কোটার প্রজ্ঞাপন নিয়ে যা বলল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন

কোটার প্রজ্ঞাপন নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিক্রিয়া
সংবাদ সম্মেলনে নাহিদসহ অন্যরা। ছবি: সংগৃহীত

সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কার করে সরকার প্রজ্ঞাপন দেওয়ার পর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চার সমন্বয়ক মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকার রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন প্রজ্ঞাপনের বিষয়ে তাদের প্রতিক্রিয়া জানান।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং সহ-সমন্বয়ক হাসিব আল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে তাদের বক্তব্য জানান। গত ১৯ জুলাই থেকে নিখোঁজ সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদের বাবা বেলাল হোসেনও এসময় উপস্থিত ছিলেন।

নাহিদ ইসলাম বলেন, 'শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন নিয়ে সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা বিতর্কিত ও উসকানিমূলক বক্তব্য দেয় এবং পরে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্যায় দমন-পীড়ন-হামলার কারণে এক রক্তক্ষয়ী পরিস্থিতি তৈরি হয়, যা অনাকাঙ্ক্ষিত।'

তিনি বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যখন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়, তখন আমরা অভিভাবক-শিক্ষকসহ, স্কুল-কলেজ-সরকারি-বেসরকারি-জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষার্থীদের এবং সর্বস্তরের নাগরিকদের রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানাই আমাদের নিরাপত্তার জন্য। ছাত্র-নাগরিকরা প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং আমরা দেখতে পাই যে সারাদেশে ইন্টারনেট বন্ধ করে ডিজিটাল ক্র্যাকডাউন পরিস্থিতি তৈরি করা হয় এবং শিক্ষার্থীদের হল থেকে বিতাড়িত করা হয়, যা সুস্পষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘন।'

'পরে সেনাবাহিনী নামিয়ে কারফিউ জারি করা হয় এবং অরাজক পরিস্থিতির সুযোগে আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য দুর্বৃত্তরা নাশকতা করে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে আগুন লাগায় এবং জানমালের ক্ষয়ক্ষতি করে। প্রতিবাদী শিক্ষার্থী নাগরিকের সঙ্গে এসব সহিংস ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই,' যোগ করেন তিনি।

নাহিদ আরও বলেন, 'এটা স্পষ্ট সরকারের দায়িত্বহীন আচরণ এবং দমন-পীড়ন নীতির জন্য এই অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, এ দায় সম্পূর্ণ সরকারের। সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও জনজীবনের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এখন সমগ্র পরিস্থিতির দায় শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ওপর চাপিয়ে সরকার পুনরায় দায় এড়াচ্ছে।'

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে প্রথম থেকেই সরকারকে আলোচনার কথা বলা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, 'কিন্তু সরকার ডিজিটাল ক্র্যাকডাউন করে ক্যাম্পাস থেকে শিক্ষার্থীদের বিতাড়ন করে রাস্তায় গুলি চালানো অবস্থায় আমাদের সংলাপের আহ্বান জানিয়েছিল। আমরা সেই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছি। ফলে আমাকে গুম করে ২৪ ঘণ্টা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। অপর কয়েকজন সমন্বয়ক সরকারের কাছে কিছু দাবি পেশ করতে গেলে সেটাকে সংলাপ বলে প্রপাগান্ডা চালানো হয়। রাষ্ট্রযন্ত্রের সব শক্তি ব্যবহার করে সরকার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও প্রতিবাদী শিক্ষার্থী-নাগরিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার চেষ্টা করে এখন কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপন দিয়েছে। রক্ত ও লাশের ওপর দাঁড়িয়ে এ প্রজ্ঞাপন শিক্ষার্থী ও নাগরিকদের সঙ্গে নির্মমতার আরেকটি ইতিহাস হয়ে থাকবে।'

নাহিদ বলেন, 'কোটাব্যবস্থার অন্যতম প্রধান স্টেকহোল্ডার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এবং আরও যারা কোটা পায় তারা। কিন্তু স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া এই ধরনের প্রজ্ঞাপন সমীচীন নয়। আমরা চেয়েছিলাম একটি সংলাপের মাধ্যমে সব পক্ষের সম্মতির ভিত্তিতে প্রজ্ঞাপন হবে, যাতে নতুন করে আর কখনো সমস্যা তৈরি না হয়। সংলাপের মাধ্যমে কোটা সমস্যার চূড়ান্ত সমাধান আমরা চাই। আমরা সংবিধান অনুযায়ী অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য কোটার কথা বলেছিলাম, আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের কোটার কথা বলেছিলাম। এগুলো প্রজ্ঞাপনে প্রতিফলিত হয়েছে। কিন্তু অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর বিষয়টি আরও পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন। সরকার চাইলে কোটাব্যবস্থার পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করতে পারে। তাই এর সুষ্ঠু বাস্তবায়নে এবং এর সুষ্ঠু তদারকির জন্য একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করা দরকার। কোটার যেকোনো পরিবর্তন কমিশনের সুপারিশে হবে। কোটা নিয়ে আমাদের আরও কিছু বক্তব্য আছে, যেগুলো আমরা সরকারের কাছে সংলাপে তুলে ধরতে চাই। কিন্তু তার আগে সংলাপের যথাযথ পরিবেশ তৈরি করতে হবে।'

'গত কয়েক সপ্তাহে রক্তক্ষয়ী পরিস্থিতিতে সারাদেশে কয়েকশ ছাত্র-নাগরিক শহীদ হয়েছেন এবং কয়েক হাজার লোক আহত হয়েছেন। হতাহতের সঠিক সংখ্যা এখনো পাওয়া যায়নি। অনেক বাবা এখনো সন্তানের লাশ খুঁজে বেড়াচ্ছেন। এত রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আমরা কোটা সংস্কার চাইনি। আমরা সব হতাহতের বিচার চাই। আমরা জনগণের কাছে বলতে চাই যে আমরা জনগণের সঙ্গে আছি। আমাদের চূড়ান্ত দাবি ক্যাম্পাসগুলো খুলে সবার সঙ্গে আলোচনা করে আমরা জাতির সামনে পেশ করতে চাই। আমরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় আছি। আমাদের বাসায় পুলিশ, ডিবি এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা যাচ্ছে। নির্বিচারে মানুষকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। আমরা এ পরিস্থিতির অবসান চাই। নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে আমাদের আহ্বান থাকবে ছাত্র-জনতার মুখোমুখি আর দাঁড়াবেন না। আরেকটি গুলিও যেন কাউকে হত্যার উদ্দেশ্যে না ছোড়া হয়। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই সারাদেশে যত মানুষ শহীদ হয়েছে, আহত হয়েছে আমরা তাদের পাশে আছি এবং শেষ পর্যন্ত থাকব,' যোগ করেন তিনি।

বিকেলের সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ আরও বলেন, 'ইন্টারনেট নেই এবং আমাদের সমন্বয়কদের সবার খোঁজ পাচ্ছি না। এ অবস্থার দ্রুত পরিত্রাণ চাই। আমরা সব সমন্বয়কদের নিয়ে আন্দোলনকারী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে জনমতের ভিত্তিতে আমাদের আরও কিছু দাবি-দাওয়া আছে। এগুলো নিয়ে বিভ্রান্তি হয়েছে। সেটা যোগাযোগহীনতার কারণে হয়েছে। আমাদের নিরাপত্তা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করলে সেই দাবিগুলো সবার সামনে পেশ করব। তার আগে আমাদের প্রধান বক্তব্য, আমাদের নিরাপত্তা দিতে হবে এবং আমাদের গুম-গ্রেপ্তারের হয়রানি বন্ধ করতে হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Yunus meets Chinese ambassador to review China visit, outline next steps

Both sides expressed a shared commitment to transforming discussions into actionable projects across a range of sectors

24m ago