কলাপাড়ায় ১৯৩ স্লুইসগেটের ৪৫টি অকেজো, আমন চাষে শঙ্কা

কলাপাড়া উপজেলার কাঁঠালপাড়া গ্রামে স্লুইসগেট। ছবি: সংগৃহীত

সাগর-নদীবেষ্টিত পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পানি নিষ্কাশনের জন্য নির্মিত ১৯৩টি স্লুইসগেটের মধ্যে ৪৫টি অকেজো হয়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। 

রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নির্মিত বেড়িবাঁধে এসব স্লুইসগেট অকেজো থাকায় কৃষকরা এর সুফল পাচ্ছেন না। এ অবস্থায় চলতি মৌসুমে আমন উৎপাদন নিয়ে শঙ্কায় আছেন স্থানীয় কৃষকরা। 

পাউবো সূত্র জানায়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলোচ্ছ্বাস থেকে মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষায় ৬০'র দশকে কলাপাড়ায় ৩২০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। বাঁধের অভ্যন্তরের জনপদ ও আবাদি জমিতে বর্ষায় জমা অতিরিক্ত পানি অপসারণ এবং লবণপানি প্রবেশ নিয়ন্ত্রণের জন্য বেড়িবাঁধে ১৯৩টি ছোট-বড় স্লুইসগেট নির্মাণ করা হয়। স্লুইসগেট নিয়ন্ত্রণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিল পাউবোর নিয়োগ করা খালাসিরা। তারা স্লুইসগেট দিয়ে পানি প্রবেশ ও নিষ্কাশন নিয়ন্ত্রণ করতেন।

পরে ৯০'র দশকের শেষ দিকে খালাসি পদ বাতিল হয়ে গেলে, স্লুইসগেটগুলোর নিয়ন্ত্রণ চলে যায় রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা প্রভাবশালীদের হাতে। তারা খালে মাছ শিকারের জন্য নিজেদের সুবিধা মতো পানির প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করেন।

এর মাধ্যমে প্রভাবশালীরা আর্থিকভাবে লাভবান হলেও, বর্ষায় জলাবদ্ধতা এবং শুষ্ক মৌসুমে লবণ পানি প্রবেশ করায় বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হচ্ছেন কৃষকরা। 

সম্প্রতি খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেশিরভাগ স্লুইসগেটের দরজাই ভাঙা, অকেজো। এগুলো খোলা বা বন্ধ করা যায় না। মরিচা ধরে আটকে আছে। ভাঙা কপাট দিয়ে সবসময় জোয়ারের পানি ভেতরে প্রবেশ করে ও ভাটার সময় নেমে যায়। জল কপাটগুলো রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অধিকাংশই অকেজো হয়ে পড়ছে। 

সচলগুলোর বেশিরভাগের কপাট ভেঙে যাওয়ায় পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অবৈধ দখল, সময়মতো সংস্কার না করা এবং প্রবেশমুখে পলি জমে ভরাট হয়ে অকার্যকর হয়ে পড়েছে স্লুইসগেটগুলো। 
স্থানীয় গৈয়াতলা গ্রামের কৃষক আনোয়ার মুন্সী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'একমাত্র ৩ গেটের স্লুইসগেটটির নদীর দিকে অন্তত ২০ ফুট ভেঙে গেছে, ভেতরের দিকের মাটি দেবে গর্ত হয়ে গেছে। স্লুইসগেট বেঁকে যাওয়ায় বৃষ্টি হলেও পানি ধরে রাখা যাচ্ছে না। জোয়ারের লবণাক্ত পানি ভেতরের আমন খেতে আসছে, যা ফসলের জন্য ক্ষতিকর।'

চাকামইয়া ইউনিয়নের কাঁঠালপাড়া গ্রামের কৃষক হানিফ হাওলাদার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'খালের জল কপাটের পাশে ছিদ্র দিয়ে পানি বের হয়ে যায় নদীতে। আবার জোয়ারের সময় নদীর লবণাক্ত পানি আমন খেতে প্রবেশ করছে। এতে আমনের ক্ষতি হওয়ার শঙ্কা আছে।'

জানা গেছে, কলাপাড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) সভাপতি, পাউবোর স্থানীয় প্রকৌশলীকে সদস্য সচিব এবং একজন কৃষক, একজন শিক্ষক, কৃষি কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্যসহ প্রতিটি স্লুইসগেট নিয়ন্ত্রণে ৭ সদস্যের কমিটি আছে। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের চাপের মুখে কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় কমিটি কোনো ভূমিকাই রাখতে পারছে না।

কলাপাড়ার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ আর এম সাইফুল্লাহ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'উপজেলায় এ বছর ২৯ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদ হয়েছে। বেশ কিছু স্লুইসগেট অকেজো। জমি থেকে পানি নিষ্কাশনে সমস্যা হচ্ছে। আবার অনেক খালে মিষ্টি পানিও সংরক্ষণ করে রাখা যায় না।'

'স্লুইসগেটগুলো জরুরি ভিত্তিতে মেরামত করা প্রয়োজন' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'কৃষিকাজের সুবিধার্ধে প্রকৃত কৃষকদের মাধ্যমে স্লুইসগেটগুলোর জলকপাট নিয়ন্ত্রিত হলে সুবিধা পাবে কৃষক। এক ফসলি জমি আসবে ৩ ফসল চাষের আওতায়। বাড়বে ফসলের উৎপাদন।'

যোগাযোগ করা হলে পাউবোর কলাপাড়া সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফ হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অকেজো স্লুইসগেটগুলো মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এসব অকেজো ও ঝুঁকিপূর্ণ স্লুইসগেটগুলোর তালিকা করে পুনর্নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন ও বরাদ্দ পেলে নির্মাণকাজ শুরু করা হবে।' 

'এছাড়া, উপকূলীয় বাধ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কলাপাড়া উপজেলার ধুলাসার, ডাবলুগঞ্জ, লতাচাপলী ও কুয়াকাটায় ৩৯ কিলোমিটার বাঁধের সংস্কারকাজ চলমান আছে। বিদ্যমান এ বাধের ৩টি স্লুইসগেট মেরামত এবং ৮টি নতুন করে নির্মাণ করা হচ্ছে,' বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
Rizvi criticizes PR system in elections

PR system a threat to democracy: Rizvi

Under the PR system, the party, not the people, will choose MPs, he says

2h ago