তৃতীয় দফায় পিতলগঞ্জ-কুর্মিটোলা তেলের পাইপলাইনের বাজেট বাড়ানোর তোড়জোড়

তেলের পাইপলাইন
পিতলগঞ্জ-কুর্মিটোলা এভিয়েশন ডিপো তেলের পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্প। ছবি: সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার পিতলগঞ্জ থেকে কুর্মিটোলা এভিয়েশন ডিপো পর্যন্ত তেলের পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্প নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটছে না।

ইতোমধ্যে প্রকল্পের খরচ দুই দফায় ২৪৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৩৯ কোটি ৬৩ লাখ টাকা করা হয়েছে। কিন্তু বাজেট স্বল্পতার কথা জানিয়ে গত বছরের ডিসেম্বরে প্রায় ৩৫ শতাংশ কাজ বাকি রেখেই কাজ বন্ধ করে দিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এখন আবার বাজেট বাড়ানোর জন্য তোড়জোড় চলছে।

পাইপলাইনের মাধ্যমে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উড়োজাহাজের জ্বালানি তেল সরবরাহ করার লক্ষ্যে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ২০১৯ সালের জানুয়ারির মধ্যে পাইপলাইন তৈরি হওয়ার কথা থাকলেও তিন দফায় প্রকল্পের মেয়াদ ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

জানা গেছে 'জেট এ-১ পাইপলাইন ফ্রম পিতলগঞ্জ (নিয়ার কাঞ্চনব্রিজ) টু কুর্মিটোলা এভিয়েশন ডিপোর ইনক্লুডিং পাম্পিং ফ্যাসিলিটিজ অ্যান্ড জেটি' শীর্ষক এই প্রকল্পটি যৌথ উদ্যোগে বাস্তবায়ন করছিল চীনের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান চায়না মেশিনারিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিএমইসিসি) ও স্থানীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বারাকা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড (বিইএল)।

তেলের পাইপলাইন
ইতোমধ্যে প্রকল্পের খরচ দুই দফায় ২৪৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৩৯ কোটি ৬৩ লাখ টাকা করা হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে আমদানি পণ্যের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় বাজেট স্বল্পতার কথা জানিয়ে গত বছরের ডিসেম্বরে কাজ বন্ধ করে দেয় তারা।

সংশ্লিষ্টরা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও এখনো এক তৃতীয়াংশ কাজ বাকি রয়ে গেছে। পাইপলাইনের ৮৫ শতাংশ কাজ ও অবকাঠামো নির্মাণের ৬০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।

সম্প্রতি প্রকল্পের অসমাপ্ত কাজ শেষ করার জন্য অতিরিক্ত সময় ও খরচ নির্ধারণে কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) নিয়ন্ত্রণাধীন পদ্মা অয়েল কোম্পানি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিনা টেন্ডারে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করে প্রকল্পের বাকি কাজ শেষ করতে চাচ্ছে বিপিসি। এই উদ্দেশ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিল্ডস্টোন কন্সস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিসিএল) সঙ্গে বিপিসি এবং ইঞ্জিনিয়ারিং, প্রকিউরমেন্ট ও কনস্ট্রাকশন (ইপিসি) ঠিকাদার নৌ-কল্যাণ ফাউন্ডেশন ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেড (এনকেএফটিসিএল) দর কষাকষির চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে।

খরচ বাড়ানোসহ সংশোধিত চুক্তি সম্পাদনে অনুমোদনের জন্য নতুন প্রস্তাবনা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন থেকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় হয়ে গত জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যায়। সেখান থেকে ১১ জুলাই প্রস্তাবনাটি জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রকল্পটির বিষয়ে চারটি পর্যবেক্ষণসহ বিপিসির কাছে সুনির্দিষ্ট মতামত চাওয়া হয়েছে।

তেলের পাইপলাইন
২০১৯ সালের জানুয়ারির মধ্যে পাইপলাইন তৈরি হওয়ার কথা থাকলেও তিন দফায় প্রকল্পের মেয়াদ ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। ছবি: সংগৃহীত

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ইতোমধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ তিন বার ও খরচ দুই বার বাড়ানো হয়েছে। এই অবস্থায় ইপিসি ঠিকাদার ও বিপিসির বিরুদ্ধে প্রকল্পের খরচ ও সময় বাড়ানোর জন্য নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে দ্রুততার সঙ্গে কাজ করার অভিযোগ উঠেছে।

প্রকল্প বাস্তায়নকারী উপ-ঠিকাদার বারাকা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী এম এম কাদের ডেইলি স্টারকে বলেন, 'করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ডলারের বিনিময় হার বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারণে প্রকল্প কাজ বাধাগ্রস্ত হয়।'

'প্রকল্পের বাকি কাজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করার জন্য আমরা ইপিসি ঠিকাদার এনকেএফটিসিএলকে ২০২২ সালের নভেম্বরে লিখিতভাবে প্রায় ২০২ কোটি টাকা বাজেট বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিলাম' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'তারা আমাদের প্রস্তাবের বিষয়ে এখনো কোনো মতামত বা উত্তর দেয়নি। বরঞ্চ নতুন ঠিকাদারের প্রস্তাবিত অতিরিক্ত প্রায় ৩৯৫ কোটি টাকায় বাকি কাজ শেষ করতে উদ্যোগ নিচ্ছে বলে জানা গেছে।'

ইপিসি ঠিকাদার এনকেএফটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে প্রস্তাবনাটি ফেরত আসার পর কারিগরি কমিটি এ বিষয়ে কাজ করছে। এই কমিটির কাজ শেষে প্রতিবেদন জমা দিলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

পদ্মা অয়েল কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মাসুদুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাজেট বাড়ানোর প্রস্তাবটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। কারিগরি কমিটি কাজ করছে। প্রস্তাবটি চূড়ান্ত হলে তারপর এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে।'

প্রকল্পের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে প্রকল্প পরিচালক চৌধুরী মো. জিয়াউল হাসানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

14h ago