এমপির তত্ত্বাবধানে পাউবোর জমিতে হচ্ছে আ. লীগের অফিস

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধুলাসার ইউনিয়নের বাবলাতলা বাজার এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) জায়গা দখল করে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অফিসের জন্য পাকা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. মুহিব্বুর রহমান মুহিব প্রায়ই ওই এলাকায় গিয়ে কাজটি তদারকি করেন। ছবি: স্টার

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধুলাসার ইউনিয়নের বাবলাতলা বাজার এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) জায়গা দখল করে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অফিসের জন্য পাকা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। 

গত এক মাস ধরে প্রায় এক হাজার ২০০ বর্গফুট জায়গায় নির্মিত হচ্ছে অফিসটি। স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. মুহিব্বুর রহমান মুহিব প্রায়ই ওই এলাকায় গিয়ে কাজটি তদারকি করেন। অফিস থেকে তার গ্রামের বাড়ির দূরত্ব প্রায় এক কিলোমিটার।

কলাপাড়া উপজেলা শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পূর্বে বাবলাতলা বাজারের অবস্থান। এটি উপজেলার প্রাচীন বাজারগুলোর অন্যতম।

স্থানীয়রা জানান, ১৯৬৪-৬৫ সালে পাউবো বালিয়াতলী নদীর ওপর যে বাঁধ নির্মাণ করে, সেখানেই হচ্ছে আওয়ামী লীগের এ অফিস।

সম্প্রতি সরেজমিনে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ৫-৬ জন শ্রমিক পাকা ভবন নির্মাণে কাজ করছেন। ১৮টি পিলার বসানো হয়েছে। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মনিরুজ্জামান খলিফা ও সাধারণ সম্পাদক মোদাচ্ছের হাওলাদার এ নির্মাণ কাজ করাচ্ছেন।

তবে এ বিষয়ে নাম প্রকাশ করে স্থানীয়দের কেউ বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

কলাপাড়া পাউবো কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ৪৭/৪ পোল্ডারের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি বাবলাতলা বাজারের ওপর দিয়ে গেছে। এ বাঁধের দুই পাশে গত কয়েক বছরে তিন শতাধিক অবৈধ স্থাপনা নির্মিত হয়েছে। তবে দখলদার মোট কতজন এর কোনো তালিকা তাদের কাছে নেই।

পাউবো সূত্র জানায়, বাবলাতলা বাজারের মাছ বাজার এলাকায় অবৈধ দখলদারদের ৩৫ জনের একটি তালিকা করা হয়েছে। এদের প্রায় দুই মাস আগে স্থাপনা সরিয়ে নিতে নোটিশও দেওয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কেউ স্বেচ্ছায় স্থাপনা সরিয়ে নেয়নি।

পাউবোর সার্ভেয়ার মো. রিয়াজ হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এস এ নকশা অনুযায়ী বাবলাতলা বাজার এলাকায় কোথাও বাঁধের মাঝখান থেকে ধরে ২৫০ ফুট, আবার কোথাও ২৭০ ফুট জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়েছে। সে হিসেবে বাঁধের পূর্ব পাশে ঢাল ৫০ ফুট, আর পশ্চিম পাশে ঢাল ২০ থেকে ২৫ ফুট রয়েছে।' 

গত এক মাস ধরে প্রায় এক হাজার ২০০ বর্গফুট জায়গায় নির্মিত হচ্ছে অফিসটি। ছবি: স্টার

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন জানান, আওয়ামী লীগের অফিসটি যে জায়গায় নির্মিত হচ্ছে, সেটি বাঁধের ঢালের মধ্যেই। যা পাউবোর সম্পত্তি। স্থানীয় সংসদ সদস্য যেহেতু নিজে কাজটির তদারকি করছেন তাই কেউ এ বিষয়ে মুখ খুলতে চায় না।

রাজস্ব সার্ভেয়ার রিয়াজ হোসেন বলেন, 'পাউবোর জায়গায় আওয়ামী লীগের অফিস নিয়ে কথা উঠলে গত অক্টোবর মাসে আমরা সরেজমিন পরিদর্শন করি। মেপে দেখি যে নির্মাণাধীন অফিসের কিছু অংশ বাঁধের ঢালের মধ্যে পড়েছে।' 

এ বিষয়ে ধুলাসার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোদাচ্ছের হাওলাদার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা পাউবোর মাধ্যমে বাঁধের ঢাল এলাকা চিহ্নিত করার পরই কাজ শুরু করেছি। পাউবোর নোটিশ পাওয়ার পর তাদের নিয়ে মেপে দেখা হয়েছে এবং তাদের জায়গা ছেড়ে দিয়ে নিজেদের জায়গায় ভবন নির্মাণ করছি। দলীয় অফিসটি রেকর্ড করা সম্পত্তির মধ্যেই নির্মাণ করা হচ্ছে।'
 
তবে কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুবুর রহমান তালুকদার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আওয়ামী লীগের অফিস হচ্ছে, অথচ উপজেলা সভাপতি হয়েও আমি কিছুই জানি না। এটা আওয়ামী লীগের দখল নয়, এটা এমপির দখল। এভাবে আওয়ামী লীগের নামে অনেক সরকারি সম্পত্তি জবরদখল হচ্ছে।'

এ বিষয়ে জানতে সংসদ সদস্য মো. মুহিব্বুর রহমান মুহিব, তার ব্যক্তিগত সহকারী (পিএ) তারিকুল ইসলামের সঙ্গে একাধিকবার যোগোযোগের চেষ্টা করলেও তারা সাড়া দেননি।

কলাপাড়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি নতুন যোগদান করেছি। সেখানে বাঁধের ঢাল এলাকা চিহ্নিতের জন্য মাপজোক করা হয়েছে বলে শুনেছি। তবে মাপজোক সঠিক হয়েছিল কি না তা আবার দেখতে হবে। এটা চূড়ান্ত না করে আমাদের না জানিয়ে কেউই কোনো স্থাপনা নির্মাণ করতে পারবে না। তা ছাড়া, সরকারের সম্পত্তি যে কারও সুবিধামত বেহাত করার সুযোগ নেই।'

Comments

The Daily Star  | English

Arrest warrant for Bera mayor: He was in plain sight for 33 months

Police did not arrest Pabna’s Bera municipality mayor SM Asif Shams for over two and a half years, even though he had an arrest warrant against him for his company’s failure to pay Tk 191.63 crore it owed the state.

13h ago