রাজবাড়ী থেকে প্রতিদিন ঢাকায় আসে ২০ হাজার কেজি জাম

জাম বেচাকেনার এই মৌসুম চলে মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে জুন মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত।
পাইকারি ব্যবসায়ীরা জাম কিনে নিয়ে যান ঢাকায়। ছবি: স্টার

বাংলাদেশের গ্রীষ্মকালীন ফলের মধ্যে অন্যতম জাম। আর এই জামকে কেন্দ্র করে রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকা এখন জমজমাট। ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতিদিন এই এলাকা থেকে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে ১৮ থেকে ২০ হাজার কেজি পাকা জাম।

দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকার পুলিশ বক্সের বিপরীত পাশে, কোফিল ফিলিং স্টেশনের বিপরীতে এবং দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাশে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত চলে জাম বেচাকেনা।

জাম ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া এবং দেবীগ্রাম ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে পাঁচ হাজারের বেশি জাম গাছ আছে। আর এই জাম গাছ থেকে পাকা জাম সংগ্রহ করেন ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা। তারা নিয়ে আসেন দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায়। এখান থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা জাম কিনে নিয়ে যান ঢাকায়। জাম বেচাকেনার এই মৌসুম চলে মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে জুন মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত।

গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গোয়ালন্দ উপজেলায় ৪ হাজার ৭৬০টি জাম গাছ আছে। এই বছর জাম পাওয়া যাবে ২৩৮ মেট্রিক টন। প্রতি কেজি জাম গড়ে ১০৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় গিয়ে দেখা যায় বিভিন্ন গ্রাম থেকে জাম গাছের মালিক, ক্ষুদ্র জাম ব্যবসায়ীরা জাম সংগ্রহ করে প্লাস্টিকের ক্রেটসহ বিভিন্ন পাত্রে করে বিক্রি করার জন্য নিয়ে এসেছে। দরদামে মিটমাট হলে ওজন দিয়ে পাকা জামগুলো ঢালা হচ্ছে ব্যবসায়ীর প্লাস্টিকের ক্রেটে।

দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় কথা হয় দৌলতদিয়া ইউনিয়নের সোনাউল্লাহ পাড়ার বাসিন্দা বিপ্লব সরদার (৩০) এর সঙ্গে।

তিনি জানান, তার বাড়িতে ১০টা জাম গাছ আছে। এ পর্যন্ত তিনি এই গাছগুলো থেকে ৫০ কেজির মতো জাম ৯০-১২০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। তিনি আরও ৫০ কেজির মতো জাম বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করেন।

দেবীগ্রামের বাসিন্দা শুকুর শেখ (২১) জানান, তার বাড়িতে আছে ১৫টা গাছ আছে। এই গাছগুলো থেকে তিনি এই বছর দশ হাজার টাকার জাম বিক্রি করতেন পারবেন।

দৌলতদিয়া ইউনিয়ন ফকিরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা করিম মন্ডল (৩৬) জানান, তিনি আজ গ্রাম থেকে ১৩ কেজি জাম ৪০ টাকা দরে কিনে এনেছেন। আর বিক্রি করেছেন ১২০ টাকা দরে। 

তিনি জানান, জাম কম টাকায় কিনলেও গাছে উঠে পাড়া অনেক কষ্টের কাজ। এই বছর খরার জন্য জামের পরিমাণ কম হয়েছে। গত বছর প্রতিকেজি জাম তিনি ৭০-৮০ টাকা দরে বিক্রি করেছিলেন। জামের এই মৌসুমে তিনি প্রতিদিন ১২০০-১৫০০ টাকা আয় করছেন।

জামের পাইকারি ব্যবসায়ী মো. মুজিবুর শেখ (৪৩) জানান, জামের মৌসুমে তিনি প্রতিদিন ৮০-১০০ প্লাস্টিকের ক্রেট পাকা জাম ক্রয় করেন। প্রতিটি প্লাস্টিকের ক্রেটে ২৫ কেজি জাম ধরে।

তিনি জানান, দৌলতদিয়া ফেরি ঘাট এলাকা থেকে প্রতিদিন ৭৫০-৮০০ ক্রেটে জাম ঢাকায় পাঠনো হয়। ঢাকার ব্যবসায়ীরা প্রতি কেজি জাম ২০০-২২০ টাকায় কিনে নিয়ে যায়।

ঢাকা থেকে দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকায় জাম কিনতে এসেছেন ওমর ফারুক (২৮)। তিনি বলেন, 'আমি ঢাকার মিরপুর-১ এলাকায় জাম বিক্রি করি। প্রতিদিন আমার ৫০০-৭০০ কেজি জাম বিক্রি হয়। ঢাকায় প্রতি কেজি জাম আমরা ২৫০-৩০০ টাকায় বিক্রি করতে পারি।'

গোয়ালন্দ উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো. খোকন উজ্জামান বলেন, এই বছর জাম চাষিরা ভালো দাম পাচ্ছেন। গত বছর প্রতি কেজি জাম গড়ে ৫৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। এই বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বেশি দাম পাচ্ছে জাম চাষিরা।

Comments

The Daily Star  | English

BNP's meet with interim govt: Roadmap for polls sought

The party also places several demands to Yunus, including removal of 'one or two' members of interim govt, removal of 'partisan judges'

5h ago