যান্য জেলায় আগামীকালের পরিস্থিতি মূল্যায়ন করার পরে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো পর্যায়ক্রমে পুনরায় খুলে দেওয়া হতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে।

বৈঠকে উপস্থিত একজন মন্ত্রী বলেন, 'আমরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শ্রেণীকক্ষে ফিরিয়ে আনতে চাই। কারণ, নতুন পাঠ্যক্রমের জন্য তাদের শ্রেণীকক্ষে উপস্থিতি থাকা প্রয়োজন। চারটি জেলা ছাড়া বাকি সব জায়গায় আমরা স্কুল খুলে দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছি। আর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেবো।'

ব্যাপক সংঘর্ষের মধ্যে গত ১৬ জুলাই থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। শিক্ষা বোর্ডগুলো ১৮, ২১, ২৩ ও ২৫ জুলাইয়ের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করে।

গতকাল বৈঠক শেষে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চালুর জন্য অনুকূল নয়।

তিনি জানান, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শেষ করাই এখন অগ্রাধিকার পাবে।

বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ১৬ জুলাই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে গঠিত বিচার বিভাগীয় কমিশনের বিষয়ে কথা বলেন। হাইকোর্টের বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের নেতৃত্বে গঠিত কমিশন প্রতিবেদন দাখিল করার পর এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে সরকার।

একজন মন্ত্রী নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সরকার এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ীদের আইনের আওতায় আনবে, তারা যেই হোক না কেন।'

বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা সম্মত হন যে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী ছাড়া বাকি জেলাগুলো থেকে কারফিউ তুলে নেওয়া উচিত। এই চার জেলায় সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত কারফিউ থাকতে পারে।

এমনকি দিনের সময়ে কারফিউ প্রত্যাহার করা হলেও ঢাকার শনির আখড়া, ডেমরা, রায়েরবাগ, মোহাম্মদপুর, মিরপুর-১০, সাভার ও উত্তরায় কঠোর নজরদারি থাকবে। কেননা, এই এলাকাগুলোতেই গত কয়েকদিনে সবচেয়ে বেশি সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।

Comments

The Daily Star  | English

Killing of trader in old Dhaka: Protests erupt on campuses

Protests were held on campuses and in some districts last night demanding swift trial and exemplary punishment for those involved in the brutal murder of Lal Chand, alias Sohag, in Old Dhaka’s Mitford area.

3h ago