সারা দুনিয়ার মানুষ দেখছে কী হচ্ছে: ড. ইউনূস

ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত প্রাঙ্গণে ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: প্রবীর দাশ/স্টার

দুদকের করা অর্থ আত্মসাতের মামলায় জামিন পেয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, 'একজন নোবেলবিজয়ীর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের এই অভিযোগ একটি ঐতিহাসিক ঘটনা।'

আজ রোববার দুপুরে ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত থেকে জামিন পেয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।

ড. ইউনূস বলেন, 'আজকের ছবিটা ঐতিহাসিক একটা ছবি। দুর্নীতি দমন কমিশন, আমরা বটতলা। এটা যুগ যুগ ধরে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকবে। এটা একটা ঐতিহাসিক ঘটনা যেখানে একজন নোবেলবিজয়ীর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ, জালিয়াতির অভিযোগ, অর্থ পাচারের অভিযোগ এনেছে। আমি একা নই আরও ৭ জন, যারা সারাজীবন কঠোর পরিশ্রম করেছে গরিব মানুষের জন্য। তারা চাকরি করতে এখানে আসেননি, তারা জীবনদানের জন্য এখানে এসেছেন। তারাও অর্থ আত্মসাৎ, মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে অভিযুক্ত। এটা গুরুত্বপূর্ণ ছবি হবে।' 

তিনি বলেন, 'এটা গুরুত্বপূর্ণ এজন্য যে, আইন মানুষের শুভকামনা করে রচনা করা হয়। আইন মানুষের মনে স্বস্তি আনে, শান্তি আনে। আইন মানুষের মনে আশঙ্কাও জাগায়, ভয়ঙ্কর শঙ্কা জাগায়। আইনটাকে আমরা কোনদিকে নিয়ে যাব, সেটা সমাজের ইচ্ছা। আপনারা ঠিক করেন, দুর্নীতি দমন কমিশন যে আজ একটা বিচারে বসল, এ বিচারটা সঠিক কারণে হয়েছে কিনা, সঠিকভাবে হয়েছে কিনা।' 

'আমাদের ছেলেমেয়েরা এগুলো স্কুলে পড়বে। যখন নোবেল পুরস্কারের কথা হবে, তখন বলা হবে উনার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের দায়ে, জালিয়াতির দায়ে...তারা কনফিউজড হয়ে যাবে যে, আসলটা কী। তারা বলবে, এটা কি মুখোশ, আসল মানুষটা কে? সে আবার একা না, তার সাঙ্গপাঙ্গও আছে। কাজেই, আমরা যে আজ এখানে উপস্থিত হয়েছি, এটা এখানেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, দেশের মধ্যেও সীমাবদ্ধ নয়। সারা দুনিয়া জুড়ে লক্ষ্য করছে যে, এ বিচারের কী হলো। আমরা যা যা করছি, তারা সবিস্তারে এটা দেখছে,' যোগ করেন তিনি। 

ড. মুহাম্মদ ইউনূস আরও বলেন, 'আপনারা সম্প্রতি দেখছেন, বিভিন্ন চ্যানেলে আমার ইন্টারভিউ আসছে। আমি তো সাধারণত ইন্টারভিউ দেই না। এখন তারাই জানতে চাইছে যে, আপনাকে বলতে হবে, তখন আমি বলছি। তাদের শ্রোতাদের-দর্শকদের আগ্রহ জানার জন্য। এই যে ঘটনাগুলো ঘটছে, আপনারা সবিস্তারে লিখুন। এটা রেকর্ডেড, জাতির ইতিহাসের একটা অংশ হয়ে গেল। এটার জন্য কি আমরা গর্ববোধ করব, না কি অপরাধবোধ করব? এমন একজন সন্তানকে আমরা জন্ম দিলাম কীভাবে বা এমন একজনকে আমরা অপরাধী কেন করলাম? এর জবাব থেকে আমাদের মুক্তি নেই।'

গ্রামীণ টেলিকমের কর্মীদের লভ্যাংশের ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলে দুর্নীতি দমন কমিশন এ মামলা করে।

অপর অভিযুক্তরা হলেন- গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম, পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান, নাজনীন সুলতানা, পারভীন মাহমুদ, মো. শাহজাহান, নূরজাহান বেগম ও এস এম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফী।

আজ দুপুরে তারা ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চেয়ে আবেদন করলে আদালত তাদের জামিন মঞ্জুর করেন।

গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে ড. ইউনূসের আইনজীবী আবদুল্লাহ-আল-মামুন সাংবাদিকদের বলেন, 'আমরা জামিনের আবেদনে বলেছি, মামলায় যে অভিযোগ আনা হয়েছে, এগুলো সম্পূর্ণরূপে মিথ্যা, ভিত্তিহীন। এই ধরনের কোনো অপরাধের সঙ্গে উনারা সম্পৃক্ত নন। এই কথা বলে আমরা জামিনের আবেদন করেছি। আদালত আমাদের আবেদন দেখে সন্তুষ্ট হয়ে জামিন মঞ্জুর করেছেন। কতদিন পর্যন্ত সেটা বলেননি। তাহলে বোঝা যাচ্ছে জামিন স্থায়ীভাবে মঞ্জুর করা হয়েছে।' 


 

Comments

The Daily Star  | English
explanations sought from banks for unusual USD rates

Explanations sought from 13 banks for higher dollar rate

BB issued letters on Dec 19 and the deadline for explanation ends today

2h ago