‘হামারগুলার দুখখের শ্যাষ নাই, খবরও কাইও নেয় না’

কলাতিপাড়ায় বন্যার পানি ঢুকেছে ঘরে। টেবিলের ওপর চুলা বসিয়ে রান্না করছেন এক নারী। ছবি: ছবি: এস দিলীপ রায়/ স্টার

বন্যার পানির সঙ্গে লড়াই করে চার দিন বাড়িতেই ছিলেন দিনমজুর হারুনুর রশিদ (৪৬)। ঘরের ভেতর ৪-৫ ফুট পানি ওঠায় গত শুক্রবার বিকেলে তিনি পরিবারের সবাইকে নিয়ে আশ্রয় নেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের ওপর। পলিথিন দিয়ে ঝুপড়ি ঘর করেছেন। ঘরের একপাশে একটি গরু, চারটি ছাগল ও কয়েকটি হাঁস-মুরগি আর একপাশে স্ত্রী, দুই সন্তান ও বয়স্ক বাবা-মাকে নিয়ে কোনোভাবে থাকছেন এখানে।

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের কলাতিপাড়া গ্রামে বাড়ি হারুনুর রশিদের।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, গেল ৬-৭ বছরের বন্যার তুলনায় এবছরের বন্যা পরিস্থিতি খারাপ। খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট নিয়ে তারা বাঁধের ওপর বসবাস করছেন। এখন পর্যন্ত তারা কোনো সরকারি ও বেসরকারি ত্রাণ সহায়তা পাননি। উপার্জন না থাকায় খাবার কিনতেও কষ্ট হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে সংসার চালাতে হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

'গেল বছরগুলোতে বন্যার সময় বিভিন্ন মানবিক সংগঠন, এনজিও এবং রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা আসছিল। তারা খাবার দিয়েছিল। কিন্তু এবছর বন্যায় তাদের কাউকে দেখছি না। এমনকি সরকারি ত্রাণ সহায়তাও জোটেনি,' বলেন তিনি।

হারুনুরের প্রতিবেশী ইসমত আরা বেগম (৫৫) বলেন, বাঁধের ওপর পলিথিনের ঝুপড়ি ঘরে একসাথে গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি নিয়ে বসবাস করছেন। ঘর থেকে পানি নামলে বাড়ি ফিরবেন। খাবার কেনার টাকা না থাকায় খেয়ে না খেয়ে দিন পার করতে হচ্ছে। প্রতিবছরই তাদের বানভাসি হতে হয়।

'হামারগুলার দুখখের শ্যাষ নাই বাহে। হামারগুলার খবরও কাইও নেয় না। সরকারি চাইল ডাইলও পাইলোং না,' তিনি বলেন।

নাগেশ্বরী উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নে দুধকুমার নদীপাড়ে মিঢাপাড়া গ্রামের বানভাসি সাহেদা বেওয়া (৬৭) বলেন, 'ভোটের সময় আইসলে ওমরা খালি ভোট চায়। হামরা বানভাসি হয়া কষ্টোত আছি এ্যালা আর ওমরা খবরও না নেয়। বাঁধের ওপর খেয়া না খেয়া দিন কাটবার নাইকছি।'

'সরকারি রিলিফ তো দূরের কথা এ্যালাং কাইও হামার খবরও নেইল না।'

সাহেদা বেওয়া বলেন, আগে বন্যার সময় অনেকেই এগিয়ে আসত। সামর্থ্য অনুযায়ী বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াত। হঠাৎ করে মানবিক মানুষগুলো হারিয়ে গেছে। তাদের কাউকে বানভাসিদের খোঁজ নিতে দেখা যাচ্ছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সংগঠন ও একটি এনজিও প্রতিনিধি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, দাতাদের কাছ থেকে এখনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। বানভাসিদের সহায়তার জন্য আবেদন জানানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই তারা কার্যক্রম শুরু করবেন। 

কুড়িগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, জেলায় দুই লাখেরও বেশি মানুষ বন্যাদুর্গত। পানিবন্দি পরিবারগুলোর কেউ বাঁধের ওপর ও আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন আবার কেউ আশ্রয় নিয়েছেন বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে। এখনো অনেক পরিবারের লোকজন বন্যার পানির সাথে লড়াই করে বাড়িতে অবস্থান করছেন। বন্যাদুর্গতদের সরকারি ত্রাণ সহায়তা বিতরণ চলমান আছে।

লেখক নাহিদ হাসান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, আগের মতো বন্যাদুর্গতদের পাশে মানবিক, সামাজিক সংগঠন, এনজিও এবং রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের দাঁড়াতে দেখা যাচ্ছে না। মানবিক সংগঠনগুলো দাতাদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে। জনগণের ভোটের প্রয়োজন হচ্ছে না এমন অনুভূতি সৃষ্টি হওয়ায় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরাও বানভাসিদের বিপদে সাড়া দিচ্ছেন না। দুর্গতদের এখনই ত্রাণ সহায়তার প্রয়োজন।

কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি রাজু মোস্তাফিজ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, বন্যার্তদের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে বানভাসিরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছেন। প্রায় ৭০ শতাংশ বানভাসির মাঝে সরকারি ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

উলিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আতাউর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, এনজিও প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রশাসনের বৈঠক হয়েছে। তারা বন্যার্তদের সহায়তা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন মানবিক ও সামাজিক সংগঠনগুলোর সাথে যোগাযোগ হচ্ছে। আপাতত দুর্গত এলাকায় বানভাসিদের মাঝে সরকারি ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।

Comments

The Daily Star  | English

Tanvir takes five as Tigers clinch 2nd Sri Lanka ODI

Bangladesh captain Mehidy Hasan Miraz has won the toss and opted to bat first in the second ODI against Sri Lanka, looking to keep the three-match series alive with a win at the R Premadasa Stadium today. 

9h ago