গ্রামে ‘দানবীর’ হিসেবে পরিচিত প্রশ্নফাঁসে অভিযুক্ত মিজানুর

মিজানুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি থেকে পদ হারানো মিজানুর রহমানকে 'দানবীর' হিসেবে চেনেন তার এলাকার মানুষ।

মিজানুরের (৫০) বাড়ি বাড়ি লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের কুটির-পাড়া গ্রামে। সপরিবারে ঢাকায় বসবাস করেন তিনি। বছরে তিন-চার বার গ্রামে যান। গ্রামে এলেই গরু জবাই করে গ্রামবাসীকে খাওয়ান। মানুষকে অর্থ-সহযোগিতা করেন। গ্রামের মসজিদ ও মাদ্রাসায় বড় অংকের অনুদান দিয়েছেন। সেই হিসাবে মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে মার্বেল পাথরে নিজের নাম বাঁধিয়ে রেখেছেন। এভাবেই তিনি গ্রামে 'দানবীর' হিসেবে নিজের পরিচিতি তৈরি করেছেন।

মিজানুরের সম্পদের পরিমাণ সম্পর্কে এখনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। গ্রামে স্থাবর কোনো সম্পত্তি না থাকলেও একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মাণ করছেন। তবে দিনাজপুর শহরে শশুরবাড়িতে ও ঢাকায় একাধিক বহুতল ভবন ও মার্কেটের মালিক তিনি। বিপুল পরিমাণ সম্পদ গড়েছেন স্ত্রী লাকী বেগম ও তিন সন্তানের নামে।

মিজানের বাবা মৃত আবু বক্কর সিদ্দিক ছিলেন পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই)। তার ছোট ভাই মশিউর রহমান পুলিশের এসআই।

স্থানীয়রা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, মিজানুর ২০০১ সালে ঢাকায় বসবাস শুরু করেন। সেখানে বিজি প্রেসের কর্মচারী তার গ্রামের প্রতিবেশী এটিএম গোলাম মোস্তাফার সাথে সখ্যতা গড়ে উঠে। গোলাম মোস্তাফার গাড়ি চালানোর কাজ নেন মিজানুর। বিজি প্রেস থেকে চাকরির প্রশ্নপত্র ফাঁসের একটি চক্র পরিচালনা করতেন গোলাম মোস্তাফা। এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন মিজানুর। একটি প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় ২০১৩ সালে বিজি প্রেস থেকে চাকরিচ্যুত হন গোলাম মোস্তাফা। এর পরই পিএসসির প্রশ্নফাঁসের সিন্ডিকেটে ভিড়ে যান মিজানুর।

মিজানুর ২০২০ সাল থেকে আদিতমারীর বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত শুরু করেন। মাত্র দুই বছরের মধ্যে আদিতমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতির পদ পেয়ে যান তিনি। এর আগে তিনি কোনোদিন আওয়ামী লীগ বা এর অঙ্গসংগঠনের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, পদ পেতে এলাকার একজন প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাকে উৎকোচ দেন তিনি। এর মধ্যেই গতকাল শনিবার দুপুরে আদিতমারী উপজেলা আওয়ামী লীগ জরুরি সভা করে মিজানুরকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামের অনেক মানুষ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, আওয়ামী লীগের পদ পাওয়ার পর মিজানুর গ্রামে পেটোয়া বাহিনী তৈরি করেন। তার বাহিনীর শতাধিক সদস্য মোটরসাইকেল নিয়ে এলাকায় মোহড়া দেন। মিজানুর গ্রামে আসেন দামী গাড়িতে চড়ে। তিনি নিজেকে দুটি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে পরিচয় দেন। কিন্তু কোম্পানির নাম বলেন না তিনি।

স্থানীয় কৃষক সামাদ আলী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মিজানুর খুবই দানশীল মানুষ। তিনি মসজিদ ও মাদ্রাসা তৈরি করে দিয়েছেন। গ্রামের অনেক মানুষকে সাহায্য করেছেন। যদি তিনি সত্যিই অপরাধে জড়িত থাকেন তাহলে পৃথিবীতে মানুষকে বিশ্বাস করা দায় হবে।'

রোববার বিকেলে মিজানুরের বাড়িতে গিয়ে তার সৎমা জাহেদা বেগমের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তিনি মুখ খুলতেই রাজি হননি। মিজানুরের ছোট ভাই এসআই মশিউর শনিবার দুপুর পর্যন্ত গ্রামের বাড়িতে ছিলেন। মিজানুরের কেলেঙ্কারি সামনে আসার পর বিকেলে বাড়ি ছেড়ে চলে যান তিনি। ফোন বন্ধ করে আত্মগোপনে আছেন মিজানুর। এমনকি তার স্ত্রীকেও ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, সিআইডির একটি দল মিজানুরের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে। তবে আদিতমারী থানার ওসির মাহমুদ উন নবীর বলেছেন, এ ব্যাপারে তার কাছে কোনো তথ্য নেই।

Comments

The Daily Star  | English

US tariff talks: First day ends without major decision

A high-level meeting between Bangladesh and the Office of the United States Trade Representative (USTR) ended in Washington, DC, yesterday without a major decision, despite the looming expiry of a 90-day negotiation window on July 9.

10h ago