রুমা-থানচিতে ৫ কেজির বেশি চাল বহনে বাধা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর

রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি ও চিম্বুক পাহাড়ের সড়কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাহারা। ছবি: স্টার

বান্দরবানের রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি ও চিম্বুক পাহাড়ের বাসিন্দাদের পাঁচ কেজির বেশি চাল পরিবহনে বাধা দিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

রুমা ও থানচিতে ব্যাংক ডাকাতির ঘটনার পর সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যৌথ বাহিনীর চলমান অভিযানের মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার থেকে ৫ কেজির বেশি চাল পরিবহনের ক্ষেত্রে পুলিশের অনুমতি নিতে বলা হচ্ছে।

পুলিশ বলছে, এটি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যৌথবাহিনীর অভিযানের অংশ। সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের‌ খাদ্য ও অর্থ যোগান বন্ধ করতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

থানচি উপজেলার স্থানীয় মারমা, ত্রিপুরা, ম্রো সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাঁচ কেজির বেশি চাল নিয়ে যাওয়ার পথে পুলিশ চেকপোস্টে আটকে দোকানে ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ত্রিপুরা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গতকাল বাসায় চাল শেষ হয়ে গেছে। তাই বাজার থেকে চাল কিনে বাড়ি যাচ্ছিলাম। পথে পুলিশ ও সেনা সদস্যরা আমাকে থামিয়ে জিজ্ঞাসা করেন এত চাল কেন। বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি বলার পর তারা জানান কেউ পাঁচ কেজির বেশি চাল বহন করতে পারবে না। থানায় গিয়ে আগে ওসির অনুমতি নিয়ে আসতে হবে।'

উপজেলার নারিকেল ও আপ্রু মং পাড়া নিবাসী দুই মারমা বলেন, 'বাজারে গিয়ে বিশ কেজি চালের বস্তা কিনে নিয়ে আসছিলাম। পথে পুলিশ ও আনসার বাহিনীরা বাধা দেয়, বলে এত চাল নিয়ে যেতে পারব না। কারণ জানতে চাইলে তারা বলেন, উপরের নির্দেশ। ওসির অনুমতি নিতে হবে। নিরুপায় হয়ে চালের বস্তা আবার দোকানে ফেরত দিয়ে আসি।'

একই অবস্থায় চলছে চিম্বুক পাহাড়েও। পাহাড়ের এম্পো পাড়া, বাগানপাড়া, ১৮ মাইল চিম্বুক পাড়া এলাকার বাসিন্দারা বান্দরবান সদর থেকে চাল কিনে নিয়ে যাওয়ার পথে মিলনছড়ি এলাকায় পুলিশ চেকপোস্টে তাদের আটকে দেওয়া হয় এবং চাল ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।

বান্দরবান চিম্বুক রোডে থ্রি-হুইলার যান চালক মো. আরিফ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গতকাল ৩-৪ জনের চালের বস্তা নিয়ে ভাড়ায় যাচ্ছিলাম। মিলনছড়ি এলাকার পুলিশ চেকপোস্টে আটকে দিয়ে চাল বান্দরবান ফেরত পাঠাতে বলে। ম্রোদের উদ্দেশে পুলিশ বলেছে, কেউ পাঁচ কেজির বেশি চাল বহন করতে পারবে না।'

চিম্বুক পাহাড়ের ক্রামাদি পাড়ার বাসিন্দা সিংপাত ম্রো ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে গিয়ে আমাদের সাধারণ জনগণের ওপর এভাবে অমানবিক হওয়াটা কখনো কাম্য নয়। চিম্বুক পাহাড়ে এমনিতেই পানির সংকট। তার মধ্যে আবার চাল বহনে বাধা। এত সংকটে ফেলে দিলে মানুষ যাবে কোথায়।'

জানতে চাইলে থানচি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থোয়াই হ্লা মং মারমা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অনেকের কাছ থেকে এমন অভিযোগ পেয়ে গতকাল উপজেলার আইন-শৃঙ্খলা মিটিংয়ে প্রশাসন, ওসি, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর প্রতিনিধিদের সামনে বিষয়টি উপস্থাপন করি। সন্ত্রাস নির্মূল অভিযানের কারণে নিরপরাধ মানুষ যেন খাদ্যাভাবে না ভোগে।'

যোগাযোগ করা হলে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হোসেন মোহাম্মদ রায়হান কাজেমী এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। 

ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'রুমা-থানচিতে ব্যাংক ডাকাতির পর  সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যৌথবাহিনীর অভিযানের অংশ হিসেবে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।'

'সন্ত্রাসীদের‌ কে বা কারা খাদ্য যোগান দিচ্ছে বা অর্থ যোগান দিচ্ছে, সেটা কোনোভাবেই নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। তাই উপরের নির্দেশনা অনুযায়ী অভিযান চলাকালে এই স্যাক্রিফাইসটুকু করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি,' বলেন তিনি।

৫ কেজি চাল কীভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে, জানতে চাইলে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, 'যৌথবাহিনীর অভিযান পরিচালনার সমন্বয়ক সেনাবাহিনী। তারা এ বিষয়ে সবচেয়ে ভালো বলতে পারবেন। আমরা নির্দেশ অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি।'

উল্লেখ্য, চলতি মাসের শুরুতে রুমা উপজেলার সোনালী ব্যাংক এবং থানচির সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে ডাকাতি, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর ১৪ অস্ত্র লুট এবং সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার নিজামুদ্দিনকে অপহরণ ঘটনার পর অভিযান পরিচালনা করছে পুলিশ, আনসার, র‍্যাব ও সেনাসদস্যদের সমন্বয়ে যৌথবাহিনী। মাত্র ১৬ ঘণ্টার ব্যবধানে এসব ডাকাতির ঘটনা সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট বা কেএনএফ ঘটিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অভিযানে এ পর্যন্ত কেএনএফের অন্যতম প্রধান সমন্বয়কসহ ৫৫ জন সন্দেহভাজনকে আটকের পর কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

UN chief Guterres meets Prof Yunus in Davos

UAE invites Yunus to attend World Governments Summit in Dubai

48m ago