দুদকের মামলার বিষয়ে যা বললেন ড. ইউনূসের আইনজীবী

মামলার চার্জশিট আজ ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে জমা দেওয়ার কথা রয়েছে
ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশিট
ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: স্টার ফাইল ফটো

গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের প্রায় ২৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে করা মামলায় শান্তিতে নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিটে অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

আজ মঙ্গলবার চার্জশিটটি ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।

এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আজ কথা বলেছেন ড. ইউনূসের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন।

তিনি বলেন, ড. ইউনূসকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য, সারা বিশ্বে প্রশংসিত সামাজিক ব্যবসাকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য এটি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এই মামলায় বিবাদী সরকারের জয়েন স্টক কোম্পানি। মামলা লড়ছেন অ্যাটর্নি জেনারেল। যখন গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানিকে আদালতের মাধ্যমে সরকার হস্তগত করে নিয়ে যেতে চাইলো তখন বাধ্য হয়ে গ্রামীণ টেলিকম তাদের (শ্রমিক) সাথে একটা চুক্তিনামা করে। চুক্তিনামায় বলা হয়, তাদেরকে পাঁচ পার্সেন্ট দিতে হবে। আরও দুঃখের বিষয় ওই ৫ পার্সেন্টের সাথে তারা যুক্ত করল গ্রামীণ টেলিকম, গ্রামীণ ফোনের ৩৫ পার্সেন্ট ইকুইটি শেয়ার। এর বিনিয়োগ। বিনিয়োগের টাকা তো শ্রমিকের সাথে যুক্ত নয়। সেখানে বাধ্য করল ওই লভ্যাংশ শ্রমিকদের সাথে যুক্ত করতে হবে। ফলে তার পরিমাণ দাঁড়ালো ৪৩৭ কোটি টাকা। পরে হিসাবে ভুল হলে দেখা গেল সেটা ৪০৯ কোটি টাকা। চুক্তি হওয়ার ফলে বলা হলো এক মাসের ভেতরে অ্যাকাউন্ট করে এই টাকা জমা দিতে হবে। নইলে তারা এটি করবে না। কোম্পানিকে রক্ষা করার জন্য সরকার যেন এই গ্রামীণ টেলিকমকে নিতে না পারে তখন বাধ্য হয়ে এই চুক্তি করা হলো।'

ড. ইউনূসের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, পরে গ্রামীণ টেলিকমের পক্ষ থেকে অ্যাকাউন্ট করা হয় এবং ওই টাকা চেকের মাধ্যমে পে করা হয়।

এখন তারা বলছেন, পরে ট্রেড ইউনিয়ন এসে গ্রামীণ টেলিকমের কাছে আবেদন করে তাদের টাকা থেকে অ্যাডভান্স ২৬ কোটি টাকা দিতে হবে। এতদিন তারা মামলার যে খরচ করেছে তাদের সাথে মৌখিক কন্ট্রাক্ট হয়েছে তারা যদি মামলায় জিতে শ্রমিকরা যা পাবে তার থেকে ৬ পার্সেন্ট এই খরচ দেবে। এর পরিমাণ ২৬ কোটি টাকা। তাদেরকে অ্যাডভান্স দিতে হবে নইলে তারা মামলা ওঠাবে না, সই করবে না।

তখন সমস্ত শ্রমিকদের কাছ থেকে লিখিতভাবে অঙ্গীকারনামা নেওয়া হয় যে এই টাকা ট্রেড ইউনিয়নের ফান্ডে দেওয়া হলে তাদের কোনো আপত্তি নাই। স্ট্যাম্পের ভিত্তিতে লিখিত দিয়ে বলেছে তাদের ৪০৯ কোটি টাকার হিসাবে ২৬ কোটি টাকা না দিয়ে ২৫ কোটি টাকা, ১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা বাদ রইলো। এটা দেওয়া হয়েছে। এরপরই দুদক বলল, তোমরা জালিয়াতি করেছ। দুই পক্ষ মিলে সই করল, দুই পক্ষ আন্ডারস্ট্যান্ডিং করল, কন্ডিশন দেওয়া আছে। হাইকোর্টের মামলার রেফারেন্স আছে। কিন্তু দুদক এসব কিছু গোপন করে গেল।'

তিনি বলেন, 'তখন আবার বলা হলো ৬ পার্সেন্টে ২৬ কোটি টাকাই হবে ৪৩৭ কোটি টাকার হিসাবে, আমরা ৪০৯ কোটি মানি না। তখন আবার ১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা তাদের দেওয়া হলো। এবার বলা হলো এটা ঘুষ ছিল।'

এই আইনজীবী জানান, ৪৩৭ কোটি টাকা প্রত্যেকটি টাকা তাদের নামে চেকে তাদের অ্যাকাউন্টে পে করা হয়েছে। কোনো রকম অনিয়ম করা হয়নি। এই বিষয়টা গোপন করে দুদক মামলা করেছে।

তিনি বলেন, সরকার যে মামলা করেছে কলকারখানা প্রতিষ্ঠানের তো এরসাথে কোনো সম্পর্ক নেই। সম্পর্ক রয়েছে লেবারের সাথে।

ড. ইউনূসের আইনজীবী জানান, আমরা গতকাল শ্রম আইন লঙ্ঘন মামলায় জামিন পেয়েছি। যেখানে জামিনযোগ্য মামলায় জামিন দেওয়া হয় না, বিভিন্ন কন্ডিশন দেওয়া হয়, সেখানে এইভাবে যেভাবে অপমানিত করা হচ্ছে, সব জায়গায় হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে এটি অত্যন্ত হৃদয় ভারাক্রান্ত। কারণ ড. ইউনূসের নিজের কোনো সম্পদ নাই, ব্যক্তিগত কোনো গাড়ি নাই।

তিনি বলেন, ড. ইউনূসকে বিদেশের জার্মানের একজন ল ইয়ার কোনোদিন তিনি দেখেননি। তিনি তার সমস্ত সম্পত্তি ড. ইউনূসের নামে দান করে দিয়েছেন। উইল করে দিয়ে গেছেন। তিনি সেই টাকা এনে তিনি বাংলাদেশে একটা নার্সিং কলেজ করেছেন। কলোডিয়ান নার্সিং কলেজ। সেখানে মাস্টার্স ডিগ্রি দেওয়া হয়। এই ট্রেনিং যারা নেন সমস্ত নার্সদের আমেরিকা থেকে আরম্ভ করে সারাবিশ্বে তাদের নিয়ে যাওয়া হয়।

এই আইনজীবী বলেন, আইনি প্রক্রিয়ায় তো অবশ্যই আমাদের যেতে হবে। ড. ইউনূস আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। ওনাকে আমি বলেছি আপনাকে জেলে যেতে হতে পারে, আপনাকে পুলিশে নেবে, আপনাকে রিমান্ডে নেবে, উনি বলেছেন আমি দরিদ্র মানুষের জন্য সে সংগ্রাম করে যাচ্ছি আমি সমস্তটা হাসিমুখে মেনে নেব। আমি তাতে কোনো রকম পিছপা হবো না।

সেক্ষেত্রে আগাম জামিন নিতে হাইকোর্টে যাবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। আইনি প্রক্রিয়ায় যেহেতু মামলা হয়েছে সেটা মেনেই আমাদের আসতে হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Singapore’s Financial Intelligence Unit seeks info on S Alam Group

The overseas assets of S Alam Group, including those in Singapore, came under scrutiny following recent media reports.

2h ago